কুমিল্লা: নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী সারা দেশের মতো ডিসেম্বরে কুমিল্লার ছয় উপজেলায় পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের উপযোগী পৌরসভাগুলো হলো- কুমিল্লার চান্দিনা, লাকসাম, দাউদকান্দি, বরুড়া, চৌদ্দগ্রাম ও হোমনা।
ডিসেম্বরে পৌর নির্বাচন হবে এমন খবর ছড়ানোর পর থেকেই নির্বাচনী উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে পৌর এলাকাগুলোতে।
প্রতিটি পৌরসভায় সম্ভাব্য মেয়র পদে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তবে কয়েকটিতে বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকলেও চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা ছাড়া বাকী ৫টি পৌরসভায় জামায়াত ইসলামী নিরব ভূমিকা পালন করছে।
কুমিল্লার ৬টি পৌরসভার সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদনে...
লাকসামে আওয়ামী লীগ-বিএনপির ডজনখানেক প্রার্থী
লাকসাম পৌরসভায় রয়েছে ৯টি ওয়ার্ড। এরই মধ্যে মেয়র পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করেছেন। প্রার্থীরা বিভিন্ন সভা ও অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন লাভের প্রত্যাশায় জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।
প্রার্থীদের এমন তৎপরতার ফলে ভোটারদের মধ্যেও উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় তারা দলীয় ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এখনো কাউকে প্রচার প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে না।
সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী লাকসাম প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৌলতগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবারক উল্যাহ কায়েস, লাকসাম উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও লাকসাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডেভাকেট রফিকুল ইসলাম হিরা, লাকসাম উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা যুবলীগের বর্তমান আহ্বায়ক প্রফেসর আবুল খায়ের, আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক পৌর মেয়র প্রার্থী হাজী আবুল কাশেম।
বিএনপির পক্ষে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন- পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বাবু সুভাষ বনিক, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এম তাজুল ইসলাম খোকন।
তবে একটি সূত্র জানায়, নিখোঁজ হওয়া লাকসাম পৌর বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির পারভেজের স্ত্রী শাহানাজ আক্তার মেয়র পদে প্রার্থী হতে পারেন। লাকসাম পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও ভাইয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন অথবা ওই গ্রুপের যে কাউকে নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারেন বলে জানা গেছে।
চান্দিনায় আওয়ামী লীগ ৫, বিএনপি ১
দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত চান্দিনা পৌরসভার মোট ওয়ার্ড ৯টি। এ পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের ৫ জন ও বিএনপির একজন সম্ভাব্য প্রার্থী দলীয় লবিং করছেন এবং নিজ নিজ এলাকায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চান্দিনায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, এলডিপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড। জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে।
আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী গোলাম দস্তগীর পাপন, দুই বারের নির্বাচিত পৌরসভার কাউন্সিলর পৌর আওয়ামী লীগ সহ সভাপতি জয়নাল আবেদীন, পৌর আওয়ামী লীগ ও চান্দিনা বাজার বণিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল জলিল এবং চান্দিনা বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ি রফিকুল ইসলাম।
বিএনপি থেকে বর্তমান মেয়র শাহ আলমগীর খানের মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত বলা যায়। কারণ এখানে আর কোনো প্রার্থী প্রচারণায় নেই। সাবেক মেয়র আবদুল মান্নান সরকার কিছুদিন আগে এলডিপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিলেও তিনি দলের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা না রাখায় আগের দল এলডিপি থেকে অথবা স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে।
বরুড়ায় লড়াই হবে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টির
১৯৯৫ সালে বরুড়া পৌরসভা ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয়। বরুড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির একক প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগের রয়েছে একাধিক প্রার্থী। এদিকে জামায়াত ইসলামীর কোনো প্রার্থীর নাম এখনো শোনা যায়নি। তবে জাতীয় পার্টির কয়েকজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে।
বিএনপি থেকে বর্তমান পৌর মেয়র ও উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন পাটোয়ারীর নাম একক প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। যদিও কৃষক দলের পৌর কমিটির আহ্বায়ক সাবেক পৌর চেয়ারম্যন মীর মোবারক হোসেন পৌর কমিটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফেস্টুন লাগিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও এ আসনটির সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির। সংসদ সদস্য অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন পছন্দের প্রার্থী হিসেবে কাকে মনোনয়ন দেন সেটাও বিবেচ্য বিষয়।
এই উপজেলা আওয়ামী লীগ তিন ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে সাবেক সংসদ সদস্য বিশিষ্ট শিল্পপতি নাছিমুল আলম চৌধুরী সমর্থন নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন সাবেক পৌর মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা বাহাদুরুজ্জামান। এছাড়া বরুড়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মান্নান, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ডক্টরস কমিউনিটি হসপিটালের পরিচালক নাছির উদ্দিন লিংকন, বরুড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বকতার হোসেন।
আওয়ামী লীগের অপর অংশের নেতা ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক মিয়াজী গত ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী অনুষ্ঠানে আমির হোসেনের নাম আগামী পৌর নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ আরেক অংশের নেতা সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আবদুল হাকিমের ছেলে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম কাকে মনোনয়ন দেবেন সে বিষয়ে তিনি এখনো কিছুই বলেননি।
এদিকে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী ছবি দিয়ে সাবেক পৌর কাউন্সিলর কাজী নজরুল ইসলাম আগামী পৌর নিবার্চনে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে ক্যালেন্ডার, ব্যানার, পোস্টার সাঁটিয়েছেন।
জাতীয় পার্টি থেকে পৌর জাতীয় পার্টির সভাপতি মাস্টার আবদুল বারী, উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রকি আহম্মদ স্বপন, পৌর যুব সংহতির নেতা সোহেল মাহমুদ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
হোমনায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির একাধিক প্রার্থী
২০০২ সালের ১৯ ডিসেম্বর ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে হোমনা পৌরসভা গঠিত হয়। এ পৌরসভায়ও মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছে। জামায়াতের কোনো প্রার্থী না থাকলেও জাতীয় পার্টির রয়েছে একজন প্রার্থী।
বর্তমান পৌর মেয়র হারুন মিয়া এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে কোনো দলের সঙ্গে তিনি জড়িত না থাকলেও তিনি স্বতন্ত্র থেকে আবার নির্বাচন করতে পারেন।
সম্ভাব্য মেয়র পদে বিএনপির তিনজন প্রার্থী রয়েছে। মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সহ-সাংগাঠনিক সম্পাদক হানিফ মিয়া, উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রাজা, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সানাউল্লাহ সরকার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগে রয়েছে সম্ভাব্য ৪ প্রার্থী। তারা হলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক খোরশেদ আলম পৌর আ’লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বাবুল ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন।
এদিকে উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেনও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দাউদকান্দিতে আ’লীগে একাধিক প্রার্থী, বিএনপি-জামায়াত নিষ্ক্রিয়!
দাউদকান্দি পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। এ পৌরসভায় মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আ’লীগের কয়েকজন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিএনপি-জামায়াতের কেউ এখনো মাঠে নামেনি। এক কথায় নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে এ জোট।
এ পৌরসভার বর্তমান মেয়র আব্দুস সাত্তার সম্প্রতি আ’লীগে যোগ দিয়েছেন। এর আগে তিনি ৩৫ বছর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি আ’লীগ থেকে এবার মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়া পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিয়া (পাথর শাহজাহান) ও পৌর যুবলীগের সভাপতি শাহজাহান খন্দকার সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চৌদ্দগ্রামে জোট-মহাজোটের একাধিক প্রার্থী মাঠে
২০০৩ সালে ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা গঠিত হয়। এর অস্থায়ী কার্যক্রম চলছে উপজেলা পরিষদের পুরাতন কয়েকটি ভবনে। চৌদ্দগ্রাম পৌরসভায় জোট ও মহাজোটের একাধিক প্রার্থী এখন মাঠে রয়েছেন। আ’লীগের দু’প্রার্থী মাঠে থাকলেও বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীরা অনেকটা গোপনেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে আ’লীগের হয়ে আবার প্রার্থী হবেন বর্তমান চৌদ্দগ্রাম পৌর মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান। এছাড়া উপজেলা যুবলীগের সদস্য ও পৌর কাউন্সিলর ইনাম হোসেন পাটোয়ারী (এনাম) মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নিবেন করবেন বলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে মামলা-গ্রেফতারের ভয়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতারা বছর জুড়ে অনেকটা আত্মগোপনে থাকলেও পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা মাঠে সক্রিয় হচ্ছেন।
গত নির্বাচনে বিএনপি জোটের প্রার্থী ছিলেন পৌর বিএনপি’র সভাপতি ড. জি এম নয়ন বাঙালি। এবার বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়ার জোর দাবি জানিয়ে আসছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
এদিকে উপজেলা জামায়াতের পক্ষে প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে উপজেলা জামায়াতের আমির ভিপি সাহাব উদ্দিনের।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হওয়ার কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক ভাবে সিদ্ধান্ত হলে জামায়াত যে কোনো ভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। ফলে মেয়র প্রার্থীতা নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটও বেকায়দায় রয়েছে।
এখন দেখার বিষয় আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে কুমিল্লার ৬ পৌরসভায় কোন দলের প্রার্থীরা শেষ হাসি হাসবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৫
এসএইচ