ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের আইন দেখায়, কোন আইন? যে আইন দেখাচ্ছেন, ৪০১ ধারা। সেখানে পরিষ্কার করে বলা আছে—সরকার, শুধু সরকারই পারে তাকে (খালেদা জিয়া) বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে।
তিনি বলেন, এখানে আইন কোনো বাধা নয়; বাধা হচ্ছে সরকার, যারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়, যারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে ভুল বুঝিয়ে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে।
মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার দাবিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর থেকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া শুরু করেছিল। শুধু বিচ্ছিন্ন হয়নি, তারা জনগণের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন করেছে। ৩০ হাজার দেশপ্রেমিক কৃষক, তরুণকে সেদিন হত্যা করা হয়েছে। রক্ষীবাহিনী তৈরি করে গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। সবশেষে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ করে, সমস্ত পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল করেছিল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকে আবার একই কায়দায় এক-এগারোর পরে যখন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, দেশকে বিরাজনীতিকরণ করা হবে। তখনও দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করে চক্রান্ত শুরু হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় সেই চক্রান্তকারীদের হাত ধরে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। তখন থেকে আজ পর্যন্ত সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে ছিন্নভিন্ন করে সেই সংবিধানকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে আজকে কেউ কথা বলতে পারে না। দেশে কারও গণতান্ত্রিক অধিকার নেই, আইনের শাসন নেই, বাকস্বাধীনতা তিরোহিত।
মির্জা ফখরুল বলেন, দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, আজকে বিচার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ দলীয়করণ করা হচ্ছে। আইন আদালতকে হাতের মধ্যে নিয়ে সমস্ত বিচার ব্যবস্থা-গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। যে নির্বাচন ব্যবস্থাকে এই দেশের মানুষ গ্রহণ করেছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সেই বিধানকে বাতিল করেছে এই আওয়ামী লীগ। কারণ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাতে তারা বার বার ফিরে আসতে পারে। তাদের বশংবদ নির্বাচন কমিশন দিয়ে, তাদের বশংবদ প্রশাসন দিয়ে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। সেই কারণে আজকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করে রেখে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়।
খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি এতটা অসুস্থ সেটা আমি বর্ণনা করতে পারবো না। আপনারা চিকিৎসকদের মুখে শুনেছেন তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। তার আশু প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসা সেন্টারে উন্নত চিকিৎসা করা। চিকিৎসকরা পরিষ্কার করে বলেছেন—এখানে আমাদের যা কিছু করা সম্ভব আমরা করেছি, আমাদের কাছে সেই প্রযুক্তি নেই যে প্রক্রিয়ায় আরও উন্নতভাবে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করতে পারি।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, অ্যাডভোকেট মীর নাসির উদ্দিন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আযম খান, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট আইনীজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২১
এমএইচ/এমজেএফ