লন্ডন: বিদেশি নাগরিক হত্যায় বিএনপি'র সংশ্লিষ্টতা নিয়ে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সন্দেহের তীর অনিশ্চিত করে তুলেছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা। এই সন্দেহকে সরকারি ষড়যন্ত্র হিসেবে পশ্চিমা দেশগুলোসহ ভারতের সামনে তুলে ধরতে আরও কিছুদিন ব্রিটেনে থেকে যাওয়াই উত্তম মনে করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
আর তার ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনে করছেন, ব্রিটেনে থেকেই আপাতত দল পরিচালনা করতে পারেন তার মা। এক্ষেত্রে সরকারি নজরদারি এড়িয়ে ভারতসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগও অনেক সহজসাধ্য হবে বলে বিশ্বাস তার। যুক্তরাজ্য বিএনপি ও তারেক রহমানের ঘনিষ্ট সূত্রগুলো এমনটাই জানিয়েছে।
ভিসা পাওয়ার পর ব্রিটেনে আসার ঘোষণা দিয়েও প্রথম দিকে না আসা, আসার পর চিকিৎসা শেষে পনের দিনের মধ্যে দেশে ফেরার কথা থাকলেও মাসাধিককাল পেরিয়ে গেলেও দেশে না ফেরা, এরমধ্যেই দেশে দুইজন বিদেশি হত্যায় তার দলের সম্পৃক্ততার সন্দেহ এবং লন্ডনে তার অবস্থান ও কার্যক্রম নিয়ে কঠোর গোপনীয়তার বিষয়ে ব্যাপক গুঞ্জন লন্ডনের কমিউনিটিতে।
দেশে ফেরার জন্য একাধিকবার তারিখ র্নিধারণ হলেও বার বার তার শিডিউল পরিবর্তন করা হচ্ছে। ৩, ৮, ১৬ এবং সর্বশেষ ২০ অক্টোবর দেশে ফেরার তারিখ ঠিক করেও কোন তারিখেই লন্ডন ত্যাগ না করায় গুঞ্জনের ডালপালা আরো বিস্তার লাভ করেছে। বর্তমানে ভাড়া করা বড় একটি বাসায় পরিবার পরিবেষ্টিত হয়ে পূর্ণ বিশ্রামেই সময় কাটছে বিএনপি চেয়ারপারসনের।
দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, খালেদা জিয়া লন্ডনে আসার আগে থেকেই ভারতের সঙ্গে একটি সম্পর্ক তৈরির আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন তারেক। এক্ষেত্রে ব্রিটেনে বসবাসরত কোনো কোনো প্রভাবশালী ভারতীয় নাগরিকের সহযোগিতা পাবেন বলেও আশাবাদ ছিলো তার।
এরমধ্যেই দেশে পরপর ইতালি ও জাপানের দুইজন নাগরিক হত্যা, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট খেলতে বাংলাদেশে না যাওয়া, পশ্চিমা কোন কোন দেশের বাংলাদেশ ভ্রমণে নিজ নাগরিকদের প্রতি সতর্কতা জারি ইত্যাদি ঘটনা নিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বরাতে দেশটির কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশে তারেকের ওই মিশন হোঁচট খায়।
আর এ হোঁচট থেকেই এখনই মা এর দেশে ফেরার বিপক্ষে অবস্থান নেন তারেক। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে লন্ডনে রেখেই পরিস্থিতি মোকাবেলার পক্ষে তিনি। বিদেশি হত্যায় বিএনপির সম্পৃক্ততা না থাকার বিষয় নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে ভারতকে কনভিন্স করতে খালেদাকে লন্ডনে রেখেই লবিং মিশন পরিচালনা করতে চান তারেক। এক্ষেত্রে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি'র সঙ্গে যোগাযোগ না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা অনেকটাই অনিশ্চিত বলে জানায় নির্ভরযোগ্য সূত্র।
চিকিৎসার কাজ শেষ হলেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরছেন, দেশবাসীকে এমন একটি ধারণা দিতে ২ নভেম্বর তার দেশে যাওয়ার একটি তারিখ নির্ধারণ করা হলেও এই তারিখেও দেশে ফিরছেন না তিনি।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার সত্যতা সম্পর্কে যুক্তরাজ্য বিএনপি সভাপতি এম এ মালেকের কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি স্বীকার বা অস্বীকার না করে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি।
মালেক বলেন, লবিং করতে ম্যাডামের কি কোন প্রয়োজন আছে? এ জন্য তো আমরাই যথেষ্ট।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, লন্ডনে থেকেই বিদেশি লবি ঠিক করার মিশনে মূল গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ভারতকে। খালেদা-তারেকের ধারণা, একমাত্র ভারতই এই মুহূর্তে বর্তমান সরকারের রক্ষাকবচের ভূমিকা পালন করছে। আমেরিকা, ব্রিটেনসহ পশ্চিমা দেশগুলো ভারতের কারণেই কঠোর হতে পারছে না বলে মনে করছেন মা-ছেলে। সম্প্রতি বাংলাদেশ বিষয়ে আমেরিকা’র ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীসহ অন্যদের তীর্যক মন্তব্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে বর্তমান সরকারের দূরত্ব সৃষ্টির প্রমাণ বলে মনে করে উৎফুল্ল তারা। তাদের ধারণা, এখন একমাত্র ভারতের মন হয় করতে পারলেই এই সরকারের পতন অনিবার্য।
অন্যদিকে, দেশ ছাড়ার আগ থেকেই লন্ডনে এসে ব্রিটেনের প্রভাবশালী রাজনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকের কথা বলা হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এখনও কোন ব্রিটিশ রাজনীতিকের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকের খবর পাওয়া যায়নি।
এরইমধ্যে খালেদা জিয়ার একচোখে অপারেশন সম্পন্ন হলেও আরেক চোখ ও পায়ের চিকিৎসা চলছে। পায়ে নিয়মিত শেক দেয়া হচ্ছে তার। অপর চোখেও অপারেশন করতে হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৫
জেডএম/