ঢাকা: দীর্ঘ দিন পর লন্ডন গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করবেন তিনি।
জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল তাদের পূর্ব নির্ধারিত সফর বাতিল করার পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন দুই বিদেশি নাগরিক। সাউথ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলও বাতিল করেছে তাদের পূর্ব নির্ধারিত বাংলাদেশ সফর। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশ সফর ও চলাফেরার ওপর জারি করেছে বাড়তি সতর্কতা। দারুণ চাপে আছে সরকার। সুতরাং এবার কিছু একটা হবে।
খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর বাতিল ও দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের পর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা ছিল এমনটিই।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করা নেতা-কর্মী ও অফিস স্টাফদের মধ্যকার আলাপ-আলোচনায় উজ্জীবিত বিএনপির প্রতিচ্ছবিই দেখা গেছে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত।
কিন্তু বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ২৮ দিন পর গত ২৬ অক্টোবর ডিএমপি কমিশনারের সংবাদ সম্মেলনের পর ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবীব উন নবী খান সোহেল ও যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ কাইয়ুমের সম্পৃক্ততার খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রচারের পর হঠাৎ চুপসে যায় বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর ও দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ড থেকে যে বেনিফিট তারা আশা করেছিলেন, তা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। সরকার চাপে পড়েছে ভেবে দেড় মাস ধরে বুকের মধ্যে লালন করা ‘আনন্দ’ হঠাৎ বিষাদে পরিণত হয় তাদের।
সূত্রমতে, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করে বিশেষ কোনো সুবিধা হবে না ধরে নিয়েই বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তারা ভেবেছিলেন, লন্ডনে অবস্থানকালে বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করে সরকারের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টির প্রয়াস পাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
এছাড়া লন্ডনে বাঙালি কমিউনিটিতে জনসভা করে সরকারের দোষ-ত্রুটি প্রবাসী বাঙালি ও বিদেশি গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরার সুযোগ পাবেন খালেদা জিয়া। বিদেশে জনমত তৈরির কাজটিও সেরে ফেলবেন তিনি।
কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সরকার, বিরোধী দল ও সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বন্ধুভাবাপন্ন কোনো রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগই পাননি।
তাছাড়া ব্রিটিশ সরকার অনুমতি না দেওয়ায় ২৭ অক্টোবর পূর্বনির্ধারিত সমাবেশও করতে পারেননি বিএনপির চেয়ারপারসন। যদিও রোববার রাতে (১ নভেম্বর) সেন্ট্রাল লন্ডনে আয়োজিত এক নাগরিক সভায় বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পান খালেদা জিয়া। তবে সেটি ছিল স্থানীয় এক হোটেলে আয়োজিত ঘরোয়া পরিবেশে।
এদিকে অজ্ঞাত কারণে কয়েক দফা প্লেন টিকিট বুকিং দিয়ে তা বাতিল করেছেন খালেদা জিয়া। সম্প্রতি নয়াপল্টনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৭ নভেম্বরের মধ্যে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার খবর জানালেও এখন সে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
অবশ্য গত শনিবার (৩১ অক্টোবর) খালেদা জিয়ার প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল খান সোহেল ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, ১০ নভেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লন্ডনে খালেদা জিয়ার অনির্দিষ্টকালের অবস্থান এবং দেশে ফেরা না ফেরা নিয়ে দায়িত্বশীল নেতাদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে যারপরনাই হতাশ বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
সূত্রমতে, দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা নিয়ে আগে-পিছে কিছু না ভেবেই বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বিষয়টিকে দলের জন্য ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছিলেন। তারা মনে করেছিলেন, এই ঘটনায় সরকার প্রচণ্ড চাপে পড়বে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাবে সরকার।
বিশেষ করে বাংলাদেশের সব চেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট অনিশ্চিয়তায় পড়ায় প্রচণ্ড চাপে পড়বে সরকার। বিদেশি দলগুলো বাংলাদেশে খেলতে না এলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট। বিষয়টি বর্তমান সরকারের জন্য সুখকর হবে না।
কিন্তু আইসিসির নির্বাহী সভায় অনূর্ধ ১৯ বিশ্বকাপ, এশিয়াকাপ, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর, বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাই পর্বের ফিরতি ম্যাস খেলতে নভেম্বরেই অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দলের বাংলাদেশ সফর চূড়ান্ত হওয়ায় ক্রিকেট ও ফুটবলকে ঘিরে তৈরি হওয়া শঙ্কা কেটে যায়। চাপমুক্ত হয় বাংলাদেশ সরকার। আশা ভঙ্গ হয় বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের।
সর্বশেষ যে দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের জের ধরে বাংলাদেশে ক্রিকেট ও ফুটবলের আন্তর্জাতিক ম্যাচ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়, সেই দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপির দুই নেতার সম্পৃক্ততার বিষয়টি সামনে চলে আসায় একেবারেই চুপসে গেছে দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, পুরো দেশটাই তো চুপসে গেছে। সরকারের নানামুখী নির্যাতন, নিপীড়ন ও হয়রানি ক্রমাগত চলতে থাকায় আমাদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার কিছুটা হয়েছে। তবে সঠিক দিক-নির্দেশনা পেলে ওরাই আবার ঘুরে দাঁড়াবে। উজ্জীবিত হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৫
এজেড/জেডএম