শনিবার (৩০ মার্চ) সিরডাপ মিলনায়তনে ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা: ধর্মনিরপেক্ষতার সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় নেতারা এ মত দেন।
এ গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
আলোচনায় রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা যদি স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে স্বার্থকভাবে উদযাপন করতে চাই তাহলে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে কার্যকরভাবে ধর্মনিরপেক্ষ করতে হবে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ও সাংবিধানিকভাবে রাজনৈতিক, সমাজিক শক্তিকে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে একত্রিত করতে হবে। আধুনিক উন্নত রাষ্ট্র গড়তে হলে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পথে আগাতে হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় ৪ মূলনীতি বাস্তবায়নের পথে আছি। এবারের নির্বাচনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি নির্মূল এক সঙ্গে হয় না। আমরা অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে মানতে হবে। আমাদের চেয়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি কেউ বেশি করে না। শেখ হাসিনা যে রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে দেশকে এ জায়গায় নিয়ে এসেছে সেটা রক্ষা করতে হবে। সাম্প্রদায়িক শক্তি নিস্তেজ হয়ে গেছে, তবে নির্মূল বা নিঃশেষ হয়নি। এটাকে ঐক্যবব্ধভাবে নির্মূল করতে হবে।
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী না তারা সাম্প্রদায়িকতা চর্চা করে। জিয়াউর রহমানরা এটা করেছিলো। ৭৫ এর পর এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ১৪ দল গঠন করি। সাম্প্রদায়িকতাকে সংকুচিত না করা পর্যন্ত কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। আমরা তাদের ক্ষমতাচ্যুত করতে পেরেছি, কিন্তু লড়াই এখনও চলছেই। জামায়াত ও জঙ্গিবাদ যতটুকু বাকি আছে তা নির্মূল করতে হবে। জামায়াত জঙ্গিবাদকে সহযোগিতা করে বিএনপি। এ বিএনপি যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানি বলেন, হেফাজতের কাছে নতি স্বীকার করে সরকার পাঠ্যপুস্তক থেকে রবীন্দ্রনাথ তুলে দিয়েছে। বাঙালির নিজস্ব শিল্প সংস্কৃতির বিস্তার তো দূরের কথা সেটা সংকুচিত হচ্ছে। বলা হচ্ছে জঙ্গিবাদ দমন করা হয়েছে। কিন্তু সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে জঙ্গিবাদ ঢুকে পড়ছে। জামায়াত ঢুকে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। জামায়াত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। ধর্মনিরপেক্ষতার যে সংকট আছে সেই সংকট রাষ্ট্র তৈরি করছে। এটা দূর করতে হলে জনগণের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে, ওয়াজের নামে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে উস্কানি দিচ্ছে তাদের ব্যাপারে রাষ্ট্র উদ্বিগ্ন নয়। তাই ধর্মনিরপেক্ষতার সংকট থেকে বের হওয়া অনেক কঠিন। ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে এ সংকটগুলো দূর করতে হবে। ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, রাষ্ট্র থেকে সমাজ থেকে সাম্প্রদায়িকতা দূর করতে হলে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সব রাজনৈতিক দলকে এর বিরুদ্ধে এক করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে বিভেদ রয়েছে সেটা দূর করতে হবে। সরকারের ও বিরোধী পক্ষে উভয় জায়গায়ই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি থাকতে হবে।
জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, বিশ্বে ধর্মীয় উগ্রবাদ সৃষ্টি হয়েছে মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর। যারা এখন এ ধর্মীয় উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তারাই এক সময় ধর্মীয় উগ্রবাদ সৃষ্টি করেছিলো সমাজতন্ত্রের বিরোধীতা করার জন্য। ধর্ম নিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে সংস্কৃতি চর্চা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যাদের সঙ্গে জোট করেছি তারা ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ভোটের রাজনীতির কারণে এ আপস করতে হয়েছে।
আলোচনা সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। আলোচনায় আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা কাজল দেবনাথ, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেন, বাসদের নেতা রেজাউর রশিদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৯
এসকে/এসএইচ