রোববার (২৬ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় শরীয়তপুর পুলিশ লাইন্স মাঠে আয়োজিত জঙ্গিবাদ বিরোধী ওলামা-মাশায়েখ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জেলা পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশিং ওলামা-মাশায়েখ ফোরাম এই সমাবেশের আয়োজন করে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, তবে ধর্মান্ধ না। এটা বারবার প্রমাণ হয়েছে। আমি পৃথিবীর বহু মুসলিম দেশ ঘুরেছি, বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলাও ঘুরে দেখেছি, কিন্তু এদেশের মানুষের মতো ভ্রাতৃত্ববোধে আবদ্ধ, একে অপরের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর মানুষ পৃথিবীর কোনোখানে দেখিনি।
তিনি বলেন, বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো আজ ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে। ইতালির এক নাগরিককে গুলশানে গুলি করে হত্যার পর আমেরিকান একটি ওয়েবসাইট থেকে এটি প্রচারিত হলো, এখানে আইএস আছে, যেটা পরিচালনা করেন একজন ইহুদি নারী। একদল রাষ্ট্রদূত আমার কাছে এসে বললো, এখানে আইএস এসে গেছে। এর কিছুদিন পর দেখলাম রংপুরে এক জাপানি নাগরিককে হত্যা করা হলো। এরপর পঞ্চগড় থেকে শুরু করে গুলশানের হলি আর্টিজান পর্যন্ত, কারা এসব হামলা করেছে? আমরা দেখতাম, কথার প্রথমে এগুলোর জন্য আলেম-ওলামাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হচ্ছে। পরে পুলিশ ও সর্বস্তরের গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে দেখলো, এগুলো আলেম-ওলামারা করেননি, এগুলো তাদের কাজ নয়। হলি আর্টিজানের ঘটনার পরে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান করলেন, আপনারা এগিয়ে আসুন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ আমাদের বন্ধ করতে হবে। যারা ভুল করে সেখানে গেছে তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। সেদিন এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখলাম, এদেশের সর্বস্তরের মানুষকে এক হয়ে যেতে দেখলাম। দেখলাম, মাদ্রাসার ছোট ছেলেটিও বুকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ চাই না লেখা প্লাকার্ড ঝুলিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে। সে জন্যই আমরা জঙ্গি দমন করতে পেরেছি।
১০ বছর আগের নিরাপত্তা বাহিনী আর আজকের নিরাপত্তা বাহিনী এক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকের নিরাপত্তা বাহিনী অত্যন্ত বিজ্ঞ, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। নিজেদের জীবন বিপন্ন করেও তারা জঙ্গি হামলা প্রতিহত করেছে। আমরা নৈতিকতা ও ধর্মের কথা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করেছি, যাতে যুবকেরা পথভ্রষ্ট না হয়। উচ্চ শিক্ষিত কিছু যুবক ইন্টারনেটে আমাদের ধর্ম সমন্ধে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। কিন্তু বাঙালি মুসলমান যুবকেরা প্রমাণ করে দিয়েছে যে তারা এ ষড়যন্ত্রে বিভ্রান্ত হয়ে তাদের ফাঁদে পা দেবে না।
আলেমদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনাদের প্রাণের দাবি কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ওয়াক্ত মতো আদায় করেন, তাহাজ্জুদের নামাজও তিনি আদায় করেন। ফজরের নামাজ আদায় করে কোরান তেলাওয়াত করে তিনি কাজ শুরু করেন। তার হাতে বাংলাদেশ। সেজন্যই আপনাদের সহযোগিতায় তিনি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন করতে পেরেছেন।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার সরকার আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলমানদের বারবার আমাদের দেশে তাড়িয়ে দিয়েছে। হত্যা, নির্যাতনের শিকার হয়ে সহায়-সম্বল ফেলে শুধু প্রাণ নিয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের দেশে চলে এসেছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী বললেন, এদের আসতে দাও, এদের বাঁচতে দাও। প্রধানমন্ত্রী শুধু রোহিঙ্গাদের এনেই বসে থাকেননি। তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছুটে গেছেন। এ কারণে বিশ্ববাসী তাকে মাদার অফ হিউম্যানিটি খেতাব দিয়েছে। এটাই মানবতা, এটাই ধর্ম, এটাই আমাদের ইসলাম ধর্মে শিখিয়েছে।
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান আলোচক ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শরীয়তপুর-১ আসনের এমপি বিএম মোজাম্মেল হক, সংরক্ষিত মহিলা আসন-২৭ এর এমপি অ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার, ঢাকা রেঞ্জের এডিশনাল আইজি মোহা. শফিকুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মাহবুবা আক্তার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে, শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল এবং শরীয়তপুর উসমানিয়া কওমিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আবু বকর।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৭
এসআই