ঢাকা: দীর্ঘ মেয়াদি জটিলতায় পড়েছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠন। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা এ জট সহসাই খুলছে না।
সম্মেলনের পর তিন বছর অতিবাহিত হতে চললেও এখনও পুরোনো কমিটি দিয়েই চলছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। শুধু মহানগরই নয়, এর অন্তর্গত থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোরও একই অবস্থা। থানা ও ওয়ার্ডগুলোতেও সম্মেলনের পর দেড় বছর পার হয়েছে নতুন কমিটি দেওয়া হয়নি।
চলতি বছর এপ্রিলে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণার গুঞ্জন উঠে। দলের নীতি নির্ধারণী মহল থেকেও উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু কয়েক মাস বিষয়টি নিয়ে নানামুখী আলোচনা চললেও একপর্যায়ে তা থেমে যায়।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যোগ্য নেতৃত্ব সংকটের কারণেই ঢাকার দুই মহানগরে কমিটি গঠন নিয়ে দীর্ঘ সুত্রিতা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ একটি কমিটির অধীনে যে অবস্থায় রয়েছে আগামীতে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ দু’টি কমিটি দিয়ে নতুন নেতৃত্ব আনলে কি পরিস্থিতি দাঁড়াবে তা নিয়ে নানা সংশয়ে রয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ নীতি নির্ধারকরা।
আওয়ামী লীগের ওই নেতারা জানান, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দলের প্রাণ হিসেবে কাজ করে থাকে। বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রাম এবং সরকার বিরোধী আন্দোলন মোকাবেলায়ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আগামী দিনগুলোতেও সরকার ও দলকে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হতে পারে। এ কারণেই নেতাকর্মীদের ঐক্য ধরে রাখা এবং সংগঠনকে শক্তিশালী রাখতে নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে নানা হিসাব-নিকাশ করতে হচ্ছে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের। বিকল্প যোগ্য নেতৃত্বের সংকটের কারণে সম্মেলনের পর প্রায় তিন বছর সময় অতিবাহিত হলেও নতুন কমিটি দিতে পারেনি আওয়ামী লীগ।
এদিকে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ঢাকা মহানগরের কমিটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সভাপতি সাধারণ-সম্পাদক কারা হবেন সেটা তিনি ঠিক করবেন। এরপর নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা দলের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন। তবে নতুন কমিটি কবে ঘোষণা দেওয়া হবে সেটা কেউই বলতে পারছেন না।
২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর পর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ সিদ্ধান্ত নেয় নতুন কমিটি গঠন না করা পর্যন্ত পুরোনো কমিটিই দায়িত্ব পালন করে যাবে। সে অনুযায়ী পুরোনো কমিটি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এই দীর্ঘ সময়ে বেশ কয়েকবার নতুন ঘোষণার উদ্যোগ নেওয়া হলেও কার্যত তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এছাড়া গত বছর ফেব্রুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা মহানগরের অন্তর্গত আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন। এ সম্মেলনগুলোর পরও নতুন কমিটি দেওয়া হয়নি। মহানগর কমিটি না হওয়ার কারণে থানা ওয়ার্ডের কমিটিও দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলে আছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত-বিএনপির আন্দোলন, জাতীয় নির্বাচন, সরকারের বিরুদ্ধে আবার আন্দোলন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ বিভিন্ন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সামনে চলে আসায় ঢাকা মহনগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা ঝুলে যায়।
এদিকে আর এক মাস অতিবাহিত হলে নতুন সম্মেলনের সময় চলে আসবে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর পর দলের প্রতিটি ইউনিটের সম্মেলনের কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী ২৭ ডিসেম্বর তিন বছর পূর্ণ হবে। এ পরিস্থিতিতেও সহসা কমিটি দেওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে ঢাকা মহানগরের কমিটি হচ্ছে না। ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আবার ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনি ব্যস্ততার মধ্যে জাতীয় সম্মেলন পিছিয়েও যেতে পারে। ডিসেম্বরে সম্মেলন না হলে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি নাগাদ সম্মেলনের সম্ভাবনা রয়েছে। ততোদিন পর্যন্ত ঢাকা মহানর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটির জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে।
কমিটি কবে দেওয়া হবে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দয়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেন নি। তবে তিনি বলেন, কমিটি ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তুতি শেষ। কিছুদিনের মধ্যেই ঘোষণা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময় ০০১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৫
এসকে/আরএ