ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

হাসিনা হত্যাচেষ্টার বিস্ফোরক মামলায় ১১ জনের যাবজ্জীবন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৭
হাসিনা হত্যাচেষ্টার বিস্ফোরক মামলায় ১১ জনের যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কয়েকজন। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ১৯৮৯ সালের ১০ আগস্ট ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে হামলা চালিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ছয়মাস করে কারাদণ্ড পেয়েছেন তারা।

ঘটনার দীর্ঘ ২৮ বছর পর রোববার (২৯ অক্টোবর) দুপুর তিনটার পরে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জাহিদুল কবিরের আদালত আলোচিত বঙ্গবন্ধু ভবনে ফ্রিডম পার্টির গ্রেনেড/বোমা হামলার বিস্ফোরক মামলার এ রায় দেন।

১২ আসামির মধ্যে বাকি একজন খালাস পেয়েছেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশীদ, মো. মিজানুর রহমান, মো. শাজাহান বালু, গাজী ঈমাম হোসেন, জর্জ মিয়া, গোলাম সারোয়ার মামুন, মো. সোহেল ওরফে ফ্রিডম সোহেল, গোলাম সারোয়ার মামুন, সৈয়দ নাজমুল মাকসুদ মুরাদ, মো. হুমায়ুন কবির হুমায়ুন ও খন্দকার আমিরুল ইসলাম কাজল।

অপর আসামি হুমাউন কবির ওরফে কবির খালাস পেয়েছেন।
        
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে গোলাম সারোয়ার মামুন, জর্জ মিয়া, মো. সোহেল ওরফে ফ্রিডম সোহেল ও সৈয়দ নাজমুল মাকসুদ মুরাদ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়া মুরাদকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার করে এনে ২০১৪ সালের ২০ মার্চ কারাগারে পাঠানো হয়। তাদেরকে রায় শোনাতে আদালতে হাজির করা হয়।

জামিনে থাকা পাঁচ আসামির মধ্যে চারজন হুমাউন কবির ওরফে কবির, গাজী ঈমাম হোসেন, খন্দকার আমিরুল ইসলাম কাজল, মো. মিজানুর রহমানও আদালতে হাজির ছিলেন।   তবে মো. শাজাহান বালু আসেননি।

দণ্ডপ্রাপ্ত ওই সাতজনকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আর খালাস পেয়েছেন হুমাউন কবির ওরফে কবির।

অন্য তিনজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশীদ, জাফর আহম্মদ মানিক ও মো. হুমায়ুন কবির হুমায়ুন পলাতক। তাদেরসহ মো. শাজাহান বালুকে গ্রেফতারে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।  

এর আগে বেলা ১২টায় পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বিপরীতে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে বসে একই ঘটনার দণ্ডবিধি আইনের মামলার রায়ে ওই ১১ জনকেই ২০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন একই আদালত। একইসঙ্গে ৪০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে এক বছর করে কারাদণ্ড পেয়েছেন তারা।

এ মামলাটিতে আসামিদের দু’টি করে ধারায় (১২০বি, ৩০৭/১৯ বা ৩৪) দশ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ছয়মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।

ওই মামলায়ও খালাস পেয়েছেন হুমাউন কবির ওরফে কবির।

সবমিলিয়ে বঙ্গবন্ধু ভবনে হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার দায়ে দুই মামলায় মোট ৫০ বছর করে কারাদণ্ড ও ৬০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে দেড় বছর করে কারাদণ্ড পেয়েছেন আসামিরা। সাজা একটির পরে একটি কার্যকর হবে। তবে কারা হাজত বাসকালীন সময় মোট সাজার মেয়াদ থেকে কাটা যাবে। পলাতকদের সাজার মেয়াদ শুরু হবে তারা গ্রেফতার হওয়া বা আত্মসমর্পণের পর থেকে।

বিস্ফোরক আইনের মামলাটিতে গত ১৬ অক্টোবর আর দণ্ডবিধি আইনের মামলাটিতে গত ১৫ অক্টোবর উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষে মামলা দু’টিরই রায় ঘোষণার দিন ২৯ অক্টোবর ধার্য করা হয়।

১৯৮৯ সালের ১০ আগস্ট মধ্যরাতে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর এ হামলা চালান ফ্রিডম পার্টির ১০/১২ জনের একটি দল। এ সময় শেখ হাসিনা বাড়ির ভেতর অবস্থান করছিলেন।

এ ঘটনায় বঙ্গবন্ধু ভবনে কর্মরত পুলিশ হাবিলদার মো. জহিরুল ইসলাম হত্যা প্রচেষ্টা (দণ্ডবিধি) ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ১৬ জনকে আসামি করে ধানমণ্ডি থানায় মামলা দায়ের করেন।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ১৯৮৯ সালের ১০ আগস্ট রাত ১২টা থেকে দুইটার মধ্যে ১০/১২ জনের একটি দল ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে হামলা করেন। তারা এ সময় গুলি চালিয়ে ও গ্রেনেড/বোমা ফাটিয়ে ত্রাসের সৃষ্টি করেন তারা। হামলাকারীরা ‘কর্নেল ফারুক-রশীদ জিন্দাবাদ’ শ্লোগান দিয়ে স্থানত্যাগ করেন।

১৮৮৯ সালেরই ০৮ ডিসেম্বর চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শেষ করে দেয় পুলিশ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ০২ সেপ্টেম্বর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয় এবং সিআইডিকে পুনঃতদন্তের আদেশ দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

১৯৯৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ১৬ জনকে আসামি করে দণ্ডবিধি ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দু’টি অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডি’র এএসপি মো. খালেক উজ্জামান।

আসামিদের মধ্যে দু’জন লিয়াকত হোসেন ওরফে কালা লিয়াকত ও রেজাউল ইসলাম খান ফারুক ওরফে ফারুক রেজা মারা যাওয়ায় তাদের নাম যথাক্রমে ২০০৫ সালের ২০ জুলাই ও ২০০৯ সালের ১৪ জুন  মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

অন্যদিকে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আসামি সৈয়দ ফারুক রশীদ ও বজলুল হুদার ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

পরে মামলা দু’টি প্রথমে ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে জেলা দায়রা জজ এবং পরে মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি হয়। সবশেষে ২০১২ সালের ২৯ মার্চ বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা বদলি করেন মহানগর দায়রা জজ।

সরকারি সিদ্ধান্তে ২০০৯ সালের ০৯ মে থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বিপরীতে স্থাপিত অস্থায়ী আদালত ভবনে দণ্ডবিধি মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলে। আর বিস্ফোরক মামলার বিচার চলে জজকোর্টে।

রাষ্ট্রপক্ষের ১৩ জন বিস্ফোরক মামলায় ও ১২ জন সাক্ষী দণ্ডবিধির মামলায় সাক্ষ্য দেন। গত ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত বিস্ফোরক মামলায় ও ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দণ্ডবিধির মামলায় যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন করেন রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ।    

এর আগে গত ২০ আগস্ট গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি বোমা উদ্ধার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার অন্য দুই মামলায় দশজনকে মৃত্যুদণ্ড, একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৩ জনকে ১৪ বছর করে ও ৯ আসামিকে ২০ বছর করে কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৭
এমআই/এএসআর
** শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টার দায়ে ১১ জনের ২০ বছরের কারাদণ্ড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।