ঢাকা: বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, সাবেক ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী আব্দুর রৌফ চৌধুরীর ৮ম মৃত্যু বার্ষিকী বুধবার।
২০০৭ সালের এই দিনে (২১ অক্টোবর) দিনাজপুরের বোচাগঞ্জের নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রৌফ চৌধুরী।
তার পুত্র খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বর্তমানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রৌফ চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে জেলা ও বোচাগঞ্জ উপজেলা সংগঠন।
এর মধ্যে সকাল ৭টা ৩০মিনিটে দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৮টায় কালো ব্যাচ ধারণ। ৯টা ৩০ মিনিটে দলীয় কার্যালয় হতে শোক র্যালি। ১০টায় মরহুমের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ। ১০টা ৩০মিনিটে দোয়া মাহফিল (মরহুমের সমাধিস্থল প্রাঙ্গণ)।
আব্দুর রৌফ চৌধুরীর বর্ণাঢ্য জীবন:
আব্দুর রৌফ চৌধুরী ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার ধনতলা গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১ বছর বয়সেই তার বাবা মারা যান। আট ভাই-বোনের মধ্যে রৌফ চৌধুরী ছিলেন সর্ব কনিষ্ঠ।
রৌফ চৌধুরী ১৯৫২ সালে সিরাজগঞ্জ থেকে মেট্রিকুলেশন পাস করেন। তৎকালীন সময়ে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে কারাবরণ করেন রৌফ চৌধুরী। পরে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। ঢাকা কলেজে পড়াকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত আস্থাভাজন ছাত্রনেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আসেন তিনি। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে (বর্তমানে দিনাজপুর সরকারি কলেজ) ভর্তি হন এবং কলেজ ছাত্র সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন।
১৯৬২ সালে পঞ্চগড়ের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মরহুম ইসমাইল হোসেন সরকারের জ্যেষ্ঠা কন্যা রমিজা বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আব্দুর রৌফ চৌধুরী।
রৌফ চৌধুরী বৃহত্তর দিনাজপুর (দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়) জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রণীত ৬ দফা আন্দোলন, পরবর্তীতে ছাত্র সমাজের ১১ দফাসহ আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী প্রতিটি আন্দোলনে সামনের কাতারে ছিলেন রৌফ চৌধুরী।
১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু তাকে নির্বাচন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তখন তিনি তার শিক্ষক প্রিন্সিপাল এবিএম মোকসেদ আলীর নাম প্রস্তাব করেন এবং বঙ্গবন্ধু তাকেই নমিনেশন দেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পূর্বাঞ্চলীয় জোনে মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ও কামরুজ্জামানের দূত হিসেবে কাজ করেন রৌফ চৌধুরী। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় তিনি আখচাষী সমবায় ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। কেন্দ্রীয় সমবায় ইউনিয়নে দুবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর তিনি আত্মগোপনে থেকে বৃহত্তর দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এই সময় তিনি কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের মুক্তাগাছা সম্মেলনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
রৌফ চৌধুরী দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের একনাগারে ১৫ বৎসর সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন এবং একই সঙ্গে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। দিনাজপুরে ৭৫’ পরবর্তী সামরিক শাসন বিরোধী প্রতিটি আন্দোলনে তার অবদান অসামান্য।
তিনি ১৯৮৮ সালে উপজেলা নির্বাচনে বোচাগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসন থেকে বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৫
এসইউজে/এমজেএফ/