ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

প্রবীণদের জন্য ভাবতেই হবে, প্রধানমন্ত্রীকে বি. চৌধুরী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৭ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৯
প্রবীণদের জন্য ভাবতেই হবে, প্রধানমন্ত্রীকে বি. চৌধুরী

ঢাকা:  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

শনিবার (২৯ জুন) বিকেলে গণমাধ্যমেও তার ওই চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়। চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
 
‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
 
আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।


 
আশা করি কুশলে আছেন। আপনার সঙ্গে মুখোমুখি কথা হয়নি বলেই এই খোলা চিঠি। কথাগুলো কয়েকদিন আগেও বলেছি। দুঃখের বিষয় না মুদ্রণে, না টিভি চ্যানেলে এটা প্রধান্য পায়। অথচ সামাজিক সচেতন দৃষ্টিকোণ থেকে কথাগুলো খুব জরুরি ছিল।

ভারতে এক সমীক্ষায় তারা বলেছেন, ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে তাদের জনসংখ্যা শতকরা ১৯ ভাগ। যেহেতু ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কিছু বেশি সেহেতু বাংলাদেশের  ষাটোর্ধ্ব জনসংখ্যা ২০ ভাগ হওয়া স্বাভাবিক। অর্থাৎ আমাদের দেশের ৫ ভাগের ১ ভাগ মানুষ জ্যেষ্ঠ নাগরিক। সমাজ এবং সরকারকে এদের জন্য ভাবতেই হবে।
 
তাদের অবদান
 

প্রবীণদের অবদান সমাজ ও রাষ্ট্রে কতটা তা আমাদের সিরিয়াসলি ভাবতে হবে। আসলে না রাষ্ট্র, না সমাজ এ ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারে। পেছন ফিরে তাকালে দেখবেন এরা একটি পরিবার গড়েছেন অন্তত ২০ থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত। যখন তাদের বয়স ছিল, ভালো স্বাস্থ্য ছিল, তাদের চোখে স্বপ্ন ছিল, সন্তান-সন্ততি গড়ে তুলেছেন, প্রাণপণ পরিশ্রম করেছেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন।
 
তাদের সমস্যা
 
মানুষ যেকোনো সময় রোগাক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু ৬০ পার হলেই তাদের কতগুলো মারাত্বক ব্যাধি আক্রমণ করতে পারে। যেমন- ডায়াবেটিসের বিভিন্ন জটিলতা, হৃদরোগ, মস্তিষ্ক, কিডনি ও লিভারের জটিলতা, নার্ভের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, অর্ধাঙ্গ রোগ।  

এগুলো বয়স্কদের মধ্যে কম বয়সের তুলনায় ১৫/২০ গুণ বেশি। অথচ তাদের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য। একদিকে ওষুধের দাম অন্যদিকে পথ্যের দুর্মূল্য এবং মাঝে মাঝে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং বারবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়ার খরচ, সবমিলে বৃদ্ধদের চরম দুরাবস্থা।
 
মানসিক সমস্যা
 
বৃদ্ধদের প্রায়ই একাকীত্বের অভিশাপে ভূগতে হয়। প্রায়ই জীবনসঙ্গী একজন আগেই চলে যান এবং ছেলে-মেয়ে তাদের ভবিষ্যতের অনুসন্ধানে দেশে বা বিদেশে কাজ করতে বাধ্য হয়। একাকীত্বের সঙ্গে যুক্ত হয় বিষণ্নতা, যার জন্য চিকিৎসা দরকার।  

এই সমস্যাগুলোর সমাধান মোটেই সহজ নয়। কিন্তু উন্নতদেশগুলোতে সমাজ ও রাষ্ট্র এই দায়িত্ব নেয়। আমরা তো উন্নত দেশের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি, তাহলে আমরা এ দায়িত্ব নেব না কেনো?
 
ব্যক্তিগত আয়করের ব্যাপারে ভারতের ভাবনা
 
ভারতে ব্যক্তিগত আয়করের ব্যাপারে ৩টি শ্রেণী বিভাগ করা হয়েছে-
 
এক) উপার্জনশীল তরুণ থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত। তাদের এক ধরনের কর দিতে হয়, যেটা রাষ্ট্র নির্ধারণ করে। এরা প্রায়ই রোগমুক্ত, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং তাদের কর্মক্ষমতা এবং উপার্জন  সবচাইতে বেশি। সুতরাং তাদের কর বেশি দিতে হবে।
 
দুই) যাদের বয়স ৬০ থেকে ৮০, এদের বলা হয় সিনিয়র সিটিজেন বা জ্যেষ্ঠ নাগরিক। তাদের কর্মক্ষমতা কমে যায়। প্রায়ই একাকী, নিসঙ্গ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, দুর্বল অথচ তারাই সমাজে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছেন কিছুদিন আগে পর্যন্ত। তখন তাদের বাড়তি খরচ, ওষুধ, পথ্য, ডাক্তারের ভিজিট এবং হাসপাতালে ভর্তি হলে তার জন্য বিরাট খরচ। এ সব বাস্তবতা বিবেচনা করে ভারত সরকার তাদের অনেক কর মওকুফ করেছেন।
 
তিন) ৮০ বছর বয়সের উর্ধ্বে: তাদের তৃতীয় গ্রুপে ধরা হয়েছে। যাদের বলা হয় সুপার সিনিয়র সিটিজেন বা অতি জ্যেষ্ঠ নাগরিক। এদের সমস্যা আরো বেশি, এরা আরো রুগ্ন, আরো বিষণ্ন। অথচ তাদের অনেককেই জীবন সংগ্রামের জন্য কাজ করতে হয়। এই বিবেচনায় ভারত সরকার তাদের সবচাইতে বেশি কর অবকাশ দিয়েছেন।
 
আমরা কি করতে পারি? 
অন্য দেশের যা কিছু ভালো তা অনুসরণ করতে কোনো লজ্জা নেই। ভালো জিনিসকেই তো অনুসরণ করতে হয়। জ্যেষ্ঠ নাগরিক এবং অতি জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের করারোপের ব্যাপারে সামাজিক সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে ভারত সরকার যে সহানুভূতিশীল এবং দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নিয়েছে, আমাদের বাজেটে যদি তার প্রতিফলন ঘটানো যায়, তাহলে সেটা হবে সত্যিকারের সমাজবান্ধব ও দায়িত্বশীলতার পরিচয়।  

বিশেষ করে জ্যেষ্ঠ ও অতি জ্যেষ্ঠ পেশাদার নাগরিকদের কথা আমাদের স্মরণ রাখা উচিৎ। এই ক্যাটাগরির শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনজ্ঞ, শিল্পী, প্রকৌশলীসহ পেশাজীবীদের কথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে। যৌবনে এবং পরবর্র্তী পর্যায়ে দিনের পর দিন সমাজ ও রাষ্ট্রকে তারা যা দিয়েছেন জীবন হেমন্তে তার প্রতিদান কি তারা আশা করতে পারেন না? জীবনের পড়ন্ত বেলায় সরকার তাদের বাকি জীবনটাকে সহজ ও সুন্দর করার জন্য জাতীয় বাজেটে শতকরা ২০ জন মানুষের স্বপক্ষে একটা নতুন ধরণের অবস্থান নিতে পারেন না, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী?’’
 
বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৯
এমএইচ/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।