ঢাকা: সংসদে ও রাজপথে বিরোধী দলের ভূমিকায় যেতে পারে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ও জোটে থাকা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-ইনু)। এর মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আওয়ামী লীগ নেতারা সম্প্রতি জাসদকে দায়ী করে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে রাজনৈতিক মহলে নানা গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের দেওয়া এসব বক্তব্য ইঙ্গিতবহ বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন জোটের নেতারাও।
এ অবস্থা চলতে থাকলে সরকার ও জোট থেকে বের হয়ে যেতে পারে জাসদ। তখন সংসদের ভেতরে-বাইরে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে দলটি।
বর্তমানে সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় রয়েছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। তবে তারা সরকারেরও অংশীদার। জাসদ ১৪ দল এবং সরকারে আছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটে আছে জাতীয় পার্টি। তবে গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর মহাজোট আর সক্রিয় নেই। জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে যাওয়ার পর থেকেই মহাজোটকে নিস্ক্রিয় রাখা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, আগামীতে আরও দুই একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছে সরকার। তবে সে বিরোধী দলকে অবশ্যই হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক চেতনার। বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। সে ক্ষেত্রে সংসদের ভেতরে-বাইরে জাসদের মতো রাজনৈতিক দল বিরোধী ভূমিকায় থাকলে সরকারের জন্য তা হবে ইতিবাচক।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টি অংশ নেয়। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ(ইনু) ১৪ দলের অন্যতম শরিক। এ নির্বাচনে সরাসরি কোনো প্রতিপক্ষ না থাকায় অর্ধেক আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন প্রার্থীরা।
আগামী নির্বাচনেও এ পরিস্থিতি এড়াতে জোটের বাইরের কয়েকটি দলকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। সে ক্ষেত্রে জোট থেকে বের হয়ে আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে জাসদ। এছাড়া সিপিবি এবং বাসদেরও আগামী নির্বাচনে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগও নেওয়া হবে বলেও জানায় সূত্রটি।
গত ২৩ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা কখনও বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারতো না, যদি গণবাহিনী, জাসদ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে, বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে, মানুষ হত্যা করে, এমপি মেরে পরিবেশ সৃষ্টি না করতো। বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল রহস্য বের করতে হবে, কারা কারা জড়িত ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গত ২৫ আগস্ট মাহবুব-উল আলম হানিফ ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে বলেন, যারা জাসদ ও ন্যাপসসহ বাম রাজনীতি করতেন, বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত তারা বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরোধিতা করেছিলেন। তাদের ঔদ্ধত্য এমন পর্যায়ে ছিলো যে, একটা সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য যা যা করণীয় তারা তা করেছেন। তারাই এ সময় তৈরি করেছিলো জাতির পিতাকে হত্যার প্রেক্ষাপট।
প্রায় একই সময় বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাসদের ভূমিকার তদন্ত দাবি করেন।
এ্ররপর বিবৃতি দিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের অভিন্ন বক্তব্যের কারণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে জাসদ।
এদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জাসদকে জড়িয়ে দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে বুধবার (২৭ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়ায় জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জাসদকে জড়ানোর যে অপচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র, তার কোনো ভিত্তি নেই। দীর্ঘ তদন্ত শেষে দীর্ঘদিন বিচার প্রক্রিয়া শেষে বিচারকরা রায় ও পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। সাক্ষীর জেরা থেকে শুরু করে অভিযোগপত্র কোনো জায়গায় জাসদ সম্পর্কে একটি শব্দও লেখা নেই। জাসদের বিরুদ্ধে একই সুরে কথা যারা বলছেন আমি তাদের সঙ্গে কোনো বিতর্কে লিপ্ত হতে চাচ্ছি না। আমি শুধু বলবো, হঠাৎ করে জাসদকে নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি কেন শুরু করলেন, আমি জানি না। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার একই ভাষায় একই ধরনের সমালোচনার যোগসূত্র কী, সেটাও আমি জানি না।
হালুয়া-রুটির ভাগের জন্য মোশতাক সরকারে কারা ভিড়েছিলেন, তা সবাই জানে বলেও মন্তব্য করেন ইনু।
এসব পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে এক ধরণের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়া সরকার এবং একই জোটে থাকা দল নিয়ে বক্তব্য পাল্টা বক্তব্য আসতে পারে না বলেও মনে করেন জোট নেতাদের কেউ কেউ।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরিফ নুরুল আম্বিয়া বাংলানিউজকে বলেন, তারা যদি এ ধরনের বক্তব্য না থামান, এসব যদি তারা বলতেই থাকেন, তাহলে জোটের ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৫
এসকে/এএসআর