শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত স্মরণসভায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে উজ্জ্বল নক্ষত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে নিয়ে এমন কথায় বলেন বক্তারা।
তারা বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী হলেও, ক্ষমতা কিংবা টাকার মোহ তাকে ছোঁয়নি।
স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ (ইনু) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। অনুষ্ঠানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি পাঠ করেন জোটের সাবেক সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শোকসঙ্গীত ‘তুমি, নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’ পরিবেশন করেন গণসঙ্গীত শিল্পী সমন্বয় পরিষদের শিল্পীরা। এরপর সৈয়দ আশরাফের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় নেতা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগসহ অন্যান্যরা।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অবদান তুলে ধরে হাসানুল হক ইনু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার কাছে সে যুদ্ধের বিভিন্ন বিষয়ে শিখে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। এরপর রাজনীতিতে পা, আমাদের একসঙ্গে পথ চলা শুরু হয়। যারা রাজনীতি করে, তারা ফেরেশতা নন, শয়তানও নন। তারা দোষে-গুণে মানুষ। কিন্তু যারা দোষ না করে গুণে এগিয়ে থাকেন তারা মহা মানুষ, ভালো গুণের মানুষ, সবার থেকে একটু ব্যতিক্রম। সৈয়দ আশরাফ তেমনি একজন ছিলেন। তিনি ছিলেন গুণী মানুষ, সাহসী মানুষ, দক্ষ মানুষ।
তিনি বলেন, এক-এগারোর সময় যখন অনেকে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন, সৈয়দ আশরাফ বিন্দুমাত্র বিভ্রান্ত হননি। তিনি নীতিবান ছিলেন, নিষ্ঠাবান ছিলেন, আদর্শবান ছিলেন, কুশলী ছিলেন, সজ্জন ছিলেন। ক্ষমতা ও টাকার পেছনে ছোটেননি কখনো। এসব বিষয়ে তার কাছ থেকে শেখার আছে আমাদের।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, অল্প কথায় অনেক কিছু বুঝিয়ে দিতে পারার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। আমাদের দেশে রাজনীতিবিদ হয়, সংসদ সদস্য হয়, মন্ত্রী হয়। কিন্তু একজন সৈয়দ আশরাফ সহজে হয় না। ক্ষমতায় থেকেও ক্ষমতার মোহ থেকে তিনি নিজেকে সবসময় মুক্ত রেখেছেন। তার অন্তিমযাত্রায় লাখো মানুষের ঢল প্রমাণ করে, এ দেশের মানুষ সৈয়দ আশরাফের মতো লোককেই নেতা হিসেবে চায়। মানুষ সৈয়দ আশরাফের আদর্শকে লালন করতে চায়।
সৈয়দ আশরাফের রাজনৈতিক জীবনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। কিন্তু এই পদ তাকে কখনো আচ্ছন্ন করেনি। নিজেকে কিছুটা আড়ালে রেখে সুচারুভাবে দলকে পরিচালনা করেছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা ছিল প্রবাদ প্রতিম। একজন রাজনীতিকের জীবনে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু হতে পারে না। একইসঙ্গে ঈর্ষণীয় ও অনুকরণীয় এ রকম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সমকালীন সময়ে খুব একটা দেখা যায় না।
নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সৈয়দ আশরাফ ছিলেন একজন নির্লোভ মানুষ। তিনি বাংলাদেশকে ভালোবাসতেন। যে স্বপ্ন নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তিনি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করেছিলেন। তিনি নেই, তাকে সামনে রেখে আমাদের সামনের পথ চলতে হবে।
অনুষ্ঠানে জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিবো ফিরে’ কবিতা পাঠ করেন সৈয়দ হাসান ইমাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পরিচয়’ পাঠ করেন ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়, সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’ পাঠ করেন আহকাম উল্লাহ এবং রেজিনা ওয়ালী লীনা পাঠ করেন শামসুর রাহমানের ‘পান্থজন’।
অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সৈয়দ আশরাফ শুনতেন শাহ আবদুল করিমের ‘বন্দে মায়া লাগাইছে’ গানটি। স্মরণ মঞ্চে যা গেয়ে শোনান শিল্পী লাভলী দেব। শিল্পী মহিউজ্জামান চৌধুরী গেয়ে শোনান রবীন্দ্রনাথের ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে’।
গণসঙ্গীত শিল্পী সমন্বয় পরিষদের শিল্পীদের কণ্ঠে ‘আমরা সবাই বাঙালি’ গানটি গীত এবং শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় আয়োজন। এর আগে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ৬৭ বছর বয়সে গত ৩ জানুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে মারা যান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৯
এইচএমএস/আরবি/