সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আগাম নির্বাচনের ব্যাপারে নানা গুঞ্জন থাকলেও এ ধরনের কোনো চিন্তা-ভাবনা করছেন না আওয়ামী লীগ। বাংলানিউজকে এমন ধারণাই দিয়েছেন দলটির কয়েকজন নীতিনির্ধারক।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, সংবিধানে বর্ণিত নির্ধারিত সময় অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এক বছরেরও কম সময় বাকি আছে। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী, আগামী বছরের (২০১৮) অক্টোবরের শেষ দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় গণনা শুরু হবে। এর বাইরে আগাম নির্বাচনের কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করেন না তারা। তাছাড়া আগাম নির্বাচন দেওয়ার মধ্যে বড় কোনো রাজনৈতিক সুফল পাওয়া যাবে বলেও মনে করছেন না তারা।
গত ৭ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা সরাসরি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘এমন কোনো সমস্যায় পড়িনি যে, আগাম নির্বাচন দিতে হবে। ’
বর্তমান দশম সংসদের প্রথম অধিবেশনটি বসেছিল ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। সে অনুযায়ী আগামী ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ হবে। সংবিধান অনুযায়ী এর ৯০ দিন আগে অর্থাৎ ২৯ অক্টোবর থেকে যে কোনো দিন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তবে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরকেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপযুক্ত সময় বলে মনে করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই মাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আবেগকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে বলে দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। যেটা ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছে। ওই নির্বাচনে বিপুল বিজয় নিয়ে দলটি ক্ষমতায় আসে। গত ২০১৪ সালের নির্বাচনও ডিসেম্বর মাসে করতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা এবং ওই দলটির নির্বাচন বর্জনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করতে হয়।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা আগামী নির্বাচন ডিসেম্বরে করার টার্গেট নিয়েই অগ্রসর হচ্ছেন। এই নির্বাচনের তারিখ এখনও চূড়ান্ত করা না হলেও ডিসেম্বরের শেষের দিকেই তা হতে পারে। সেক্ষেত্রে মহান বিজয় দিবসের পর একটি সুবিধাজনক তারিখ ঠিক করা হতে পারে বলে দলটির নীতিনির্ধারকরা জানান।
দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত ডিসেম্বরে নির্বাচন করার বিষয়টিই দলের মধ্যে বিভিন্নভাবে আলোচনায় এসেছে। ডিসেম্বরের শেষ দিকেই নির্বাচন করার পক্ষে আওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্রে আগামী বছর ২৭ ডিসেম্বর হয় বৃস্পতিবার। পরদিন শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। এ দিনটিতে নির্বাচন হতে পারে বলে কেউ কেউ অভিমত দিয়েছেন।
এবিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন, আগাম নির্বাচন হবে না। তাছাড়া জনগণও আগাম নির্বাচন চায় না। আমাদের সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম আমরা শেষ দিন পর্যন্ত চালিয়ে নিতে চাই। এরপর নির্বাচনে ক্ষমতায় এসে আবার উন্নয়ন করবো। নির্বাচন সংবিধান নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই হবে। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরেই এ নির্বাচন হতে পারে।
এ বিষয়ে আগামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির অপর এক সদস্য সাবেক মন্ত্রী কর্নেল(অব.) ফারুক খান বাংলানিউজকে বলেন, আগাম নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির আগে যে কোনোদিন এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। ডিসেম্বরের ২৭ তারিখ বৃহস্পতিবার পড়ছে। এই দিনটিও আমাদের পছন্দের তালিকায় আছে।
দলের কেন্দ্রীয় নেতা খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, আগাম নির্বাচন হবে না। সংবিধান নির্ধারিত সময়েই হবে। আগামী বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে তা হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭
এসকে/জেএম