
ঢাকা: গঠনতন্ত্রে বড় ধরনের সংশোধনী এনে আল্লাহ-রসুলকে বাদ দিয়েও রেহাই পাচ্ছেনা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নির্দেশিত যেসব ধারায় সংশোধনী আনা হয়নি, পরিবর্তন হয়নি এবং আংশিক পরিবর্তন হয়েছে তা পুরোপুরি সংশোধনের জন্য দলটিকে আবারো চিঠি দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসি মনে করছে, ৩৩ শতাংশ নারী কমিটিতে রাখাসহ অন্তত ছয়টি ধারায় ব্যাপক সংশোধন আনলেও ‘সংসদের সার্বভৌমত্বের কর্তৃত্বকে’ স্বীকারের উপধারায় সংশোধন আনার বিষয়ে কৌশল নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দুই বছর আগের অবস্থানের কথা তুলে ধরে ‘অস্পষ্টতা’ দূর হবে বলে আশা রেখেছে দলটি।
যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত শীর্ষ নেতাদের বিচার প্রক্রিয়া যখন শেষ পর্যায়ে এবং জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে স্বাধীনতা স্বপক্ষের সকল রাজনৈতিক দলের সোচ্চারের মুখে ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতি’ অনুসরণে গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধন আনে দলটি। নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে দলটি গঠনতন্ত্র থেকে আল্লাহ প্রদত্ত ্এবং রসুল প্রদর্শিত ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা বলেছে।
এছাড়া ‘আল্লাহ ব্যতীত কাহাকেও সয়ংসম্পুর্ণ বিধানদাতা ও আইন প্রণেতা মানিয়া লইবে না এবং আল্লাহ্র আনুগত্য ও তাঁহার দেওয়া আাইন পালনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয় এমন সকল আনুগত্য মানিয়া লইতে অস্বীকার করিবে’ এ নীতিও বাদ দিয়েছে দলটি। কিন্তু এ ধারার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ‘আল্লাহ ব্যতিত অন্য কাহাকেও বাদশাহ, রাজাধিরাজ ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মানিয়া লইবে না, কাহাকেও নিজস্বভাবে আদেশ ও নিষেধ করিবার অধিকারী মনে করিবে না, কাহাকেও স্বয়সম্পূর্ণ বিধানদাতা ও আইনপ্রণেতা মানিয়া লইবে না’ কথা রেখেই ইসিতে গঠনতন্ত্র জমা দেয় দলটি।
কমিশন সূত্র মঙ্গলবার বাংলানিউজকে জানায়, “একটি বিশেষ ধারা সংশোধনের বিষয়ে জামায়াত ধূর্ততার আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও আগের সংশোধনীটি জমা দিলো। তা স্পষ্ট না করেই ‘ইসির কাছে কোনো অস্পষ্টতা থাকবে না’ বলে উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।”
ধারাটির আংশিক এ বিধানটির দেশের সংসদের সার্বভৌমত্ব ও আইনসভার কর্তৃত্বকে অস্বীকারের সমতুল্য উল্লেখ করে তা বাদ দেওয়ার জন্য ২০১০ সালর ২৪ জানুয়ারিতে গঠনতন্ত্রে সংশোধনের তাগিদ দেয়।
আবার গঠনতন্ত্রে সংশোধনীতে বাদ দিলেও ইসিতে দেওয়া চিঠিতে দলটি ধূর্ততার সঙ্গে “আল্লাহর আনুগত্য ও তার দেওয়া আইন পালনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয় এমন সব আনুগত্য মানিয়া লইতে অস্বীকার করিবে। কেননা স্বীয় সমগ্র রাজ্যের নিরঙ্কুশ মালিকানা ও সৃষ্টিলোকে সার্বভৌ¤েত্বর অধিকার আল্লাহ ব্যতিত অপর কাহারও আসলে নাই।” বিষয়টি উল্লেখ করেছে।
জামায়াত সম্পর্কে ইসির মনোভাব সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক জানান, ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছে বলে মনে হচ্ছে। পুরো সংশোধনপত্রটি কমিশন সভায় পর্যালোচনা করার পর পরবর্তীতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তবে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য বহাল রাখাতে ‘আপাতত আপত্তি’ দেখছেন না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, “জামায়াতের গঠনতন্ত্রে অনেক ধারা বিলুপ্তিসহ ব্যাপক সংশোধন আনা হয়েছে। তবে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য বহাল রাখা হযেছে। সংবিধানে বিছমিল্লাহ্হির রহমানির রহিম দিয়ে শুরু থাকলে এতে অসুবিধা কোথায়?”
তবে কমিশনের একধিক সূত্র বাংলানিউজকে বলেন, আইন শাখা নতুন গঠনতন্ত্র পরীক্ষা করে ইসির কার্যপত্র তৈরি করবে। আপাতত সাধারণ শাখা পরিবর্তনের বিষয়গুলো সন্নিবেশ করে একটি খসড়া তৈরি করেছে। পরবর্তী ইসি বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হবে। তবে প্রাথমিক ভাবে পুনরায় বাকি বিষয়গুলো সংশোধনের চিঠি দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এসব ধারা সংশোধন বাতিল না করে আবারো কৌশল অবলম্বন করলে দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৭, ডিসেম্বর ০৪ ঘণ্টা, ২০১২
আরএম/এমএমকে- [email protected]