তিনি নোয়াখালী-৪ (সদর-সূবর্ণচর) আসনে তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সাধারণ সম্পাদক।
একরামুল করিম চৌধুরী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। বাবা হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ছিলেন রাজনৈতিক সংগঠকও। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আবদুল মালেক উকিলদের সঙ্গে রাজনীতি করা মানুষ তিনি। নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের মানুষ এখানো যাকে ‘দানবীর হাজী ইদ্রিস’ বলে স্মরণ করেন।
একরামুল করিম চৌধুরী যা বলেন, তাই করেন। মানে নগদ কথা বলেন, নগদে কাজ করে দেখিয়ে দেন। যে যাই বলুক না কেন, তিনি বাকির খাতায় কোনো কাজ বা কথা ফেলে রাখেন না। এজন্য আমজনতা তাকে ভালোবেসে ‘নগদ চৌধুরী’ বলেও ডাকেন। চলেন সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে, অন্য মন্ত্রী এমপিরা যেখানে নির্দিষ্ট সময়ের কয়েক ঘণ্টা পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন, সেখানে তিনি ঘড়ির কাঁটা মেনে হাজির হন।
এমন অনন্য চলন, স্পষ্টবাদীতা, ভালোকে ভালো বলে পুরষ্কৃত করা, খারাপকে খারাপ বলে তিরষ্কার করার সৎ সাহস ধারণ করা, নিত্য গণমানুষের জন্য কল্যাণমুখী রাজনীতির চর্চা করা, নগদ সিদ্ধান্ত, নগদে সাফল্যে আজ তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনেও বেশ আলোচিত একজন। বিশেষ করে আওয়ামী রাজনীতিতে প্রতিবাদে সরব ভিন্ন একজন হয়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন।
তিনি বর্তমানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েও করোনাকালীন দুযোর্গ মুহূর্তে স্বাস্থ্য বিভাগের নানা অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সম্প্রতি তিনি ফেসবুক লাইভে এসে স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বয়হীন কাজের বিষয়ে বলতে গিয়ে এটাকে একটা ‘আজগুবি’ বিভাগ বলে সমালোচনা করেন। সর্বশেষ ২২ জুন দুপুরে এক ফেসবুক লাইভে করোনার কিট বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের মিঠু সিন্ডিকেটের কথা বলে স্বাস্থ্য বিভাগকে ‘মহাআজগুবি বিভাগ’ বলে সারা দেশব্যাপী আলোচনায় উঠে আসেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে ভাইরাল হয়ে পড়েন।
এই যে এতো কথা, এতো বিশেষণ, এতো আলোচনা, এতো সাফল্য। এগুলো তো একজন মানুষের জীবনে একদিনে অর্জিত হয় না। বিশেষ করে নিত্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা মুখর রাজনীতির মাঠে। যেখানে পক্ষ-প্রতিপক্ষ দুইপক্ষেরই আতশ কাচের নিচে থাকতে হয় সৎ সাহসী রাজনীতিবিদকে। এখানেই একজন একরামুল করিম চৌধুরী ব্যতিক্রম। তিনি রাজনীতিতে এসেছেন গণমানুষের পাশে থাকতে, তাদের সুখ-দুঃখের অংশীদার হতে।
এক সময় রাজনৈতিকভাবে নোয়াখালীকে মানুষ চিনতো বিএনপির ঘাঁটি বলে। বিশেষ করে নোয়াখালী সদর আসনে জাতীয় নেতা আবদুল মালেক উকিলের পর ৭৫ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ থেকে কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি। জেলার অন্য সংসদীয় আসনগুলোতেও আওয়ামী বিরোধীদের পাল্লাই ভারী থাকতো। সেই ধারাকে পুরোপুরি আমূল পাল্টে দিলেন একজন একরামুল করিম চৌধুরী। এখন নোয়াখালী আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলেই পরিচিতি লাভ করেছে। জেলার ৬টি সংসদীয় আসনের সব কয়টি আসন এখন আওয়ামী লীগের দখলে।
তৃলমূলের রাজনীতিতে তিনি কতোটা জনপ্রিয়, তা নোয়াখালীর গ্রামগঞ্জে ঘুরে এলে বোঝা যায়। আপনি আমি ঘুরে আসার আগেই তিনি তৃণমূলে ঘুরে ঘুরে জনপ্রিয়তা ও সাধারণ মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেছেন। আগের দিনে খলিফা, রাজা, বাদশাহরা রাতের অন্ধকারে প্রজাদের অভাব-অনটন, দুঃখ-দুর্দশা দেখতে বের হতেন। এ যুগে একরামুল করিম চৌধুরী একজন সংসদ সদস্য হয়েও কোনো প্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়ে একা মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়ে যান গ্রামের পথে পথে। খোঁজ খবর নেন সাধারণ মানুষ, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।
রাজনীতিতে একরামুল করিম চৌধুরী হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসা কোনো অতিথি পাখি না। তিনি সময় নিয়ে, উদ্দেশ্য নিয়ে, লক্ষ্য ঠিক করে পরিকল্পনা করে গণমানুষের রাজনীতি করতে এসেছেন। তিনি ব্যবসায়িক পরিবারের সন্তান। অর্থ বিত্তে পূর্ব থেকেই সমৃদ্ধ। বেছে নিতে পারতেন আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাসের জীবন। কিন্তু বাবার মতো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করা শেখ হাসিনার কর্মী হয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার পদচারণা শুরু হয়। পরবর্তীতে ওবায়দুল কাদেরকে অভিভাবক মেনে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
২০০১ সালে একরামুল করিম চৌধুরী তখনকার জেলা আওয়ামী লীগের একটি সম্পাদকীয় পদে ছিলেন। তবুও নীবরে নিভৃতে তিনি মানবতার সেবায় মানুষের পাশে ছিলেন। সবসময় চাইতেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে, পরিকল্পনা করে সাধারণ জনগণের জন্য আরও বড় পরিসরে কিছু করার। সেই মানসে তিনি তখন দল থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন চান। সেই সময় অভিজ্ঞতা বিবেচনায় তিনি দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে অভিমানী হয়ে ওঠেন। নিজ জন্মস্থান কবিরহাট নোয়াখালী-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। এই মান-অভিমানে ভিআইপি আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়ে।
পরবর্তী সময়ে তিনি অভিমান ভুলে দলের স্বার্থে, দলের নিবেদিত কর্মী হিসেবে আবারো আওয়ামী লীগের ছায়াতলে নিজেকে উৎসর্গ করেন। দলও তার এমন নিবেদনে ২০০৪ সালে তাকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দেওয়া হয়। সেই থেকে নোয়াখালীকে তিনি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি করার মিশন নিয়ে মাঠে নামেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে সরাসরি সম্পর্কের সেতুবন্ধন স্থাপন করেন।
এক-এগারোর কঠিন সময়ে যখন অনেক নেতা আত্মগোপনে চলে যান। তখনও একরামুল করিম চৌধুরী মাঠে ছিলেন। অত্যাচার নির্যাতনের শিকার বঞ্চিত নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। তাদের উৎসাহ দিয়েছেন রাজনৈতিক একটি পরিবর্তনের জন্য। সেই পরিবর্তন এলো ২০০৮ সালে এবং সেই পরিবর্তনের অংশীদার হলেন তিনি। দল তার নেতৃত্বের দক্ষতা ও কাজের মূল্যায়নে সংসদ সদস্য হিসেবে জেলা সদর আসনে তাকে মনোনয়ন দেয়। তিনি তখনকার টানা চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহাজাহানকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে বিজয় লাভ করে নোয়াখালীর রাজনীতির অঙ্গনে নতুন ধারার সৃষ্টি করেন।
একরামুল করিম চৌধুরী সবসময় চমক দিতে পছন্দ করেন। আয়োজনের বিশালত্ব দিয়ে মানুষকে চমকে দিতে ভালোবাসেন। মানুষের মধ্যে চমক জাগানিয়া অনুভূতি তাকে আড়োলিত করে। এজন্য তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার প্রথম বছরেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বাষির্কী ১৫ আগস্টে ১০০টির অধিক গরু দিয়ে দলমত নির্বিশেষে অর্ধলক্ষাধিক লোকের জন্য কাঙালি ভোজের আয়োজন করেন। মানুষ মাইজদীতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিনভর সেই আয়োজনে অংশ নেয়। সেই শুরু প্রতিবছরই চলে এমন আয়োজন। সর্বশেষ গত ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে পুরো জেলাব্যাপী ২১০টি গরু দিয়ে কাঙালি ভোজের আয়োজন করেন।
১৯৯৬-২০১১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিলো। নোয়াখালী সদর আসনে আওয়ামী লীগের এমপি ছিলো না। বলিষ্ঠ নেতৃত্বের একটা হাহাকার ছিলো। তখন দলের কিছু বিপথগামী নেতাকর্মী সন্ত্রাসী কার্যকলাপের হানাহানি, চাঁদাবাজিতে মেতে ওঠে। এতে সেই সময় শান্তির জনপদ নোয়াখালী অশান্ত ও অস্থির হয়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে একরামুল করিম চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, আওয়ামী লীগও পুনরায় সরকার গঠন করে। একরামুল করিম চৌধুরী তার প্রথম লক্ষ্য নির্ধারণ করেন সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত নোয়াখালী গড়ার। অদ্যাবধি গত একযুগেরও অধিক সময় বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া নোয়াখালীতে দৃশ্যামান কোনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা চাঁদাবাজির ঘটনা নেই।
নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়কে একটি আধুনিক কমপ্লেক্স ভবন হিসেবে গড়ে তুলেছেন একরামুল করিম চৌধুরী। এখানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের সকলের জন্য আলাদা আলাদা বসার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি নোয়াখালী অবস্থানকালে এই কার্যালয়ে বসে প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময় বিভিন্ন শ্রেণীপেশার সর্বস্তরের মানুষের সমস্যার কথা শোনেন। সমাধানরে চেষ্টা করেন।
একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের একজন সৈনিক। জননেত্রী সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার একজন কর্মী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আমার রাজনৈতিক অভিভাবক। তার পরামর্শে আমি নোয়াখালীকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আধুনিক একটি জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, মুখের কথা নয়, আমি প্রমাণ দিতে চাই কাজে। আর এটা বিশ্বাস করতে হলে, এই পরিবর্তনের চমক দেখতে হলে তাদের সাথে কথা বলুন, যারা গত এক দশক বা এক যুগ পর বিদেশ থেকে নিজ জেলা নোয়াখালীতে এসেছেন। তাদের চোখের দিকে তাকালেই আপনি বুঝতে পারবেন, উন্নয়নের ধারায় নোয়াখালীর পরিবর্তন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চল্লিশ বছরে নোয়াখালীর উন্নয়নে যে কাজ হয়েছে, আমার সময়ে আমি মাত্র দশ বছরে তার থেকে দশগুণ বেশি উন্নয়ন কাজ করেছি।
একরামুল করিম চৌধুরী আরো বলেন, আমি আমার নেতা ওবায়দুল কাদেরসহ নোয়াখালীর উন্নয়নের জন্য বড় বড় প্রকল্প নিয়ে এসেছি। নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনী চৌরাস্তা থেকে জেলা শহর মাইজদীর সোনাপুর পর্যন্ত চারলেন সড়ক নির্মাণাধীন। নোয়াখালীর সোনাপুর জিরোপয়েন্ট থেকে চট্টগ্রামের জোরালগঞ্জ সড়ক উদ্বোধনের অপেক্ষায়। বেগমগগঞ্জ চৌরাস্তা থেকে লাকসাম হয়ে কুমিল্লার বিশ্বরোড পর্যন্ত ফোর লেন সড়ক নির্মাণাধীন। ফেনী মহিপাল থেকে নোয়াখালী হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত ফোর লেন সড়ক অনুমোদন। নোয়াখালীর সূবর্ণচরে স্পেশাল ইকোনমিক জোন তৈরির অনুমোদন, যা ইতোমধ্যে বাস্তবায়নের কাজ চলছে। নোয়াখালীর দুঃখ নোয়াখালী খালসহ জলাবদ্ধতা নিরসনে নোয়াখালীতে বড় আকারের খাল খনন ও সংস্কারের কাজ চলছে। একটি বিমানবন্দর অনুমোদনে কাজ চলছে। এগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়ে গেলে নোয়াখালী অন্য এক উচ্চতায় অধিষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
একরামুল করিম চৌধুরী শেষে বলেন, আমার লক্ষ্য আরো লম্বা, আমার স্বপ্ন আরো বড়, বিস্তৃত। আমি শুধু নোয়াখালী নয়, আমি সারাদেশের মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই। আমি নৌকার একজন দক্ষ মাঝি হয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে, সমৃদ্ধিও গর্বিত অংশীদার হতে চাই। আমার নেত্রী আমাকে সেই সুযোগ দিলে আজীবন সেই নৌকাই হবে আমার বাহন।
নোয়াখালী সদর, সূবর্ণচর ও কবিরহাট উপজেলার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সংগঠনসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২০
নিউজ ডেস্ক