তিনি বলেছেন, বাঙালি জাতি নির্যাতন আর নিপীড়ন সইতে সইতে তারা ভুলেই গিয়েছিলো তাদের অধিকারের কথা। বঙ্গবন্ধু তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন।
সোমবার (১৮ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা এসব কথা বলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অজপাড়াগাঁয়ের সেই ছোট্ট শিশুটির নাম এখন বিশ্বেজুড়ে সমাদৃত। তিনি একটি জাতিকে মুক্তি দিয়েছিলেন। যে বাংলাদেশের মানুষ একবেলা খাদ্য জোগাড় করতে পারতো না। উল্টো নির্যাতিত হতো। এ নিয়ে তাদের কোনো অভিযোগও ছিলো না। তাদের মনে ছিলো এটাই বোধহয় আল্লাহর বিধান।
‘জাতির পিতা সেই মানুষগুলোর মধ্যে ধীরে ধীরে সাহস দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মতো একটি যুদ্ধ করার মানসিকতা তৈরি করে দিয়েছিলেন। শোষণ বঞ্চনা থেকে জাতিকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন। ’
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনেও তার অনেক অবদান। কিন্তু এটা অনেকেই স্বীকার করেননি। ৪৮ (১৯৪৮) সালে ভাষার জন্য আন্দোলন করতে গিয়েই বারবার গ্রেফতার হয়েছেন তিনি, জেলে গেছেন। ৪৯ সালে গ্রেফতার হন। বায়ান্ন সালে গুলি চললো, ভাষা শহীদরা প্রাণ দিলেন। অনেকেই এ আন্দোলনকে সেখানেই থামিয়ে দেয়।
‘কিন্তু জেল থেকে বের হয়ে জাতির পিতা সেই আন্দোলন আবারও চালাতে থাকে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য আন্দোলন চালিয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাস থেকে এইসব তথ্য মুছে গিয়েছিল। ’
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানি গোয়েন্দারা ওই সময় তার (বঙ্গবন্ধু) বিরুদ্ধে যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছিল-১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর সেগুলো সংগ্রহ করি। সেখান থেকেই এসব জেনেছি। আমরা সেসব রিপোর্ট থেকে এরই মধ্যে প্রকাশ করতে শুরু করেছি।
প্রধানমন্ত্রী তার বাবা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দাদা-দাদির সম্পর্কের নানা বিষয় তুলে ধরে বলেন, স্কুলজীবন থেকেই সাধারণ মানুষের কথা ভেবেছেন, সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন। আমার দাদা-দাদি সন্তানকে যে ভালোবাসা দিয়েছেন সেই ভালোবাসার কোনো তুলনা হয় না। বঙ্গবন্ধু এমন এক মা ও বাবা পেয়েছিলেন যারা কোনো দিন তার কোনো কাজে অনুযোগ করেননি, বরং প্রতিটি কাজে উৎসাহ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা যখন বড় হয়েছি তখনও দেখেছি, আমার বাবা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, তখনও তিনি যখন মা-বাবার কাছে গেছেন একেবারে ছোট শিশু খোকা হয়ে গেছেন। মায়ের কোলে শুয়ে পড়া, মাকে আদর করা, আমার দাদি ওই বয়সেও আমার বাবাকে ভাত মাখিয়ে মুখে তুলে দিতেন। আমার বাবা সেটা খেতেন, আমরা হাসতাম, ঠাট্টা করতাম, এটা ঠিক। এই যে এত গভীর ভালোবাসা, যখন যেটা তিনি করতে চেয়েছেন কোনো দিন বাধা দেননি।
বাংলাদেশে ভোটের রাজনীতি ধ্বংসের পেছনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে দায়ী করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান এ দেশে ভোটের রাজনীতিটাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করলো। তার হ্যাঁ-না ভোট, তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সেনাপ্রধান আবার রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিয়ে সে অবস্থায় নির্বাচন করার অর্থ হলো, একদিকে সেনা আইন ভঙ্গ করা, সেনাবাহিনীর রুলস, রেগুলেশন ভঙ্গ করা অন্যদিকে সংবিধান লঙ্ঘন করা। এই যে একটা অনিয়মের যাত্রা শুরু—এই প্রক্রিয়াই চলতে থাকলো বাংলাদেশে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু লোক খুব বাহাবা দিল। জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছে। যদি সত্যিই বহুদলীয় গণতন্ত্র হয় তবে ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে সে যে একটি দল গঠন করল... আর সেই দল সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে, যে দল ক্ষমতায় থেকে ক্যান্টনমেন্টে বসে সৃষ্ট সেই দল হাঁটতে শিখল না চলতে শিখল না দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি পেয়ে গেল। এই দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি পাওয়ার অর্থ হলো জিয়াউর রহমান চেয়েছিল-সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় এসেছে তাই সংবিধান সংশোধন করে অবৈধ ক্ষমতায় আসার বৈধতা পাওয়া। ...কাজেই অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার আকাঙ্ক্ষায় এই যে নির্বাচনটাকে ধ্বংস করা, জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলার যাত্রা শুরু।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, একটি বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলে দেশটাকে যখন তিনি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন একটি অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে। তিনি যখন দেখেছেন, বারবার ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এই ষড়যন্ত্র করে দুর্ভিক্ষ ঘটানো হলো, নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে দিয়ে যখন একের পর এক নানা ধরনের সন্ত্রাসী কাজ জঙ্গিবাদ নানা কিছু সৃষ্টির চেষ্টা করা হলো তখন তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেন। সমস্ত জাতিকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করে তিনি বললেন, আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করাটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তাই দল-মত-নির্বিশেষে সবাইকে একসঙ্গে ডেকে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে তিনি নিয়ে আসলেন যেন অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের কাজ করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা ওঠে। বিরোধী দল আমাদের বাকশাল, বাকশাল বলে গালি দেয়। কিন্তু আজকে তারা যদি এটা চিন্তা করে, সেই দিন তিনি যে পদক্ষেপটা নিয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন, একটা বিপ্লবের পর যেকোনো দেশের সমাজে একটা বিবর্তন দেখা দেয়। সেই বিবর্তনের ফলে একটি অংশ ধনীক শ্রেণিতে পরিণত হয়। আবার অনেক ভালো উচ্চবিত্ত মানুষ অনেক সময় তাদের সেই ধনসম্পদ ধরে রাখতে পারে না। কাজেই এ সময়ে একটি গণতান্ত্রিক ধারাকে শক্তিশালী করা, মানুষের যে ভোটের অধিকার সেই ভোটের অধিকারকে একান্তভাবে নিশ্চিত করা প্রয়োজন, কারণ পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক ধারা ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেজন্য তিনি জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে নির্বাচনের একটি পদ্ধতি সৃষ্টি করেছিলেন যে সেখানে কেউ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে পারবে না। ব্যক্তিগতভাবে কোনো প্রচার না। সরকারিভাবে যে কয়জন প্রার্থী হবে প্রত্যেক প্রার্থীর নাম একটা পোস্টারে দিয়ে সরকারের পক্ষে থেকে প্রচার করা হবে।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৯
এমইউএম/এমএ/