১৫ ফেব্রুয়ারি দলের মধ্যে সংস্কারের দাবি জানিয়ে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে পদত্যাগ করেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক। তিনি দলের আমির বরাবর লিখিত পদত্যাগপত্রে বলেছেন, জামায়াত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করার জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চায়নি।
একইদিন দলের আরেকজন সিনিয়র সদস্য ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুজিবুর রহমান মনজু তার ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে দলের গঠনতন্ত্রবিরোধী বক্তব্য লেখায় পরের দিন দল তাকে বহিষ্কার করে। তারও একদিন পর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগে দল ব্যথিত ও মর্মাহত বলে বিবৃতিতে জানান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান।
এসময় তিনি বলেন, পদত্যাগ করা যেকোনো সদস্যের স্বীকৃত অধিকার। আমরা দোয়া করি তিনি যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
তিনি আরও বলেন, ব্যারিস্টার রাজ্জাকসহ আমরা দীর্ঘদিন একইসঙ্গে এই সংগঠনে কাজ করেছি। তিনি জামায়াতের একজন সিনিয়র পর্যায়ের দায়িত্বশীল ছিলেন। তার অতীতের সব অবদান আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। তার পদত্যাগে আমরা ব্যথিত ও মর্মাহত। আমরা আশা করি তার সঙ্গে আমাদের মহব্বতের সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৫ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলেও অনেক আগে থেকেই এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ জানুয়ারি দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত মোতাবেক দুই পৃষ্ঠার একটি সতর্কবার্তা দলটির শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠানো হয়।
ওই সতর্কবার্তা থেকে জানা যায়, দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু লন্ডনে অবস্থান করা দলের এই নেতা তাদের অনুরোধ রক্ষা করেননি। তিনি পদত্যাগের সিদান্তে অটল থাকেন।
এ অবস্থায় দলের পক্ষ থেকে বিষয়টি (পদত্যাগ) গোপনীয়ভাবে করার জন্য অনুরোধ করা হয়। অর্থাৎ তিনি যে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন, সেটি দলীয় ফোরামে সীমাবদ্ধ রেখে গণমাধ্যমে না জানানোর অনুরোধ করা হয়। কিন্তু ব্যারিস্টার রাজ্জাক প্রায় একমাস চিন্তাভাবনার পর ১৫ ফেব্রুয়ারি আমীর বরাবর যে পদত্যাগ পত্রটি পাঠান, সেটি গণমাধ্যমেও প্রকাশের জন্য দিয়ে দেন। ফলে জামায়াতের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়। দলের একজন শীর্ষ নেতা হয়ে দলের প্রতি তার যে আনুগত্য ছিল, তা থেকে তিনি সরে যান।
জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে বিষোদগার না করলেও গোপনে অনেকেই ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগটি মেনে নিতে পারেননি বলে জানা যায়। ফলে এই পদত্যাগ নিয়ে দলের মধ্যে দুটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে। দু’একজন তার এই পদত্যাগকে স্বাগত জানালেও অধিকাংশ নেতাকর্মী এটাকে ভালো চোখে দেখছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের এক শীর্ষ নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগ নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যে বড় কোনো প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়নি। আর তার পদত্যাগের বিষয়ে দলের প্রতিক্রিয়া সেক্রেটারি জেনারেল দিয়েছেন। এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। আমরা দলের পক্ষ থেকে যা কিছু বক্তব্য দিই, সেটা লিখিতভাবে দিয়ে থাকি।
আবদুর রাজ্জাক যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের প্রধান আইনজীবী ছিলেন। দলের সহকারী সেক্রেটারি আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি হওয়ার পাঁচদিনের মাথায় ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি দেশ ছাড়েন। রাজ্জাক যুক্তরাজ্যেরও নাগরিক। এখন তিনি সেখানেই বসবাস করছেন। একটি সূত্র জানায় দেশে ফেরার জন্যই তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। ব্যারিস্টার রাজ্জাক তার পদত্যাগপত্রে এটাও উল্লেখ করেন যে, তিনি তার আইন পেশায় ফিরতে চান।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯
এমএইচ/টিএ