তবে আলোচনা করলেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। এক সময় ভেবেছিলেন তার সহধর্মিনী রওশন এরশাদকে দায়িত্ব দেবেন।
দলের মধ্যে এখন দুটি ধারা বেশ স্পষ্ট। একটি এরশাদপন্থি অন্যটি রওশনপন্থি। রওশনপন্থিরাই মূলত এখন ক্ষমতার সুবিধাভোগী। এরশাদের নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দলের অনেক নেতাকর্মীর কাছেই রওশন এরশাদ বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত। যে কারণে অনেকেই তাকে মেনে নিতে নারাজ।
রওশনকে দায়িত্ব দিলে বড় একটি অংশ জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে যেতে পারে অথবা পৃথক দল গঠন করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বিকল্প ভাবনা ছিলো ছোট ভাই জিএম কাদেরকে নিয়ে। বিগত নির্বাচনে এরশাদের সঙ্গে একাট্টা হয়ে নির্বাচন বর্জন করেছিলেন জিএম কাদের।
২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে রওশনপন্থিদের সমালোচনায় এখনও মুখর জিএম কাদের। একসঙ্গে মন্ত্রিসভা ও বিরোধী দলে থাকা নিয়েও সমালোচনায় সরব তিনি। যে কারণে রওশনপন্থিদের সঙ্গে জিএম কাদেরের সম্পর্ক সাপে-নেউলে।
জিএম কাদেরকে ভবিষ্যত নেতা হিসেবে গ্রহণ করতে নারাজ রওশনপন্থিরা। গত বছর ছোট ভাই জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা দিলে বিষয়টি আঁচ করা গেছে। তখন রওশনকে নিয়ে মাঠে নামেন তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত জিয়াউদ্দিন বাবুল- আনিসুল ইসলাম মাহমুদরা। এক সময় রওশনের নেতৃত্বে আলাদা দল গঠনের হুমকি দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত রওশনকেও কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা দিতে বাধ্য হন এরশাদ।
এখানে কৌশলগত সমস্যাও রয়েছে। এরশাদ জেলে থাকার সময় আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সঙ্গে লাঙ্গল প্রসঙ্গ কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। সেখানে বাদী ছিলেন রওশন এরশাদ। কোর্টের রায়ে লাঙ্গল রওশনকে দেওয়া হয়। সে কারণে রওশন বেঁকে বসলে বিপদের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে উভয় সংকটে রয়েছেন এরশাদ।
সম্প্রতি ভাতিজা (চাচাতো ভাইয়ের ছেলে) পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) খালেদ আক্তারের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন এরশাদ। তার খুব ঘনিষ্ঠ এক দু’জনের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন বলে জানা গেছে।
খালেদ আক্তার দীর্ঘদিন ধরে পার্টির কোষাধ্যক্ষ ও পার্টির চেয়ারম্যানের একান্ত সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এবারের কাউন্সিলে তাকে প্রেসিডিয়ামের সদস্য করা হয়েছে। সে বিষয়টিও নাকি এরশাদের দীর্ঘমেয়াদী ভাবনারই অংশ।
তবে খালেদ আক্তারকে পার্টির লোকজন কতটা মেনে নেবে সে নিয়ে যথেষ্ট সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। সিনিয়র নেতারা বলেছেন, খালেদ আক্তার চড়া মেজাজের লোক, তার আচার ব্যবহারে অনেকেই সন্তুষ্ট নন। তারা এরশাদের এই সিদ্ধান্ত ভালোভাবে পালন নাও করতে পারেন। ভাতিজা খালেদ আক্তারকে রওশন এরশাদ এবং জিএম কাদেরপন্থিরা কীভাবে দেখবেন সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ।
কাগজে কলমে এরশাদের জন্ম ১৯৩০ সালে। সে হিসাবে তার বয়স এখন সাতাশি বছর। শরীরে নানা রকম জটিলতা দেখা দিচ্ছে। রংপুর সফরকালে গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে রংপুর সিএমএইচ-এ ভর্তি করা হয় তাকে। পরদিন রংপুরের বেশ কয়েকটি কর্মীসভায় যোগদানের কথা থাকলেও তা বাতিল করে দেন।
২৮ সেপ্টেম্বর ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ফেরেন। ঢাকায় ফিরেও কোনো কর্মসূচিতে যোগ দেননি এরশাদ। ৩০ সেপ্টেম্বর গিয়েছিলেন ঢাকা সিএমএইচ-এ। ডাক্তাররা তাকে পুরোপুরি বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু ১ অক্টোবর ফের অসুস্থবোধ করায় হাসপাতালে ভর্তি হন এরশাদ।
টানা তিনদিন হাসপাতালে থাকার পর বাসায় ফেরেন। এর দু’দিনের মাথায় আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে ফের সিএমএইচ ভর্তি হন। হাসপাতালে থেকেই সোমবার (০৯ অক্টোবর) ইসির সংলাপে যোগ দেন তিনি।
এরশাদের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, বাম পায়ে পুরোপুরি শক্তি পাচ্ছেন না, ডাক্তার তাকে ওষুধ দিয়েছে। কয়েক বছর আগে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে বাম পায়ে চোট পেয়েছিলেন এরশাদ। সেখানেই ব্যথা অনুভব করছেন। সেই সঙ্গে লিভারে পানি জমেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৭
এসআই/এমজেএফ