ঢাকা: বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির রেশ কাটেনি এখনো। এরই মধ্যে গ্যাসের দাম বাড়াতে তৎপর হয়ে উঠেছে পেট্রোবাংলা।
শুধু উৎপাদন নয়, সম্পদ মূল্য, অনুসন্ধান ও উৎপাদন খরচ সমন্বয়ে করতে চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা)।
জ্বালানি বিভাগে পাঠানো পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুরের এক চিঠিতে পেট্রোবাংলার এমন মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পেট্রোবাংলার প্রস্তাব কার্যকর হলে গ্যাসের দাম কয়েক গুণ বাড়তে পারে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বর্তমানে উৎপাদন খরচ বিবেচনায় গ্যাসের মূল্য নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু, গ্যাস একটি খনিজ সম্পদ। এর একটি পণ্যমূল্য রয়েছে। কিন্তু, দাম নির্ধারণে পণ্যমূল্য বিবেচনা করা হয়নি।
পণ্যমূল্যের সঙ্গে দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাত্রার জরিপ ও অনুসন্ধান কূপ খননের ব্যয় রয়েছে। আমরা সব খরচ সমন্বয় করে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রস্তুতের কথা বলেছি। জ্বালানি বিভাগের মতামত পাওয়া গেলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার পর্যন্ত জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুই দফায় সিএনজির (সঙ্কুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস) দাম দ্বিগুণ করা হয়েছে। প্রথম দফায় ২০১১ সালের মে মাসে প্রতি ঘনমিটার সিএনজির দাম ১৫.৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়। একই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় প্রতি ঘনমিটার ৫ টাকা বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়।
পাইপলাইনের গ্যাসের মূল্য সর্বশেষ ২০০৯ সালে বৃদ্ধি করা হয়। ২০১২ সালের ২৩ মে গ্যাসের দাম বাড়ানোর একটি প্রস্তাব দেয় পেট্রোবাংলা। কিন্তু বিইআরসি আবেদনটি গ্রহণ না করে ফিরিয়ে দেয়।
ওই প্রস্তাবে পেট্রোবাংলা প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৭৯ দশমিক ৮২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৪ টাকা, সার কারখানার জন্য ৭২.৯২ টাকা থেকে ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বাড়িয়ে ৮০ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারের (কারখানায় ব্যবহৃত নিজস্ব ক্ষুদ্র বিদ্যুৎকেন্দ্র) জন্য ১১৮.২৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪০ টাকা, শিল্পে ১৬৫.৯১ টাকা থেকে ৩২.৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ২০০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়।
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ২৬৮.০৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা, সিএনজিতে ৬৫১.২৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯০৫.৯২ টাকা করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল।
ওই প্রস্তাবে দাম বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে সবচেয়ে কম দামে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। অন্যান্য সব দেশেই গ্যাসের দাম বেশি রয়েছে।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎখাতে প্রতি ইউনিট (এমসিএফ) গ্যাসের দাম ৭৯.৮২ টাকা। সেখানে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যন্ড এবং মালয়েশিয়ায় যথাক্রমে ৫২০.৩০ টাকা, ৪৫৮.৪৩ টাকা, ৩৫৬.৮০ টাকা এবং ১৫০ টাকা।
বাংলাদেশের সার কারখানায় প্রতি ইউনিট গ্যাস দেওয়া হয়, ৭২.৯২ টাকায়, যা ভারতে ৬১১.১০ টাকা আর পাকিস্তানে ২৮২.৭৮ টাকা। বাংলাদেশের ক্যাপটিভ পাওয়ারে প্রতি ইউনিট গ্যাস ১১৮.২৬ টাকায় গ্যাস সরবারহ করা হয়। পাকিস্তানে ৪৫৮ দশমিক ৪৩ টাকায় বিক্রি হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৪