ঢাকা: জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে সরিয়ে শেয়ারবাজারে লেনদেনের শীর্ষ স্থান দখল করেছে ওষুধ খাত। সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের(ডিএসই) মোট লেনদেনের ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশই রয়েছে এ খাতটির দখলে।
অপরদিকে শেয়ারবাজারের প্রাণ হিসেবে পরিচিত ব্যাংক খাতের শেয়ারের লেনদেন ধুঁকে ধুঁকে চলছে। ২০১২ সালে দেশের কয়েকটি ব্যাংকে বেশকিছু আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশের পর থেকেই শেয়ারবাজারে এ খাতটিতে দুরাবস্থা বিরাজ করছে।
মার্চ মাস শেষে বাজারে মোট লেনদেনে এ খাতের অবদান মাত্র ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। যা ফেব্রুয়ারিতে ছিলো ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে ছিল ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ।
আগের বছরে অর্থাৎ ২০১৪ সালে মোট লেনদেনে এ খাতের অবদান ছিলো মাত্র ৯ শতাংশ। অথচ ব্যাংক কেলেঙ্কারির আগের বছরেও লেনদেনের ৩০ শতাংশই ছিলো এ খাতের দখলে।
এমনকি ২০১২ সাল শেষেও লেনদেনের শীর্ষে ছিলো ব্যাংক খাত। তবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যায় মোট লেনদেনের পরিমাণ। বছরটিতে ব্যাংকের শেয়ারের মোট লেনদেন হয় ১৫ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। যা মোট লেনদেনের ১৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
এর আগের বছর ২০১১ সালে ব্যাংকিং খাতের লেনদেন ছিলো ৩৯ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। যা ওই বছরের লেনদেনের ২৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। আর ২০১০ সাল পর্যন্ত মোট লেনদেনে ৩০ শতাংশের উপরে ছিলো ব্যাংক খাতের লেনদেন।
এদিকে ব্যাংক খাতের দুরবস্থায় ২০১৩ সালের শুরু থেকেই লেনদেনে প্রাধান্য বিস্তার করতে শুরু করে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত। এরই ধারাবাহিকতায় বস্ত্র খাতকে সরিয়ে ২০১৪ সালে লেনদেনের শীর্ষ স্থান দখল করে এ খাতটি।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্তও লেনদেনের এ আধিপত্য বজায় ছিলো। তবে মার্চে এসে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে সরিয়ে শীর্ষ স্থান দখল করে নিয়েছে ওষুধ খাত। মোট লেনদেনে ওষুধ খাতের অবদান ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
শীর্ষ স্থান হারালেও মোট লেনদেনে ১৫ শতাংশের উপরে অবদান রেখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত। মার্চ শেষে এ খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৫১ শতাংশ।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের অবস্থা খুবই নাজুক। ২০১০, ২০১১ সালে ব্যাংক যে পরিমাণ মুনাফা করেছিলো এবং বিনিয়োগকারীদের যে লভ্যাংশ দিয়ে ছিলো তা এখন দিতে পারছে না।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে গেছে। ফলে ব্যাংক ঋণের চাহিদা কমেছে। আর ঋণের চাহিদা কমায় ব্যাংক ঋণ দিতে পারছে না। ফলে ব্যাংকের মুনাফাও কমছে। তাছাড়া গত কয়েক বছর ধরে অনেক ব্যাংক ভালো কোম্পানি যাচাই করে ঋণ দিতে পারেনি। ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ আদায় করতে সমস্যায় পড়েছে। এটিও ব্যাংকের মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যে কারণে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে।
তবে শেয়ারবাজারে বর্তমানে অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ারের যে দাম দাঁড়িয়েছে তা বিস্ময়কর। মুনাফা, লভ্যাংশ, শেয়ার প্রতি আয় কমলেও অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ারের দাম এতো কমার কোন যুক্তি সংগত কারণ নেই বল জানালেন বিএসইসির সাবেক এই চেয়ারম্যান।
তথ্য পর্যালোচনা দেখা গেছে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত এবং ওষুধ বাদ দিয়ে মার্চ শেষে মোট লেনদেনে ১০ শতাংশের উপরে অবদান আছে মাত্র দুটি খাতের। এরমধ্যে প্রকৌশল খাতের ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং টেক্সটাইল খাতের অবদান ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ।
ফেব্রুয়ারিতে প্রকৌশল খাতের অবদান ছিলো ১৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং টেক্সটাইল খাতের ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।
অন্য খাতগুলোর মধ্যে মার্চ শেষে সিমেন্ট খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং টেলিযোগাযোগ খাতের ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। বাকি সবকটি খাতের অবদান ৫ শতাংশের নিচে।
এরমধ্যে আর্থিক খাতের অবদান ৩ দশমিক ১১ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দশমিক ৭৮ শতাংশ, খাদ্যের ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ, পাটের দশমিক ১৪ শতাংশ, আইটির ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ, বিমার ২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, ভ্রমণ ও অবকাশ দশমিক ৮৩ শতাংশ, সিরামিক দশমিক ৪৯ শতাংশ, সেবা ও আবাসন ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ, কাগজ ও মুদ্রণ দশমিক ২৮ শতাংশ, ট্যানারি খাতের ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, বন্ড দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ এবং বিবিধ খাতের অবদান ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৫
এএসএস/এনএস/আরআই