মঞ্জু ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জামায়াত থেকে বহিষ্কৃত নেতা। তিনি ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ নামে একটি দল গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
জানা গেছে, পদত্যাগের আগে দীর্ঘদিন থেকে সোলায়মান চৌধুরী জামায়াতের বিভিন্ন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে আসছিলেন।
সূত্র জানায়, জামায়াত থেকে বহিষ্কৃত নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জু গত এক বছর ধরে নতুন একটি দল গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জামায়াতের নিচের সারির অনেক নেতাই সেই দলে এরইমধ্যে যোগ দিয়েছেন। সোলায়মান চৌধুরীও দলটিতে যোগ দিতে পারেন।
জামায়াত নেতারা অবশ্য বলছেন, দল থেকে দু/একজন চলে গেলে তাতে দলের কোনো ক্ষতি হয় না। জামায়াতের নেতারা নিজের স্বার্থে কোনো কিছু করেন না। যারা তা করেন তারাই দল থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন।
জানা গেছে, সোলায়মান চৌধুরী অবসরের পর প্রথমে বিএনপিপন্থি পেশাজীবী সংগঠনে যোগ দেন। পরে চলে যান জামায়াত ঘরানার পেশাজীবী পরিষদে।
দলের ভাবমূর্তি বাড়ানোর জন্য ২০০৮ সালে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী একক ক্ষমতাবলে তাকে প্রথম মজলিশে শুরার সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেন। কিন্তু তিনি শুরার বৈঠকে অংশ নিতেন না। তাছাড়া দলের কাজেও তেমন সক্রিয় ছিলেন না। তবুও জামায়াত তাকে প্রবীণ কল্যাণ সংস্থা, জাতীয় পেশাজীবী ফোরাম এবং ইসলামিক এইডের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়। এসব নিয়েও দলের মধ্যে প্রতিক্রিয়া ছিল।
গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রথমে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। না পেয়ে জামায়াত থেকে চান। তবে কোনো দল থেকেই তিনি মনোনয়ন পাননি। যদিও কুমিল্লার লাকসাম থেকে জামায়াত তাকে মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছিল।
সূত্র জানায়, সোলায়মান চৌধুরী রাজনীতিতে জড়ালেও তেমন সক্রিয় ছিলেন না। তিনি নিজস্ব ব্যবসা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। গত ৩ ডিসেম্বর ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি সুধী সমাবেশের আয়োজন করে। তাতে তিনি অংশ নেন। এই খবর জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতাদের কানে যায়। গত ৫ ডিসেম্বর জামায়াতের নতুন আমির ডা. শফিকুর রহমান সোলায়মান চৌধুরীকে ডেকে উত্তরার একটি বাসায় নিয়ে যান। সেখানে বসে তারা দীর্ঘ সময় বৈঠক করেন।
এরপরও গত ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ দলের একটি আঞ্চলিক কর্মশালায় যোগ দেন সোলায়মান চৌধুরী। এই ঘটনার পর তোলপাড় শুরু হয় জামায়াত-শিবির মহলে। তার ওপর দলের হাই কমান্ড থেকে তীব্র চাপ আসতে থাকে। গত দুইদিন জামায়াতের সিনিয়র নেতারা তার সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। জন আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেওয়ার অনুরোধ জানান তারা। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।
সোলায়মান চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, তিনি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন।
‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ দলটিতে যোগ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা এখনো কোনো রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠেনি। তাদের কর্মকাণ্ড দেখছি। পরে সিদ্ধান্ত নেব। ’
‘জন আকাঙ্খার বাংলাদেশ’-এর প্রধান সমন্বয়ক মজিবুর রহমান মনজু বাংলানিউজকে বলেন, ‘সোলায়মান চৌধুরী সরকারের সাবেক সফল আমলা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে কাজ করার অসাধারণ যোগ্যতা আছে তার। আমরা তার পরামর্শ ও উপদেশ নিচ্ছি। দল গঠনের পর তাকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহবান জানাবো। ’
জামায়াতের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘সোলায়মান চৌধুরীর পদত্যাগপত্র পেয়েছেন আমিরে জামায়াত। তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ব্যক্তিগত কারণে দলের (রোকন) সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন সোলায়মান চৌধুরী। আমরা উনার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ উনাকে সুস্থ রাখুক। ’
সোলায়মান চৌধুরী ১৯৭৯ সালে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। ফেনীর জেলা প্রশাসক থাকা অবস্থায় জয়নাল হাজারীর বিরুদ্ধে সাহসী অভিযান চালিয়ে ব্যাপক আলোচিত হন। এছাড়া কুড়িগ্রামে জেলা প্রশাসক থাকার সময় তিনি গরীব ও সাধারণ মানুষের ডিসি হিসেবে নাম করেন।
সচিব হিসেবেও সোলায়মান চৌধুরী তিনি ছিলেন আলোচিত। সংস্থাপন সচিব, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সচিব, পাটকল সংস্থার চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম ওয়াসা চেয়ারম্যান, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রপতির সচিবসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তিনি পালন করেন। সর্বশেষ রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ থেকে তিনি অবসরে যান।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৯
এমএইচ/এজে