ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

নারায়ণগঞ্জে রিজভীর দাবি

শেখ হাসিনার আয়নাঘরে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
শেখ হাসিনার আয়নাঘরে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়

নারায়ণগঞ্জ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আয়নাঘর আছে। সেখানে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে যুবদলের দুই কর্মী শাওন প্রধান ও শাওন ভূঁইয়া হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত জেলা বিএনপির প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। সমাবেশে শেখ হাসিনাকে কে ‘উল্টো কথার মা’ বলেও আখ্যা দেন।

রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার আয়নাঘর আছে, সেখানে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। আয়নাঘর আজ এক ভয়ের নাম। এই আয়নাঘরের দেয়ালে এক ছেলে লিখে রেখেছে আমার মাকে বলুন তার ছেলে বেঁচে আছে। আজ গণমাধ্যম বেশি লিখতে পারে না। তারা নানা রকমের কালা কানুনের মাধ্যমে দড়ি ঝুলিয়ে রেখেছে।

এ ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা যদি বলে ডানদিক দিয়ে আসবো বুঝবেন বাম দিক দিয়ে আসবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছে গণভবনে গেলে তিনি চা খাওয়াবেন। তার পরেরদিন ভোলায় দুজনকে হত্যা করা হয়েছে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে উল্টো কথার মা আখ্যা দিয়ে বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, তিনি যা বলেন তার উল্টোটাই বিশ্বাস করতে হবে। তিনি বলেছিলেন, এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না। এর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তারা নির্বাচনে গেছেন।

সমাবেশে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে যুবদলের দুই কর্মী শাওন প্রধান ও শাওন ভূঁইয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শাওনকে হত্যা করা হলো। দুদিন আগে মুন্সিগঞ্জে আরেক শাওন মারা গেল একদিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের জন্য কাঁদে। ছবিতে কান্নার জন্য চোখে নায়িকারা গ্লিসারিন দেয়। প্রধানমন্ত্রীও ভ্যানিটি ব্যাগে গ্লিসারিন রাখেন। শাওনের জন্য আপনার চোখের পানি পড়ে না?

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, অধিকাংশ শিল্প কারখানা আজ মৃত। তাই বিএনপি এর প্রতিবাদ করছে। এটা তো জনগণের জন্য। আপনি শাওনদের গুলি করে হত্যা করেন আর জাতিসংঘে গিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য চোখের পানি ঢালেন। আপনারা এতটাই নির্লজ্জ? আপনারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে বন্দুকের ব্যবহার করছেন। কিন্তু সেই বন্দুকের নল যে ঘুরে যেতে পারে তা ভাবছেন না?

রিজভী বলেন, আমি এখানে আসার সময় অনেকে আমাকে বলেছিল জায়গাটা খুব ভালো না। আমি বলেছি, নারায়ণগঞ্জ জায়গা ভালো এখানকার মানুষ অত্যন্ত ভালো। আমি যখন নারায়ণগঞ্জে আসি তখন মানুষ আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আপনারা সকলেই অতিথিপরায়ণ; তবে দুষ্ট চক্র সব জেলায় থাকে। এরা মানুষের পেট কেটে ইট ঢুকিয়ে হত্যা করে। ওরা মনে করেছে শাওনকে হত্যা করলে আমরা ভয় পাবো। ছোট বেলায় দেখেছি এক ধরনের ধান হয়। পানি যত বাড়ে ধান তত বাড়ে। নারায়ণগঞ্জের বিএনপি নেতাকর্মীরাও ঠিক তেমনই। আমাদের কাছে অস্ত্র নেই। আছে হাত ও কণ্ঠস্বর।

তথ্যমন্ত্রীর প্রতি প্রশ্ন রেখে এ বিএনপি নেতা বলেন, তিনি বলেছেন শাওনের চাচা আওয়ামী লীগ করে। প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়রা তো মুসলিম লীগ করতেন। এখন তিনিও কি মুসলিম লীগ করেন? শাওন বীর। সে মিছিলের সামনে থেকে মৃত্যুবরণ করেছে। সরকারের মন্ত্রীরা আগুন নিয়ে খেলছেন। আগুন নিয়ে খেলবেন না। নয়ত এর পরিণতি সুখকর হবে না।

পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, নারায়ণগঞ্জে চায়নিজ রাইফেল দিয়ে কে গুলি করেছে সবাই দেখেছে। সেখানে পুলিশের একজন কর্মকর্তাকে গুলি করতে দেখা গেছে। পুলিশ বলল এটা নাকি অভ্যন্তরীণ কোন্দল। তাহলে ওই কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করলেন কেন? জনগণের কোনো ম্যান্ডেট নেই; কোনো ভোট নেই। তারা এত অপরাধ করেছে এগুলোর জন্য জনগণের আদালতে তাদের বিচার হবে। শাওনের হত্যার বিচার এই নারায়ণগঞ্জের মাটিতেই হবে। আমরা পৃথিবীতে দেখেছি অপরাধী অপরাধ করার পর কোনো না কোনো দিন ধরা পড়েই।

তিনি আরও বলেন, আমাদের নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ দেশনায়ক লন্ডনে। তার ওপরেও নানা মিথ্যা মামলায় সাজা দিচ্ছে। তবুও তার নেতৃত্বে আজ জাতীয়তাবাদী দল সমৃদ্ধ। আপনারা ভেবেছেন মামলা দিলে বিএনপি ঘরছাড়া হয়ে যাবে। বিএনপি এদেশের দেশপ্রেমিক মানুষের প্রতিনিধি। আপনারা এটিকে দমন করতে পারবেন না।

প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু, আজহারুল ইসলাম মান্নান, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ হাসান রোজেল, সদস্য মাসুকুল ইসলাম রাজীব, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েজ, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মন্টু মেম্বার, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
এমআরপি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।