ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ভাস্কর্য সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার জ্ঞান আমার নেই: ইবরাহিম

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০২০
ভাস্কর্য সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার জ্ঞান আমার নেই: ইবরাহিম

ঢাকা: ইসলামের দৃষ্টিতে ভাস্কর্য সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার মতো জ্ঞান নেই বলে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চান না ২০ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক।

রাজনীতির মাঠে চলমান ইস্যু ভাস্কর্য সম্পর্কে মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভাস্কর্য নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নাই, কারণ এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার মতো জ্ঞান আমার নাই।

আমরা শান্তি চাই, আমরা চাই না কোনো পক্ষই কট্টর অবস্থান নিক। ”

মহাখালী ডিওএইচএসে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এ কথা বলেন।

জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে  চলমান ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে কোনো বক্তব্য আসছে না কেন?

এমন প্রশ্নের জবাবে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “আমি এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করছি না। কারণ আমি এ প্রসঙ্গে যথেষ্ঠ জ্ঞানী না। আমি শুধু আবেদন করতে পারি, দেশে শান্তিশৃঙ্খলা প্রয়োজন। দ্বীনি মূল্যবোধকে সম্মান করা প্রয়োজন। মানুষের অনুভূতিকে সম্মান করা প্রয়োজন। বিভিন্ন কারণে মানুষ ব্যথিত হয়। হঠাৎ করে একটা টেলিভিশনের আলোচনায় দেখলাম, একজন সরকারপন্থী আলেম বলছেন, কাবা শরিফও একটা স্ট্যাচু। এজন্য আমি কী বলতে কী বলবো বুঝতে পারছিলাম না। এর থেকে বিরত থাকাই ভালো। আমি তার কথাটা পছন্দ করিনি। আওয়ামী লীগ এবং ওলামা লীগের দ্বীনি ব্যাখ্যার সঙ্গে আমি একমত নাও হতে পারি। এজন্য কিছু বলছি না। ”

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে জেনারেল ইবরাহিম বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা ভীষণ কষ্টকর। কারণ আমরা সাধারণ মানুষ সরল পথে চলার রাজনৈতিক কর্মী। কিন্তু সরকারে যারা আছেন তারা অসাধারণ মানুষ, বক্র পথে চলার কর্মী। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করার জন্য এই মুহূর্তে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। কারণ হচ্ছে তাদের পেছনের শক্তি, সীমান্তের এপারে, সীমান্তের ওপারে। তারা আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাংলাদেশের জনগণ প্রচণ্ড রকমের কষ্টে আছে। দৃশ্যমান যত কর্মকাণ্ড, এগুলো হচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড-ভৌত কাঠামো উন্নয়নের। এটা দিয়ে মানুষকে বুঝ দিচ্ছে যে দেশ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। আসলে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে না। ”

“এর জন্যে রাজনৈতিক বিরোধীদল যারা, তাদের একমাত্র করণীয়, চরমভাবে কামনীয় একতা। একতাবদ্ধভাবে সরকারের বিরুদ্ধে যদি কোনো কর্মকাণ্ড নিতে পারি, তাহলে মানুষকেও বাঁচানো যাবে, দেশটাকেও বাঁচানো যাবে। ”

সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, “দেশের দুর্নীতি এমন একটা পর্যায়ে গিয়েছে, যেটা সাধারণ ভাষায় বর্ণনা করা অসম্ভব। দুর্নীতি কে করছে না এটাই হলো প্রশ্ন। কে করছে সেটা আর প্রশ্ন নয়। দুর্নীতিতে কত হাজার কোটি গিয়েছে সেটা প্রশ্ন নয়, কয় হাজার কোটি যেতে বাকি আছে সেটাই প্রশ্ন। আমি দেশবাসীর কাছে আবেদন করবো, যারা রাজনীতি মনা তারাও যেন যার যার অবস্থান থেকে বাংলাদেশকে বাঁচানোর এই প্রক্রিয়ায় শামিল হন। ”

২০ দলীয় জোটের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “২০ দলীয় জোট এখন সাংগঠনিকভাবে দুর্বল অবস্থায় আছে। কারণ প্রধান শরিক বিএনপি এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি যে উনারা জোটকে নিয়ে কতটুকু আগাবেন নাকি আগাবেন না। আমাদের অনুমান বলছে, উনাদের মধ্যে একটা প্রশ্ন জেগেছে যে উনারা জোট নিয়ে রাজনীতি করবেন না কি একলা করবেন। কল্যাণ পার্টির মতামত হচ্ছে, দশে মিলি করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ। আমরা একতাবদ্ধ কাজ করতে পছন্দ করি। এটা ভালো ফলাফল দেয়। কিন্তু উনারা যতক্ষণে পুনরায় সক্রিয় না হচ্ছেন ততক্ষণ আমরাতো কিছু বলতে পারছি না। এরকমভাবে চলতে থাকলে হয়তোবা অন্যকেউ আহবান করবেন আসুন আমরা আলাদা জোট করি। তবে আমাদের প্রধান পছন্দ, জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রধান শক্তি বিএনপি। ”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে জোট নেতাদের কোনো রকম যোগাযোগ আছে কি না জানতে চাইলে জেনারেল ইবরাহিম বলেন, “শরিক দলের মধ্যে অন্তত আমার সঙ্গে নাই এটুকু বলতে পারি। বাকিদের কথা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। ”  

উপ-নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে প্রার্থী দিচ্ছে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “আমি কোনো মন্তব্য করবো না। কারণ ওনাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন পথ চলেছি, ভবিষ্যতেও চলার সম্ভাবনা আছে। আমরা কোনো মতেই তাদের নিরুৎসাহিত করতে চাই না। আমরা বরং যেখানে উৎসাহের কমতি আছে, সেখানে উৎসাহিত করতে চাই। ”

এখনও তাহলে জোটবদ্ধ রাজনীতি করার ব্যাপারে আশাবাদী? জবাবে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে জোটবদ্ধ রাজনীতিটা গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি, মানুষ পছন্দ করে। এখন জোট কোনটা টিকবে, কোনটা টিকবে না, নাকি নতুন হবে, এটিই ভবিষ্যতে আলোচ্য বিষয় হতে পারে। ”

চলমান স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কল্যাণ পার্টির অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাচ্ছি না, এটা বিএনপির জন্য ছেড়ে দিয়েছি। অনানুষ্ঠানিক আলোচনার মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে আমরা বিএনপির প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে যাব। ”

আসছে ৪ ডিসেম্বর কল্যাণ পার্টির ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেশবাসীর প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধা ও দোয়া চেয়ে মেজর জেনারেল ইবরাহিম বলেন, “করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতিতে আমরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ঘরোয়াভাবে করবো। দেশাবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীরা কল্যাণ পার্টির ফেসবুক পেজে সংযুক্ত হয়ে দোয়া ও ফোনের মাধ্যমে আমাদের শুভেচ্ছা জানাতে পারবেন। আগামী ৪ ডিসেম্বর আমাদের দলের বয়স ১৩ শেষ হয়ে ১৪ শুরু হবে। ওইদিন বিকাল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত আমার ব্যক্তিগত ও দলের ফেসবুক পেজে (সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম) লাইভ হবে। ”

তিনি বলেন, “আমরা রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন চাই। সেজন্য আমাদের দলের স্লোগান হলো-পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি। যারা রাজনীতি থেকে দূরে আছেন তারা চিন্তা করুন, কতদিন দূরে থাকবেন? আপনার সামনে আপনার ঘর পুড়ে যাবে, আপনার ভিটা ধ্বংস হয়ে যাবে, তারপরও আপনি দূরে থাকবেন, কি থাকবেন না একটু চিন্তা করুন। কল্যাণ পার্টি মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চায়। কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামে সকলকে নিয়ে কাজ করতে চায়। আসছে চার ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে আমাদের প্রত্যাশা, সকলে মিলে নতুনভাবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো। ”

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০২০
এমএইচ/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।