মাদারীপুর: ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে কালকিনি উপজেলায় বিজয়ের পতাকা উড়ে।
দিবসটি উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের উদ্যোগে র্যালি ও আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। উপজেলার ফাসিয়াতলা গণহত্যা একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়।
জানা গেছে, দিনটিতে ছিল স্থানীয় হাট। অসংখ্য লোকজন কেনা-বেচা করতে সেদিন উপস্থিত ছিল হাটে। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতে সেই হাটের দিন কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ফাসিয়াতলা বাজারে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার মিলে নির্মম গণহত্যা চালায়। রাজাকার ও পাকিস্তানি হানাদার মিলে একটি দল ফাসিয়াতলা বাজারে আক্রমণ করে। প্রথমে আলশামস ও রাজাকাররা মিলে পালরদী নদীর পার খোলা রেখে স্থলভাগের তিনদিক ঘিরে রাখে। ওই সময় দুইটি বড় নৌকা নিয়ে পাকিস্তানি মেজর পায়েন্দা খানের নেতৃত্বে ৫০ জন পাকিস্তানি হানাদার ও রাজাকার-আলবদরের ৩০/৩৫ সদস্য মিলে একযোগে আক্রমণ করে ফাসিয়াতলা বাজারে। বাজারে প্রবেশ করে ব্রাসফায়ার করে হত্যা শুরু করে। পরে দোকান-পাট লুট ও বাজারসহ আশেপাশের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় কমপক্ষে ৭০০ ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ফেলে পাকস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা।
নৌকায় করে হাটে আসা মানুষদের ধরে ধরে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
ফাসিয়াতলা বাজার সংলগ্ন ঘোষপাড়ায় চলে হত্যাযজ্ঞের মহোৎসব। হিন্দু সম্প্রদায়ের যারা ঘরের মধ্যে লুকিয়ে ছিল তাদের ঘরে আটকে রেখে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
এছাড়া উপজেলার সিডিখান, এনায়েতনগর, সমিতিরহাট ছাড়াও পাশের বরিশালের গৌরনদী, মুলাদী উপজেলা ও কালকিনির সীমান্তবর্তী তিনটি স্থানে সম্মুখ যুদ্ধ হয় পাকবাহিনীর সঙ্গে। এ সম্মুখ যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ৮ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় মাদারীপুরের কালকিনি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সাবেক কমান্ডার মালেকুজ্জামান মালেক বলেন, 'উপজেলা হানাদার মুক্ত করতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ৯ মাস উপজেলার বিভিন্নস্থানে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধসহ ১৫টি দুঃসাহসীক অভিযান চালায়। পাকিস্তানি হানাদাররা দিশেহারা হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দখলে থাকা উপজেলার করিমগঞ্জবাজার ঘাটি গুঁড়িয়ে দেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সেদিনই কালকিনিকে হানাদারমুক্ত ঘোষণা করা হয়।
কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিংকি সাহা বলেন, এ দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের উদ্যোগে আনন্দ র্যালি ও আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২২
এসআরএস