এ দাবি করে তার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, পঁচাত্তরোর্ধ্ব শাহজাহানের কাছে অন্যদের যেসব জমির কাগজপত্র পাওয়ায় একমাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর আম মোক্তারনামা জমির মালিকরাই তাকে দেন। সাজা দেওয়ার আগে এ বিষয়টিসহ তার বয়স, মুক্তিযোদ্ধা- এসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া যেতো বলে মনে করেন আইনজীবীরাও।
শাহজাহানের মেয়ের জামাই হাইকোর্টের আইনজীবী শাহ এমরান আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, তার শ্বশুর দু'টি এলএ মামলায় (১৩/২০০৭-০৮ ও ২/২০০৯-১০) আংশিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। বাকি টাকার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। সে বিষয়েই খোঁজ নিতে মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) ঢাকা জেলা ভূমি অফিসে যান তিনি। এ সময় তাকে মধ্যস্বত্বভোগী বিবেচনায় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারায় একমাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
তার কাছে অন্যের জমির কাগজ থাকা প্রসঙ্গে আজাদ বলেন, ওইসব জমির মালিক সেসব জমির খোঁজ নিতে তাকে আম মোক্তারনামা দিয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি তা দেখাতে পারেননি। কারণ, তিনি এ ঝামেলায় পড়বেন ভাবেননি।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজাদ রহমান বলেন, ভূমি অফিসে দালালদের অপতৎপরতা ও সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি রোধে জেলা প্রশাসনের ভূমিকা প্রশংসনীয়। কিন্তু তাৎক্ষণিক সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে।
পঁচাত্তরোর্ধ্ব এক ব্যক্তি, যিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও একটি দলের উপদেষ্টা, তাকে তাৎক্ষণিক সাজা না দিয়ে মুচলেকা নেওয়া কিংবা প্রথমে সতর্ক করে দেওয়া যেতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অ্যাডভোকেট আজাদ বলেন, ওই আইনে সর্বোচ্চ সাজা একমাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা ২০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড। প্রথম অপরাধ ও বয়স বিবেচনায় সর্বোচ্চ জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া যেতো।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাশফাকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভূমি অফিসের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে জেলা প্রশাসন বদ্ধপরিকর। সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি রোধে ভূমি অফিসের আঙিনায় কোনো টাউট ও দালাল প্রকৃতির লোকের আনাগোনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গত ০৩ জুলাই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সেবাপ্রার্থীদের সরাসরি ভূমি অফিসে আসতে উৎসাহিত করা হচ্ছে’।
‘ভূমি অফিসের টাউট-দালাল উচ্ছেদে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ঘোষণাও ওই নোটিশে দেওয়া হয়েছিল’।
তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমরা শাহজাহানকে চিনি না। তার সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধও নেই। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অংশ হিসাবে শাহজাহানকে আটক করি। তার মামলার কাগজপত্র ছাড়া আরও চারজনের কাগজপত্র তার কাছে পাওয়া যায়। মূলত কি করেন জিজ্ঞাসা করা হলে তাও বলতে পারেননি তিনি। পরে তার স্বীকারোক্তিমতেই তাকে একমাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে’।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৭
এমআই/এএসআর