গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিএনপি ‘চেয়ারপারসন’ হচ্ছেন দলীয় প্রধান এবং ‘মহাসচিব’ হচ্ছেন সাংগঠনিক প্রধান। সেই হিসেবে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড মহাসচিবকে ঘিরেই আবর্তিত হওয়ার কথা।
এছাড়া দলীয় সিদ্ধান্ত সংবাদমাধ্যমকে জানানো, দলের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য মিডিয়াতে তুলে ধরা এবং প্রতিপক্ষের কথার জবাব দেওয়ারও দায়িত্ব মহাসচিবের ওপরই বর্তায়।
কিন্তু মহাসচিবের এ দু’টি প্রধান কাজ এখন করছেন মো. শাহজাহান ও রুহুল কবির রিজভী। ফলে মহাসচিবের পদটি স্রেফ ‘অলঙ্কারিক’ পদে পরিণত হতে চলছে ধীরে ধীরে।
টানা ৯২ দিনের অবরোধ কর্মসূচির পর ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল গুলশান কার্যালয় থেকে বেরিয়ে দল পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেন খালেদা জিয়া। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ওই বছর ১০ আগস্ট তৃণমূল পুনর্গঠনের দায়িত্ব দেন সেই সময়ের যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহানকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রটোকল অনুযায়ী এই দায়িত্ব পাওয়ার কথা ছিল সেই সময়ের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। কিন্তু খালেদা জিয়া ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটি একজন যুগ্ম মহাসচিবের ওপর ছেড়ে দেন।
গতবছর ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নেতা-কর্মীরা ভেবেছিলেন দল পুনর্গঠনের দায়িত্ব এবার মহাসচিবকে দেবেন খালেদা জিয়া।
কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে দল পুনর্গঠনের দায়িত্ব পান বিএনপিতে পদোন্নতি পাওয়া সেই মো. শাহজাহান-ই। অর্থাৎ মহাসচিবের সাংগঠনিক দায়িত্ব এবার একজন ভাইস চেয়ারম্যানকে অর্পণ করেন বিএনপি প্রধান।
এদিকে আগে থেকেই দলের ‘মুখপাত্র’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হন, এরপরই মহাসচিবের দ্বিতীয় কাজটি তালুবন্দি করে ফেলেন তিনি।
অর্থাৎ দলীয় সিদ্ধান্ত সংবাদমাধ্যমকে জানানো, দলের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য মিডিয়াতে তুলে ধরা এবং প্রতিপক্ষের কথার জবাব দেওয়া সংক্রান্ত মহাসচিবের কাজটিও চলে যায় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের হাতে।
যে কোনো ইস্যুতে মহাসচিব কথা বলার আগেই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব প্রেস ব্রিফিং ডেকে বসেন! প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের সব নেতার কথার জবাব, জাতীয় দুযোর্গ, রাজনীতি, অর্থনীতি, বাজেট-সব ইস্যুতে ‘মহাসচিবের দায়িত্ব’ স্বেচ্ছায় পালন করেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব!
শুধু তাই নয়, কখনও কখনও মহাসচিবের ওপর চোখ রাঙানিও দেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরাঞ্চল পরিদর্শন শেষে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকে বিএনপি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ওই সংবাদ সম্মেলন শেষে মহাসচিবকে ফোন দিয়ে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জানতে চান, কেন তার জন্য অপেক্ষা করা হলো না। কেন তাকে সংবাদ সম্মেলনে ডাকা হলো না?
জানা গেছে, মহাসচিব বারবার তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, নির্দিষ্ট সময় পার হবার পরই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়েছে। তার জন্য কিছু সময় অপেক্ষাও করা হয়েছে। একজন সহ-দফতর সম্পাদকের মাধ্যমে তাকে (রিজভী) খোঁজ করে পাওয়া যায়নি।
দলের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলীয় শৃঙ্খলা না থাকায় মহাসচিবের কাজের হিসাব তলব করার সুযোগ পান সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। আর ‘মহাসচিব’ পদটি ‘অলঙ্কারিক’ পদে পরিণত হওয়ায় সাংগঠনিক কাজের দায়িত্ব পান দলের একজন ভাইস চেয়ারম্যান।
অবশ্য এসব নিয়ে খুব বেশি আক্ষেপ নেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। সম্প্রতি এক ঘরোয়া আলোচনায় এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম যাকে যে দায়িত্ব দিচ্ছেন তিনি তা পালন করছেন। এই মুহূর্তে এটি বড় কোনো ইস্যু নয়। এখন মূল কাজ হচ্ছে দলটাকে গুছিয়ে গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৭
এজেড/এমএ