সোমবার (২৪ জুলাই) নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা জানেন নির্বাচন কমিশন কয়েকদিন আগে নির্বাচনি পথনকশা ঘোষণা করেছেন।
তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার আগে এ ব্যাপারে তিনি কিছুই করতে পারবেন না। তাহলে তিনি নির্বাচনের দেড় বছর আগেই রোডম্যাপ ঘোষণা করলেন কেন ? সিইসি’র এহেন বার্তায় ভয় পাচ্ছে জনগণ। জনগণের মনে আশঙ্কা-তাহলে আবারো কী ৫ জানুয়ারি স্টাইলে তিনি দেশে ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে যাচ্ছেন ?
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা সরকারি টাকা খরচ করে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ভোট চাচ্ছে আর বিএনপিকে ঘরোয়া সভা সমাবেশ পর্যন্ত করতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখন আর আইনের বাহিনী নয়, এদেরকে সরকারি দলের নীলনকশা বাস্তবায়নে লাঠিয়াল হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। তাই এরা কোনো মনুষ্যত্ব, আইন-কানুন ও জনমতের ধার ধারে না। এরা আশকারা পেয়ে আওয়ামী দুঃশাসনকে বিভৎস রূপ দিয়েছে। যার জলন্ত উদাহরণ হচ্ছে তিতুমির কলেজের নিরীহ ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান, যার দুটি চোখ পুলিশের গুলিতে অন্ধ। সুতরাং দলীয় সরকারের অধীনে সরকারের এই বাহিনীগুলো নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে বেপরোয়া হয়ে ওঠবে। এগুলিও নির্বাচনী অসমান মাঠের নমুনা। এই অসমতল মাঠ সমতল করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এই কাজটি তিন মাসে করতে পারা নির্বাচনের কমিশনের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। এই কাজটি এখন থেকেই শুরু হওয়ার কথা। অথচ সিইসি তফশিল ঘোষণার পর সেটি দেখবেন বলেছেন।
তিনি বলেন, আপনি (সিইসি) বলেছেন সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আপনার কিছুই করার নেই। তারা সরকারি খরচে ভোট চাচ্ছে, নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করছে, কিন্তু আপনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। এমনকি আপনার অধীনে যে নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেগুলোও রক্তমাখা। সরকারি প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দলের প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছে না, জোর করে তাদের মনোনয়নপত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তাদের বাড়িতে গিয়ে হামলা করা হয়েছে এবং সর্বশেষে ভোট ডাকাতির সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে নিজেদেরকে বিজয়ী করছে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, রাজনীতি করতে সাহস লাগে, মামলা মোকাবেলা করতে হয়। কিন্তু বিএনপি নেতাদের সেই সাহস নেই। তাহলে কাদের সাহেব আপনাদের যখন এত সাহস, তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। আপনারাইতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিলেন, ঘাতকের বিভৎস তান্ডব চালিয়ে হরতাল অবরোধ করে গাড়ি পুড়িয়েছিলেন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছেন। এখন ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে নিজেদের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করেছেন। নিজেদের মর্জ্জি ও প্রয়োজন মাফিক সংবিধান বদল বা সংশোধন করেন, কিন্তু এখন বিএনপি-কে সংবিধানের দোহাই দেন।
তিনি বলেন, সংবিধানে তো সকল দলের সভা-সমাবেশ করার অধিকার আছে, কিন্তু সাংবিধানিক সেই বিধান তো আপনারা মানছেন না। সভা-সমাবেশের সেই অধিকার তো আপনারা বাকশালী খাঁচায় বন্দি করে রেখেছেন। মূলত: ভয়াবহ দুর্নীতি, দুঃশাসন আর নির্যাতন নিপীড়নের কারণে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আপনারা শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। মাইনাস টু তত্ত্ব মেনে নিয়ে আপনার নেত্রী বিদেশ পাড়ি জমিয়েছিলেন, এটি কোনো ধরণের সাহসের নমূনা ? মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন এর সরকার বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বন্দি করে কিভাবে ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে-তা নিশ্চয়ই কারো অজানা নেই। অন্যায়ভাবে একজনকে নির্যাতন চালিয়ে পঙ্গু করা কী সাহসের দৃষ্টান্ত না কাপুরুষের নমূণা ?
এ সময় দলের সিনিয়র নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৭
বিএস