ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

জাপান কাচ জাদুঘরে কাচের ‘কেরামতি’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৮ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৬
জাপান কাচ জাদুঘরে কাচের ‘কেরামতি’ ছবিটি এজিসির ফেসবুকে পেজ থেকে নেওয়া

টোকিও (জাপান) থেকে: ট্যুরিস্ট বাস থেকে নেমে কাচঘেরা দরজা ঠেলে ঢোকার আগেই স্বয়ংক্রিয় দরজা দু’ফাঁক হয়ে গেলো। রিসিপশনে দাঁড়ানো সুন্দরী জাপানি তরুণী দু’হাত করজোড়ে মাথা নিচু করে জাপানি কায়দায় উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন বাংলাদেশ থেকে আসা সংবাদকর্মীসহ শিল্প প্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্যামিলির ১৮ জন ট্যুরিস্টকে।

রিসিপশনের সামনে গোলাকৃতির কাচের সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতে উঠতেই কাচের এক ‘বিস্ময় জগতে’ নতুন যাত্রা শুরু আমাদের।

পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় কাচ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আশাহি গ্লাস কোম্পানির (এজিসি) এই গ্লাস মিউজিয়াম অর্থাৎ কাচের জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ২০১০ সালে।

শনিবার ও রোববার ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে সবার জন্য। জাপানের একমাত্র গ্লাস মিউজিয়াম এটি।

দোতলায় নানাভাবে বৈচিত্র্য ঢঙে সাজানো রয়েছে রঙ-বেরঙের কাচ। যা আগে আমরা কখনও দেখিনি। এত রঙ এত রূপ এত বৈচিত্র্য এ কাচে-যা কি-না তৈরি হয় বিশেষ এক ধরনের বালি থেকে! বালি পুড়িয়ে প্রক্রিয়াজাত শেষে অবয়ব নেয় স্বচ্ছ কাচের। তিন ধরনের কাচ তৈরি হয়।

এক. আর্কিটেকচারাল দুই. অটোমেটিভ তিন. ইলকেট্রনিক্স।

আর্কিটেকচারাল কাচ ভবন ও স্থাপনা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। অটোমেটিভ ব্যবহার হয় যানবাহনে এবং ইলেকট্রনিক্স কাচ ব্যবহার হয় মোবাইল স্মার্ট ফোন ও চশমায়।

বিশ্ব কাচের বাজার বা কাচের দুনিয়াতে যে বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে সেটি আমাদের মতো উন্নয়নশীল বাংলাদেশে বসে বোঝার বা জানার সুযোগ খুবই কম।

‘লো-ই’ এক ধরনের কাচ তৈরি হচ্ছে যার ব্যবহার বহুমুখী। ভবনের বা স্থাপনায় এ কাচ ব্যবহার করলে বিদ্যুতের যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি আরামদায়কও।

পৃথিবীর বিখ্যাত ও জাপানি মালিকানাধীন আশাহি গ্লাস কোম্পানির নির্বাহী মিসাও মিশোনো যখন সাবলীল ও সহজ ইংরেজিতে এসব কাচের উপযোগিতা বিষয়ে বর্ণনা দিচ্ছিলেন তখন বিস্ময়ের ঘোর যেন কাটে না।

জানালায় ‘লো-ই’ কাচ ব্যবহার করলে বাহির থেকে রুমে আলোর স্বচ্চতা পাওয়া যাবে ৯০ শতাংশ। তাপ ঢুকবে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। সাধারণ ফ্লোট গ্লাসে আলো ঢুকবে ৭০ শতাংশ, কিন’ তাপ ঢুকবে তার চেয়েও বেশি।

শুধু তাপের ক্ষেত্রে নয়, শীতল আবাহাওয়ার প্রভাবও একই রকমভাবে রুমের ভেতরে ঢুকবে।

জার্মানিসহ ইউরোপ-আমেরিকার উন্নত দেশে এখন এই গ্লাসেরই ব্যবহার চলছে। জাপানে ব্যবহৃত কাচের ৭০ শতাংশই এখন ‘লো-ই’। আমেরিকা ১৯৮২ সালে এ গ্লাসের উদ্ভাবন করে উৎপাদনে যায় ১৯৮৫ সালে।

এই তথ্য জানার পর আমাদের একটি কথায় বারবার মনে পড়লো বিদ্যুৎ সংকটের বাংলাদেশেই এই কাচের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হওয়ার কথা। ফ্লোট গ্লাসের দ্বিগুন দামের এই ‘লো-ই’ গ্লাস ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে তার চেয়ে বেশি।

কাচের গায়ে অসাধারণ সুন্দর ডিজাইন। ঘরের জানালায় লাগালে আপনার সুরুচিবোধের ধারণা তৈরি হবে যে কারোরই।

কিন্তু এটি আসল কথা নয়। কাচের এ ডিজাইনের ভেতরে লুকিয়ে আছে সোলার সিস্টেম। সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে কাচ তৈরি করবে বিদ্যুৎ, সঙ্গে দিচ্ছে অসাধারণ সুন্দর ডিজাইনও।

পাতলা কাচের ওপর দারুণ রঙিন সব ইমেজ ফুটে উঠছে। তার সামনে দাড়িয়ে আছেন মানুষ। আয়নার মতো মানুষের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে ওই কাচে। এত সুন্দর আবিষ্কারও কি হয়? হচ্ছে।

ভবিষ্যতে আরো যে কি হবে এখনই ধারণা করা মুশকিল। এ বছর ইতালির মিলানে জাপানের এক ডিজাইনারের এই কাচটি উপস্থাপন করা হবে।

এক দশমিক এক মিলিমিটারের খুব পাতলা কাচে তিন ফুট উপর থেকে ১৭৫ গ্রাম ওজনের লোহার বল পড়ার পরও ভাঙলো না গ্লাসটি। এতই তার টেম্পারড। ফ্রিজের কাচের দরজায় ফ্রিজে থাকা পানীয়ের রঙিন ইমেজ যখন ফুটে উঠে তখন সত্যিই মনে হয় এ বুঝি কাচেরই কেরামতি।

 

লেখক: রফিকুল বাহার, সাংবাদিক।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫২ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৬

** জাপানিদের উন্নতির মূলমন্ত্র ‘সময় জ্ঞান’
** জাপানে জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।