পাশাপাশি মতিনকে সহযোগিতা করার অভিযোগে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আলী ও বর্তমান পৌরসভার মেয়র এ বি এম আনিসুজ্জামানসহ ৭ নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগ।
একই সঙ্গে দল বিরোধী ষড়যন্ত্র থেকে সরে না এলে স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিও ভেঙে দেয়া’র কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
আসন্ন এই নির্বাচনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী ইকবাল হোসেনকে বিজয়ী করতে আয়োজিত এক কর্মী সমাবেশে রোববার (০৭ এপ্রিল) রাতে এক সভায় এমনটি জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল।
জানা যায়, ত্রিশাল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পান উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইকবাল হোসেন।
তার সঙ্গে মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় হেরে যান জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন সরকার।
পরে ইকবালকে ঠেকাতে আব্দুল মতিন সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাকে ভোটে দাঁড় করান স্থানীয় আওয়ামী লীগের গুটিকয়েক প্রভাবশালী নেতা।
মূলত ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানীর সঙ্গে ইকবালের ঘনিষ্ঠতার কারণে ক্ষুব্ধ হয়েই ওইসব নেতারা মতিন সরকারের হয়ে কলকাঠি নাড়ছেন।
কিন্তু দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ইকবালের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও বেশ কয়েক দফায় ইকবালের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন।
পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের রায়ে ভোটের মাত্র দুই দিন আগে গত ২৮ মার্চ নির্বাচন স্থগিত করে দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
মূলত মতিন সরকার জামিনদার হয়েও ছেলের ঋণ খেলাপির তথ্য গোপন করায় উচ্চ আদালতে এই রিট করেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। পরে মতিন সরকার চেম্বার জজ আদালতে আপিল করলে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল মতিন সরকারকে বৈধ ঘোষণা করে।
ফলে নির্বাচনে অংশ নিতে তার আর কোনো বাঁধা না থাকায় আবারো জমে উঠেছে ভোটের প্রচারণা।
এমন অবস্থায় রোববার (০৭ এপ্রিল) রাতে ত্রিশালে বিশাল শোডাউন করেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী।
রাতে স্থানীয় উপজেলার নজরুল ডিগ্রী কলেজ মাঠে আয়োজিত কর্মী সমাবেশে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম বলেছেন, আব্দুল মতিন সরকার অতীতে বহুবার দলের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছেন।
‘‘ওয়ান ইলেভেনে তিনি ফেরদৌস আহম্মেদ কোরায়শীর পিডিবিতে যোগ দিয়েছিলেন। ওই সময় তার নামের শেষে যোগ হয়েছিলো ‘আব্দুল মতিন কোরায়শী টাইটেল। ’ ’
মতিন সরকারের বারবার দল বদলানোর কড়া সমালোচনা করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, ‘মতিন সরকার ছাত্রলীগ থেকে নজরুল কলেজের ভিপি হয়েছিলেন। এরপর বিএনপি, জাতীয় পার্টি আবার আওয়ামী লীগ করেছেন। এরপর আবার বিরোধিতা করেছেন আওয়ামী লীগের। ’
‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে যখন কারাগারে ভরে সামরিক শাসন চালিয়ে দেশকে ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিলো তখন মতিন সরকার রাজনীতির বিশ্বাস ঘাতক কোরায়শীর সাথে হাত মিলিয়েছিলেন। আজকে আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করছেন। এটা কোনো নতুন বিষয় নয়। ’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও তার পক্ষে অবস্থানকারী নেতাদের প্রথমে শোকজ ও পরবর্তীতে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ারও ঘোষণা দেন।
বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আলী, পৌরসভার মেয়র এবিএম আনিসুজ্জামান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিয়াউল হোসেন সবুজ, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শোভা মিয়া আকন্দ, ইউপি চেয়ারম্যান উজ্জ্বল, ভুট্টো ও আশরাফের বিরুদ্ধে।
দ্রুত সময়ের মধ্যে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান থেকে সরে না দাঁড়ালে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৯
এমএএএম/এমএ