ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালতে যা বললেন খালেদা

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৭
আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালতে যা বললেন খালেদা দুর্নীতির মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গলেন খালেদা। ছবি: দীপু

ঢাকা: আদালতের ঘড়িতে তখন দুপুর সোয়া বারোটা। আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালতে বক্তব্য দিতে শুরু করেছেন খালেদা জিয়া। এর ১৫ মিনিট আগে দুর্নীতির দুই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। জামিন মঞ্জুরের পর পনের মিনিট আদালত বিরতি দিয়ে খালেদা জিয়াকে তার আত্মপক্ষ সমর্থনে প্রস্তুত হতে নির্দেশ দিয়ে এজলাস হতে নেমে যান।

বিচারক পুনরায় এজলাসে উঠলে খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য শুরু করেন।

খালেদা জিয়া বলেন, আমিসহ  অন্যান্যদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও হয়রানিমূলকভাবে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ মামলার অভিযোগ সম্পূর্ণ কাল্পনিক ও বানোয়াট। সব অভিযোগ স্ববিরোধী বক্তব্যে ভরপুর। এ ট্রাস্টে অর্থায়ন, পরিচালনা বা অন্য কিছুর সঙ্গে আমার নিজের ব্যক্তিগতভাবে কিংবা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রধানমন্ত্রীর কোনো সম্পর্ক ছিল না এবং এখনও নেই। দুর্নীতি দমন কমিশন আইনগত কর্তৃত্ব এবং এখতিয়ারের বাইরে এ মামলা দায়ের করেছে।

খালেদা জিয়া বলেন, ভিত্তিহীন অভিযোগে দায়ের করা এ মামলায় বিচারের নামে দীর্ঘদিন ধরে আমি হয়রানি, পেরেশানি ও হেনস্থার শিকার হচ্ছি। আমার স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যহত হচ্ছে। বিঘ্নিত হচ্ছে আমার রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম। দেশ জাতি ও জনগণের জন্য তাদের স্বার্থ ও কল্যাণে নিয়োজিত আমার প্রয়াস ও পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

খালেদা জিয়া আরও বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমন ধারণা প্রবল যে, দেশে এখন ন্যায় বিচারের উপযোগী সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ নাই। বিচার বিভাগ স্বাধীন ও স্বাভাবিকভাবে বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারছেন না। বিচারকদের পদোন্নতি, নিয়োগ ও বদলীর ক্ষমতা ব্যাপকভাবে ক্ষমতাসীনদের হাতে রয়ে গেছে। বিচারকদের মনে এই ক্ষমতার অপপ্রয়োগের ভয় থাকা স্বাভাবিক। নিম্ন আদালতে এ পরিস্থিতি ও পরিবেশের নেতিবাচক প্রভাব আরও প্রকট।

তারেক রহমানের মানি লন্ডারিং মামলার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, একজন বিচারক অর্থ পাচারের অভিযোগ থেকে তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন। এ অপরাধে শাসক মহল উক্ত বিচারককে হেনস্থা ও হয়রানির উদ্দেশে এমন তৎপরতা শুরু করেন যে, আত্মরক্ষা করতে তাকে দেশ ত্যাগ করতে হয়েছে।

খালেদা জিয়া বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের সঙ্গে শাসক মহলের বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এসব কারণেই বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সম্প্রতি প্রকাশ্যেই বলেছেন যে বিচার বিভাগের হাত-পা বাঁধা। তিনি আরো বলেছেন, বিচারকগণ স্বাধীন নন। এসব কারণে আমাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে কি না তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের বিশেষ এজলাসে বিচার প্রসঙ্গে খালেদা বলেন,  এটা কি বিচারের কোন প্রাঙ্গণ? এটা কি কোট-কাচারির কোনো এলাকা। আমরা বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিচারের জন্য বিশেষ আদালত বসেছে আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে। এ মাদ্রাসা প্রাঙ্গণের সঙ্গে বিচার ও কোর্ট-কাচারির কোনো সম্পর্ক আছে কি?

তিনি বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও বিদ্রোহের বিচার করার জন্য এই আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এজলাস বসানো হয়। শত শত অভিযুক্ত ও সাক্ষির উপস্থিতিতে সেই মামলা পরিচালনা, উপযুক্ত কাঠামো কোর্ট-কাচারির প্রাঙ্গণে নেই। এ জন্য আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে মামলাটির বিচারকাজের জন্য এজলাস স্থাপন করা হয়েছিল। সেখানে এখন আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিচার কেন করা হবে বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।  

তিনি বলেন, আমাকে জনসম্মুখে হেয়, অপমান ও হেনস্থা করায় ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্য। এটাও বিচার প্রক্রিয়ায় একধরনের হস্তক্ষেপ।

খালেদা জিয়া বলেন, এমন পদক্ষেপ জনমনে ন্যায় বিচার সম্পর্কে চরম সংশয়, সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। এর মাধ্যমে আমাকে বিচারের আগেই এবং বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এক ধরনের চরম হেনস্থা ও অসম্মানিত করা হচ্ছে। এর প্রতিবিধান আমি কার কাছে চাইবো, কোথায় পাবো এর প্রতিকার?

ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি সম্পর্কে খালেদা জিয়া বলেন, দুর্নীতি, লুটপাট ও বিদেশী ব্যাংকে তাদের বিপুল অর্থভাণ্ডারের সংবাদ দেশবাসী ও সারা দুনিয়া জানে। তারাই আবার কাঁচের ঘরে বসে অন্যের দিকে ঢিল ছুঁড়ছে।  

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের নামে এতিমখানা স্থাপনের জন্য বিদেশ থেকে অনুদানের যে অর্থ এসেছিলে তার একাংশ দিয়ে এতিমখানা এবং এতিমদের কল্যাণ সাধিত হচ্ছে। বাকী অংশ যা ব্যাংকে গচ্ছিত ছিল, তার প্রতিটি পয়সায় রক্ষিত রয়েছে। ব্যাংকের সুদযুক্ত হয়ে টাকার পরিমাণ অনেক বেড়েছে। এর একটি পয়সাও অপচয় বা আত্মসাৎ হয়নি। আর কেউ চুরি করে খাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।

খালেদা জিয়া বলেন, আমি বিশ্বাস করতে চাই, আপনার এই আদালত আইনের দ্বারা পরিচালিত, এই আদালতে আমার উপস্থিতি ও হাজিরা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আপনি স্বাধীনভাবে গ্রহণের অধিকার রাখেন বলে মনে করি। প্রধানমন্ত্রীর উক্তি কি আপনার সেই অধিকার, স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়। ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, এমপি ও দলের নেতারা কয়েক বছর ধরে বিচারাধীন এই মামলা নিয়ে ক্রমাগত মন্তব্য করে চলেছেন। এ মামলায় রায় কি হবে সেটাও প্রকাশ্য বক্তব্য দিয়ে চলেছে। এ অপতৎপরতা এবং বেআইনি প্রচারণা বন্ধের কোনো উদ্বেগ না থাকায় ন্যায় বিচার নিয়ে দেশবাসীর মনে প্রবল আস্থাহীনতা এবং ঘোর সন্দেহ, সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

খালেদা জিয়া বলেন, মিথ্যা ও সাজানো মামলায় বিরোধীদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী এ মুহূর্তে কারাগারে বন্দি। বিএনপির প্রায় ৭৫ হাজার নেতাকর্মী বিভিন্ন মেয়াদে কারা নির্যাতন ভোগ করেছে। আমাদের দলের ৪ লাখের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ২৫ হাজারের মতো মামলা দায়ের করা হয়েছে। নির্যাতন গ্রেফতার, হয়রানি ও গ্রেফতারের ভয়ে বহু নেতাকর্মী ঘরে থাকতে পারছে না, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

**আদালত চত্বরে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ধস্তাধস্তি
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৭
এমআই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।