ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

দেশ গভীর সংকটের দিকে এগুচ্ছে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৫
দেশ গভীর সংকটের দিকে এগুচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

ঢাকা: সরকারের অসহিষ্ণু মনোভাবের কারণে দেশ ক্রমাগত গভীর সংকটের দিকে এগুচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
 
বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।


 
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ সম্প্রতি দলের বেশ কিছু নেতা-কর্মী ও সমর্থককে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে  খালেদা জিয়া এ বিবৃতি দেন।
 
বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর সরকার অচিরেই আরেকটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেয়ার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসায় দেশ আজ সর্বগ্রাসী কর্তৃত্ববাদী শাসনে বিপর্যস্ত।
 
শাসকদলের ক্ষমতা নির্ভর দম্ভ আর প্রশাসনের সঙ্গে মিলেমিশে একনায়কতান্ত্রিক আচরণে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে-বলেন খালেদা জিয়া।
 
তিনি বলেন, সবাই এখন উপলব্ধি করতে পারছে,  দেশ আজ গভীর সংকটে নিপতিত। এখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নেই।   এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। চারদিকে আতংক, উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ। যেন সামনে ঘোর অন্ধকার।

সরকার অবনতিশীল পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে অভিযোগ তুলে  খালেদা জিয়া বলেন, এরইমধ্যে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী  কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
 
অসুস্থ ফখরুলকে নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, জটিল রোগে আক্রান্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পুনরায় কারাগারে পাঠানোয় আমি বিস্মিত। এমন একজন অসুস্থ রাজনীতিককে কারাগারে পাঠানো-সরকারের চরম অমানবিক ও অসহিঞ্চু দৃষ্টিভঙ্গীর পরিচয় ছাড়া আর কিছু নয়। সরকার জেনে বুঝে একজন অসুস্থ মানুষকে পুনরায় কারাগারে পাঠিয়ে তার জীবনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে।
 
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের একের পর এক কারাগারে পাঠানোর মধ্যে সরকারের দুরভিসন্ধি রয়েছে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা যখন তৃণমূল পর্যায় থেকে কাউন্সিল করে দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি, তার পরপরই সারাদেশে দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে  গ্রেফতার করা হচ্ছে।
 
সরকারের দমন-পীড়ন থেকে বিএনপির সিনিয়র নেতারাও বাদ পড়ছেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি’র হাজার হাজার নেতা-কর্মী মামলা, চার্জশিট, গ্রেপ্তার আর দমননীতির শিকার হচ্ছেন। এ অরাজক পরিস্থিতি দেশ-জনগণ-গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত।
 
সরকার দেশের সব বিরুদ্ধমত দমনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অভিযোগ করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু বিএনপিই নয়-নাগরিক সমাজ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার বিরুদ্ধেও সরকার বিষোদগার করছে। যারাই  অপশাসন, দু:শাসন, দুর্নীতির সমালোচনা করছে, তাদের বিরুদ্ধেই বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হচ্ছে সরকার।
 
বিএনপি কোনো ধরনের উগ্র পন্থাকে সমর্থন করে না দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, সব ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। কিন্তু সরকার বিএনপি’র মতো একটি রাজনৈতিক দলকে সন্ত্রাসী চরিত্রের কালিমা লেপনের অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। তবে দেশে বিদেশে তা গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না, পাবেও না।
 
বিএনপি জনগণের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে দাবি করে তিনি বলেন, দেশ ক্রমাগত গভীর সংকটের দিকে এগুচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমরা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছি। সর্বদলীয় বৈঠকের কথাও বলেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে হলেও সত্য, সরকার আমাদের সে দাবির প্রতি এখন পর্যন্ত কর্ণপাত করেনি।
 
জনগণের ভোটাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বিচার ব্যবস্থায় স্বাধীন বিবেচনাবোধ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া, প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত এবং নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পুনর্গঠন করাসহ মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন খালেদা জিয়া।
 
তিনি বলেন, আমাদের এই দাবিগুলো কোন দলীয় দাবি নয়। আমাদের এই দাবি জনগণেরও।
 
ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে হিংসাশ্রয়ী-অসহিষ্ণু রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম, নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দলীয় রাজনীতির প্রভাবের বাইরে থেকে কাজ করতে পারবে।

বিবৃতিতে অসুস্থ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবীর রিজভী, সাবেক সংসদ সদস্য ডাঃ দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জি কে গউসসহ দল ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবি করেন খালেদা জিয়া।
 
তিনি বলেন, আমরা আশা করব সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে দেশের  সংকট উত্তরণে জাতীয় সংলাপের পরিবেশ উন্মুক্ত করবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৫
এজেড/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।