ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

সততা-একাগ্রতাই এগিয়ে নিয়েছে কাজী সুরুজকে

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৬
সততা-একাগ্রতাই এগিয়ে নিয়েছে কাজী সুরুজকে ছবি: কাজী সুরুজ/বাংলানিউজ

বার্লিন (জার্মানি) থেকে: ইউরোপে চাকচিক্য আর মজবুত অর্থনীতির দেশ জার্মানি। দেশটির রাজধানী বার্লিনের আনাচে-কানাচে কান পাতলেই শোনা যায় বাংলাদেশিদের সাফল্যের নানা গল্প।

তাদের একজন কাজী সুরুজ (৪০)।

শূন্যহাতে প্রবাসে এসে ভিন্ন কিছু করেছেন। মাদারীপুর জেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের খাগছাড়া গ্রামের কাজী আলাউদ্দিনের ছেলে সুরুজ আফ্রিকান খাবারের ব্যবসা খুলে হয়েছেন সফল। সেই সফলতার ধারাবাহিকতায় দিয়েছেন তৈরি পোশাক। এছাড়া বিয়েসহ জীবনের নানা উপলক্ষ ও উৎসবের প্রয়োজন মেটাতে খুলেছেন ভিন্ন ব্যবসা।

পাঁচ ভাই দুই বোনের মধ্যে ৬ষ্ঠ সুরুজের জীবনে ট্রাজেডি, তার বামহাতটি পুরোপুরিই অকেজো। এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দমিয়ে রাখতে পারেনি তার মেধা ও সৃজনশীলতাকে।

১৯৯০ সালের ঘটনা। গ্রামের বাড়িতে কাবাডি খেলতে গিয়ে ভেঙে যায় বামহাতটি। এক পর্যায়ে বামহাতটি অকেজোই হয়ে পড়ে। তখন জীবনে নেমে আসে নানা হতাশা আর মানসিক দুর্বলতা। সেই বোধ থেকেই পাড়ি দেন ইউরোপে। ১৯৯৩ সালে জার্মানিতে চলে আসেন। বসবাস শুরু করেন বার্লিনে। রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে প্রথমে আশ্রয়। পরে জার্মানির অভিবাসন আইনের সহায়তায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পান তিনি।

এরপর থেকেই আত্মপ্রত্যয়ী সুরুজ চেষ্টা করেন ঘুরে দাঁড়ানোর। সরাসরি ব্যবসায় নিযুক্ত হন। খোলেন আফ্রিকান খাবারের রেস্টুরেন্ট। মুরগির মাংস, আনাজিকলা, সিমের বিচি দিয়ে বিশেষ খাবার ছাড়াও আলু দিয়ে তৈরি ‘ফুফু’ নামে আফ্রিকান বিশেষ খাবারটি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বার্লিনের পাংকু এলাকায় চলতে থাকে জমজমাট ব্যবসা।

তারপর ক্রইসবার্গ এলাকায় গড়ে তোলেন ‘গুরু’ নামে ভারতীয় খাবারের রেষ্টুরেন্ট। এর ধারাবাহিকতায় শুরু করেন গার্মেন্টস ব্যবসার। নয়কোলনহারমানপ্লাস এলাকায় গড়ে তোলেন ‘নমস্তে’ নামের দোকানটি। যেখানে বিয়ে ছাড়াও জন্মদিন, গায়ে হলুদসহ নানা উৎসব আয়োজনের সব উপকরণ মেলে সুলভে। এখানেই থেমে থাকেননি সুরুজ। মেক্সিকান স্টিং হাউজ নামে মারনডোফ এলাকায় খোলেন কাবাব হাউজ অ্যান্ড ককটেল বার।

স্ত্রী ফারহানা আক্তার অভি, দুই ছেলে কাজী সামির (প্রভাত) ও কাজী শিহাবকে (পুষণ) নিয়ে বসবাস এই শহরে।

কাজী সুরুজ বাংলানিউজকে জানান, প্রবাসজীবনে সবাই দূর থেকে শুধু সাফল্যের আলোটাই দেখে। সেই আলো জ্বালাতে কতোদিন অন্ধকার ঘরে বসে থেকে সাধনা করেছি, তা অনেকেই জানে না।

তার মতে- সততা, একাগ্রতা আর চেষ্টা থাকলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও কোনো বিষয় না। আর লক্ষ্য যদি স্থির থাকে তবে সফলতা আসবেই। আসতে হবেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৬
এসএনএস

 

**‘সেই সংগ্রামই সাফল্যের পথপ্রদর্শক’

** আস্থার সংকটে বাংলাদেশ–জার্মানি সম্পর্ক!

** বিমানবন্দরে বাংলাদেশের হাসি

** নিজেই মুমূর্ষু জার্মানির বাংলাদেশ দূতাবাস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।