বর্তমানে একদিকে শিক্ষার্থী নিপীড়নকারী ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কার, প্রশাসন কর্তৃক দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও প্রক্টরের পদত্যাগসহ কয়েক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বামপন্থিরা। অন্যদিকে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার অভিযোগ এনে বামপন্থি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে ছাত্রলীগ।
সচেতন শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ছাত্রলীগ ও নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের দেওয়া পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকার বাইরের অন্যান্য ক্যাম্পাসেও। এতে দেশের সার্বিক উচ্চশিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে সংঘাতময় পরিস্থিতির মোকাবেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কাজ শুরু করা উচিত মনে করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ছাত্র সংসদ না থাকাতে এক পক্ষ কিছু বললে অন্য পক্ষ ঝাপিয়ে পড়ছে। হল ও ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে ছাত্রদের সমর্থন লাগবে। যেটা বল প্রযোগে সম্ভব হবে না। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিনিধিত্বশীল জায়গায় চলে যাবে তখন আর সংঘাত হবে না।
প্রথমে রাস্তা অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়ে অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনের ডাক দেন তারা। আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও আন্দোলনে যোগ দেওয়া ছাত্রীদের হেনস্থা ও উত্যক্তের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ কর্মসূচির নেতৃত্বে আসে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো।
এরপর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও নিপীড়নের বিচার দাবিতে শিক্ষার্থী কর্তৃক প্রক্টরকে অবরুদ্ধকরণ ও গেট ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার বিচার দাবিতে অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এভাবেই সাত কলেজ বাতিলের দাবির আন্দোলনকে ঘিরে জটিলতা বাড়তে থাকে। আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয় মঙ্গলবারের (২৩ জানুয়ারি) উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে।
ওই দিন দুপুরে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের তিনটি গেট ভেঙে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করেন আন্দোলনকারীরা। কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হলে বিকেলে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ২০-২৫ জনের একটি দল উপাচার্যকে মুক্ত করতে এগিয়ে যায়। এ সময় উপাচার্যকে উদ্ধারে আন্দোলনরত বাম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর কয়েক দফায় হামলা চালিয়ে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সচেতন শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ৫ দফা দাবিতে মাঠে নামে ছাত্রলীগ। অন্যদিকে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা, প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা আগামী ২৯ জানুয়ারি ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
উভয় পক্ষ পরস্পর বিরোধী দাবি দেয়ায় ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্র বাংলানিউজকে বলেন, আন্দোলন মূলত শুরু করেছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের সমস্যার কারণে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো সামনে চলে আসে। এখন উভয় সংগঠনের পাল্টাপাল্টি দাবির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় সংঘাতের দিকে যাচ্ছে। গত কয়েকদিনের ঘটনা তাই প্রমাণ করে। এখন সবকিছু নির্ভর করছে প্রশাসনের ওপর।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থানে প্রগতিশীল জোটের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রগতিশীল জোটের এসব কর্মসূচিতেও হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ওপর হামলার ঘটনার কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) প্রগতিশীল ছাত্রজোটের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই মিছিলে দুই দফা হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন।
জোটের অন্যতম শরিক সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন প্রিন্স বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কর্মসূচি দিয়ে তা সঠিকভাবে পালন করব। আজকে সারাদেশে বিক্ষোভ হয়েছে। ধর্মঘটের কর্মসূচিতে যদি বাধা দেওয়া হয় তবে তার দায় ছাত্রলীগকে নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে বহিরাগত শিক্ষার্থীদের অশোভন আচরণ, আমাদের ছাত্রী বোনদের ওপর বর্বর হামলার ঘটনায় আমরা জড়িতদের বহিষ্কার দাবি করছি।
ছাত্রজোটের ধর্মঘটের বিষয়ে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিকভাবে সবার কর্মসূচি পালনের অধিকার রয়েছে। কিন্তু বহিরাগত কাউকে এনে যদি ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করা হয় তাহলে ছাত্রলীগ প্রতিহত করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক উপায়ে তাদের দাবি জানাবে। সহিংস আচরণ করবে এটা কাম্য নয়। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৮
এসকেবি/এমজেএফ