ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

স্থানীয় নির্বাচন: জামায়াতের ‘দাঁড়ি পাল্লা’ বাদ

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৫
স্থানীয় নির্বাচন: জামায়াতের ‘দাঁড়ি পাল্লা’ বাদ ছবি : প্রতীকী

ঢাকা: দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতীক ‘দাঁড়ি পাল্লা’ রাখছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) নির্বাচনের সংশোধিত আইনের ওপর ইসির তৈরি করা খসড়া বিধিমালা থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।



দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করতে সরকারের আনা অধ্যাদেশের ওপর নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালাও প্রস্তুত করছে কমিশন। এতে ৪০টি দলের জন্য ৪০টি প্রতীক মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরের জন্য সংরক্ষণের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা আইন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের পরই চূড়ান্ত করবে নির্বাচন কমিশন।

প্রস্তাবিত বিধিমালায় বলা হয়েছে-মেয়র কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর এই তিন পদের জন্য ৪০ দলের ৪০টি প্রতীক সংক্ষরণ করা হবে। এগুলো হলো- ছাতা, বাই-সাইকেল, চাকা, গামছা, কাস্তে, নৌকা, ধানের শীষ, কবুতর, কুঁড়ে ঘর, হাতুড়ি, কুলা, লাঙ্গল, মশাল, তারা, গোলাপ ফুল, মই, গরুর গাড়ি, ফুলের মালা, বটগাছ, হারিকেন, আম, খেঁজুর গাছ, উদীয়মান সূর্য, মাছ, বাঘ, গাভি, কাঁঠাল, চাবি, চেয়ার, হাত ঘড়ি, মিনার, রিকশা, হাত পাখা, মোমবাতি, হুক্কা, কোদাল, দেওয়াল ঘড়ি, হাত (পাঞ্জা), ছড়ি ও টেলিভিশন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ২০১৪ সালের ২২ ডিসেম্বর ৬৫টি প্রতীক সংরক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে ৪০টি প্রতীক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জন্য সংরক্ষিত। অবশিষ্ট ২৫টি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য। তবে অবশিষ্ট ২৫টির মধ্যে দাঁড়ি পাল্লা প্রতীকটি রাখা হয়েছিলো। এবার তাও নেই। এর মাধ্যমে জামায়াতকে গণতান্ত্রিক চর্চা থেকে দূরে রাখার প্রক্রিয়ার আরেক ধাপ সম্পন্ন হলো। এ দলটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন আদালত। তাই নির্বাচনের প্রতীকের তালিকা থেকেও দাঁড়ি পাল্লা প্রতীক বাদ রাখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জামায়াতের নিবন্ধনকে হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তাই নিবন্ধন বাতিল হয়েছে মর্মে কোনো চিঠি দলটিকে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে দলটিকে আমরা কোনো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় রাখছি না।

তিনি বলেন, পৌরসভা নির্বাচন আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশে রাজনৈতিক দল বলতে ইসি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকেই বোঝানো হয়েছে। তাই আদালতের নির্দেশ ও আইন মেনেই জামায়াতে ইসলামীর প্রতীক দাঁড়ি পাল্লা বাদ দেওয়া হচ্ছে।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে জানা গেছে, বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪০ টি। ২০১৩ সাল থেকে জামায়াতকে অনিবন্ধিত হিসেবে গণ্য করছে কমিশন। কেননা, হাইকোর্ট বিভাগ রিট পিটিশন নং ৬৩০/২০০৯ এর উপর ০১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে প্রদত্ত রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-এর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন।

এর আগে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব মওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে এক রিট পিটিশন দায়ের করেন। কয়েক দফা শুনানির পর হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১ আগস্ট এক রায়ে, জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়াকে আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও আইনগত অকার্যকর মর্মে ঘোষণা করায়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নামের রাজনৈতিক দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়।

এদিকে স্বতন্ত্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য পৌরসভা নির্বাচনের মেয়র পদে ১২টি, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের জন্য ১০টি এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদের জন্য ১২টি প্রতীক সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
 
মেয়র পদের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীকগুলো হলো-ইস্ত্রি, কম্পিউটার, ক্যারামবোর্ড, চামচ, জগ, টাই, নারিকেল গাছ, বড়শি, মোবাইল ফোন, রেল ইঞ্জিন, হ্যাঙ্গার ও হেলমেট।

সংরক্ষিত কাউন্সিল পদের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীকগুলো হলো-আঙ্গুর, কাঁচি, গ্যাসের চুলা, চকলেট, চুড়ি, পুতুল, ফ্রগ, ভ্যানেটি ব্যাগ, মৌমাছি ও হারমোনিয়াম।

সাধারণ কাউন্সিলর পদের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীকগুলো হলো-উটপাখি, গাজর, টিউবলাইট, টেবিল ল্যাম্প, ডালিম. ঢেঁড়শ, পাঞ্জাবি, পানির বোতল, ফাইল কেবিনেট, ব্রিজ, ব্ল্যাকবোর্ড ও স্ক্রু ডাইভার।

জোটের প্রতীক থাকছে না
এদিক দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচনে সব প্রক্রিয়া সংসদ নির্বাচনের মতো হলেও জোটগতভাবে প্রার্থী ও প্রতীক দেওয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে না।

সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তিন দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের জোটের প্রার্থী ও প্রতীক কি হবে তা জোটনেতৃত্বকারী দলকে জানাতে হয়। পৌরসভা নির্বাচনের খসড়া বিধিমালায় তা নেই।

ইসি কর্মকর্তা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচনে জোটের প্রার্থী দিতে হলে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে তা ঠিক করতে হবে। অন্যথায় একই জোটের কয়েকটি প্রতীক ব্যালট পেপারে ছাপা হবে। সেক্ষেত্রে জোটের কোনো প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও প্রতীক ব্যালটে থেকেই যাবে। এতে ভোট ভাগাভাগি হবে এবং জোটের প্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই কোন পৌরসভায় কোন পদে জোটের কোন দলের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হবে মনোনয়নপত্র দাখিলের পূর্বেই ঠিক করতে এবং সেভাবেই প্রার্থী ঠিক করতে হবে।

আগামী ডিসেম্বরের শেষ দিকে দেশের ২৪৫ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সরকার আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান আনায় সেভাবেই নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা প্রস্তত করছে ইসি। প্রস্তাবিত সে বিধিমালার ওপর আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন হলেই তা চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করবে নির্বাচন কমিশন।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৫
ইইউডি/জেডএম

** স্থানীয় নির্বাচনেও অংশ নিতে পারছে না জামায়াত

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।