জটিল সমীকরণের মধ্যেও এই দুই নেতার মনোনয়নের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে জোট নেতা খালেদা জিয়ার। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে মুফতি মুহাম্মদ ওযাক্কাস ও চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী-চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কিছু অংশ) আসনে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন!
বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরানো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নির্বাহী সভাপতি ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে যশোর-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন।
১৯৮৮ সালের নির্বাচনে ওই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হন তিনি। লাঙ্গল প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মন্ত্রিসভায় স্থান পান। প্রথমে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী পরে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন ওয়াক্কাস।
২০০১ সালের নির্বাচনে আবারও যশোর-৫ আসনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের প্রার্থী হন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ। সেবার ধানের শীষ প্রতীকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করেন।
২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও যশোর-৫ আসনে চার দলীয় জোট মনোনীত জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী হন মুফতি মুহম্মাদ ওয়াক্কাস। ওই নির্বাচনে মহাজোট মনোনিত আওয়ামী লীগ প্রার্থী খান মো. টিপু সুলতানের কাছে হারলেও ভোট পান ১ লাখ ৪ হাজার ৪৮৭টি।
সুতরাং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের এই নির্বাহী সভাপতি মনোনয়নের জন্য বিএনপির মুখের দিকে তাকিয়ে নেই। বরং নির্বাচনী এলাকায় তার দাপুটে অবস্থানের কারণে বরাবরের মতো এবারও জোটের মনোনয়ন তার দিকে ঝুঁকে আছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে এখনই কিছু ভাবছি না। অনেক সময় পড়ে আছে। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন নিয়ে ভাববো।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে ক্লিন ইমেজের কারণে আলাদা একটি অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।
নিরেট-নিপাট ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত মিষ্টভাষী সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিমের দরদমাখা ব্যবহার রাজনীতির মাঠে তার জন্য গ্রহণযোগ্য একটা জায়গা তৈরি করেছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সৈনিক সাবেক সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচন করেন।
ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট মনোনীত প্রার্থী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম।
খালেদা জিয়ার গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে এবার নিজের এলাকা চট্টগ্রাম-৫ আসনে নির্বাচনের জন্য কোমর বেঁধে নেমেছেন। অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা।
অবশ্য এ আসনে সাবেক তিনবারের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার সৈয়দ শাকিলা ফারজানা, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহম্মদ নাসির এবং তার ছেলে মীর হেলাল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারাও চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জঙ্গি অর্থায়নে গ্রেফতার হওয়া শাকিলা ফারজানার চেয়ে সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের ভাগ্নে সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিমকেই এগিয়ে রাখবেন খালেদা জিয়া। আর মীর নাসির ও মীর হেলালের মধ্যকার বাপ-বেটার যুদ্ধে নিজেকে জড়াতে যাবেন না বিএনপি প্রধান।
সূত্রমতে, নিজেরটা ছাড়াও সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম দলের মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমানের জন্য পাবনা-১ (সাথিয়া-বেড়া) এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদের জন্য নারায়ণগঞ্জ-২ আসন চাইবেন।
নির্বাচনী এলাকায় অবস্থানরত সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম শনিবার (০৮ জুলাই) রাতে ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, সব কথা তো আর খুলে বলা যাবে না। আজ সারাদিন নির্বাচনী এলাকায় কাজ করলাম। এর পেছনে নিশ্চয়-ই জোট প্রধানের কোনো না কোনো নির্দেশনা আছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৭
এজেড/এমএ