ঢাকা: নানা টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যাওয়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট আরেক দফা ভাঙনের মুখে পড়তে যাচ্ছে। জোটের পুরনো দু’টি শরিক দল জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
২০ দলীয় জোটের কয়েকজন শীর্ষনেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এ ব্যাপারে এখনই মুখ খুলছেন না জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া দল দু’টির নেতারা। আর বিএনপি বলছে, জোটের মধ্যে এখনো চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। ভাঙনের কোনো খবর তাদের জানা নেই।
সূত্র জানায়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ জোটের পুরনো শরিক ইসলামী ঐক্যজোট এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে জোটের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। সর্বশেষ পৌর নির্বাচনে এ দু’টি দলকে পাত্তা না দেওয়ায় জোটের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরো অবনতির দিকে মোড় নিয়েছে।
এরই প্রেক্ষিতে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়ায় দলীয় প্রার্থী দিয়েছে ইসলামী ঐক্যজোট। নরসিংদীতেও রয়েছে ইসলামী ঐক্যজোটের দলীয় প্রতীকধারী প্রার্থী।
আর উপমহাদেশের ধর্মভিত্তিক সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নির্বাহী সভাপতি মুফতি মুহম্মদ ওয়াক্কাস, মহাসচিব মহীউদ্দিন একরাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি রেজাউল করিম নয় বছর পর বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) বঙ্গভবনে গিয়েছেন মহান বিজয় দিবসে রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছা গ্রহণ করতে।
অন্যদিকে প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনী প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী, মহাসচিব মুফিত ফয়জুল্লাহ, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মুফতি আমিনীর বড় ছেলে হাসনাত আমিনী এবং দলটির আরেক শীর্ষনেতা মাওলানা জুবায়ের আহমেদ রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে গিয়ে ২০ দলীয় জোটে ভাঙনের আওয়াজ তুলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, জামায়াতকে অতি মূল্যায়ন ও কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে খুব একটা পাত্তা না দেওয়ায় বিএনপির ওপর অনেক আগে থেকেই ক্ষোভ ছিল ইসলামী ঐক্যজোট ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের।
জামায়াতের সঙ্গে আদর্শিক দ্বন্দ্ব থাকায় ইসলামী ঐক্যজোটের প্রয়াত চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মুহম্মদ ওয়াক্কাস জোটের নীতিনির্ধরণ পর্যায়ে জামায়াতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় ঊষ্মা প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সময়।
জানা গেছে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোটের শীর্ষনেতারা মনে করছেন, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে, কেবল জামায়াতের সঙ্গে দেন-দরবার করে এবং সবশেষে ২৩৫ পৌরসভায় দলীয় প্রার্থী দিয়ে পুরনো ক্ষোভকে উস্কে দিয়েছে বিএনপি।
এ ক্ষোভের বহির্প্রকাশ হিসেবেই প্রায় নয় বছর পর বঙ্গভবনে গিয়েছেন দল দু’টির শীর্ষ নেতারা।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নির্বাহী সভাপতি মুফতি মুহম্মদ ওয়াক্কাস বাংলানিউজকে বলেন, জোট করার সময় কাউকে মুচলেকা দেইনি। আমাদের চলা-ফেরার স্বাধীনতার ওপর কেউ যদি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চায়, সেটা হবে অনধিকার চর্চা।
জোট থেকে বের হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে নয় বছর পর বঙ্গভবনে গিয়েছিলাম। ওটা কোনো দলীয় প্রোগ্রাম ছিল না, ছিল রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম। সুতরাং, এ বিষয়টি নিয়ে কেউ যদি রাজনীতি করতে চায়, সেটা তাদের ব্যাপার। বিএনপির সঙ্গে আমাদের নির্বাচন ও আন্দোলনের জোট হয়েছিল, তা এখনো আছে। জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার চিন্তা আপাতত আমাদের নেই।
সূত্র জানায়, বিএনপির ওপর চরম ক্ষুব্ধ আব্দুল লতিফ নেজামীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট আগামী ৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েই জোট থেকে বেরিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে দলটির শীর্ষনেতাদেরও সায় আছে।
সে কারণেই দীর্ঘ নয় বছর পর দলের শীর্ষনেতাদের নিয়ে বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা আব্দুল লতিফ নেজামী। দলের অন্যতম নীতিনির্ধারক প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে হাসনাত আমিনীর বঙ্গভবনযাত্রা ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ইঙ্গিত হিসেবেও দেখছেন কেউ কেউ।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, এই মুহূর্তে শুধু এ খবরটাই দেওয়া যেতে পারে, রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে আমরা বঙ্গভবনে গিয়েছিলাম। পরের খবরটা জানার জন্য ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ওইদিন আমাদের দলের জাতীয় কাউন্সিল আছে।
আব্দুল লতিফ নেজামী বাংলানিউজকে বলেন, জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোনো খবর আমার কাছে নেই। আপাতত এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না।
সূত্র জানায়, ভোটের হিসাব ও সাংগঠনিক শক্তির দিক দিয়ে জামায়াতের পর ইসলামী ঐক্যজোট ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে ২০ দলীয় জোটে বড় দল হিসেবে বিবেচনা করে বিএনপি। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হওয়ায় এ দু’টি রাজনৈতিক দলের বেশ জনবল ও জনসমর্থন রয়েছে বলেই মনে করে জোটের প্রধান দলটি।
কিন্তু নিজেদের সঙ্গে আদর্শিক দ্বন্দ্ব থাকায় বিএনপি জোটে এ দুই দলকে কখনোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে দেয়নি জামায়াত। দল দু’টিকে সব সময় কোণঠাসা করে রেখেছে তারা।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির আতিথেয়তা গ্রহণ, দু’টি পৌরসভায় ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী দেওয়া এবং আগামী ৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন দুশ্চিন্তায় ফেলেছে বিএনপিকে।
তবে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাচ্ছেন না দলের কোনো নেতা। সব কিছু বুঝেও না বোঝার ভান করছেন তারা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের চমৎকার সম্পর্ক বিরাজমান। ভাঙনের কোনো খবর আমার কাছে নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৫
এজেড/এএসআর