ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

শেয়ারবাজার

রাজনৈতিক ফায়দার খাঁড়ায় শেয়ারবাজার

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৫
রাজনৈতিক ফায়দার খাঁড়ায় শেয়ারবাজার

ঢাকা: শেয়ারবাজারকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফয়দা হাসিলে তৎপর হয়ে উঠেছে একটি চক্র। চক্রটির সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতপন্থিদের মালিকানাধীন কিছু ব্রোকারেজ হাউস ও একই মতাদর্শের কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণাধীন মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে।


 
আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী মতাদর্শের এসব ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো রাজনৈতিক অস্থিরতার অযুহাতে নিজেদের পোর্টফোলিওতে শেয়ার কেনা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে দিয়েছেন। এমনকি বিনিয়োগের জন্য আসা বিনিয়োগকারীদেরকেও নানাভাবে নিবৃত করছেন তারা।
 
শেয়ারবাজারে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে একদিকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল, অন্যদিকে স্বল্প দামে শেয়ার কিনতে চক্রটি এ কাজে লিপ্ত হয়েছে বলে একাধিক ব্রোকারেজ হাউজ সূত্রে জানা গেছে।
 
শেয়ার না কিনে চক্রটি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে এই বার্তা পাঠাতে চাচ্ছেন যে, দলের জন্য তারা নিজেদের ব্যবসার ক্ষতি শিকার করতেও প্রস্তুত। গত তিন মাসে এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অনেকটা সফলও হয়েছেন তারা। চক্রটির অপতৎপরতাই বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা লাগাতার হরতাল-অবরোধে শেয়ারবাজরে টানা নেতিবাচক অবস্থা বিরাজ করার অন্যতম কারণ ভলে অভিযোগ আছে।
 
এর আগেও আওয়ামী লীগ সরকারকে বিপাকে ফেলতে বিএনপি-জামায়াত মতাদর্শের এসব ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো নানা তৎপরতা চলায়। ২০১০ সালে শেয়ারবাজার অস্বাভাবিক ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এ চক্রটি। রাজনৈতিক ফায়দা হাতাতে সে সময় চক্রটি শেয়ারবাজারে ২০ হাজার কোটি টাকার উপরে বিনিয়োগ করে বলে ডিএসই সূত্রে জানা গেছে।
 
সূত্রটি জানায়, শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস ও  মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে এ টাকা বিনিয়োগ করে চক্রটি। প্রায় তিন মাস ধরে এই ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে তারা। পলিকল্পনা মাফিক মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়নো হয়। ফলে তাদের অপত‍ৎপরতায় ফুলে-ফেঁপে উঠে শেয়ারবাজার।
 
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১০ সালের মহাধসের সময় বিনিয়োগ করা অর্থ তুলে নিয়ে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করতে একযোগে শেয়ারবিক্রি শুরু করে চক্রটি।
 
সূত্র আরও জনায়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) উভয় বাজারেই বিএনপি-জামায়াতপন্থিদের মালিকানাধীন বেশকিছু ব্রোকারেজ হাউস এবং তাদের মতবাদের মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতে শেয়ারবাজারে টানা পতন ঘটাতে এ চক্রটি গত কয়েক মাস ধরেই তৎপরতা চালাচ্ছে।
 
ডিএসই’র একাধিক ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তারা জানান, বিএনপি-জামায়াত মতাদর্শের ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ থেকে নিবৃত রাখতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে। অনেক সময় তারা বিনিয়োগকারীদের বলছেন রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষ‍া করুন। কারণ রাজনীতির যে অবস্থা তাতে সামনে আরও খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
 
অবার কিছু ক্ষেত্রে তারা বিনিয়োগকারীদের বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ খুব একটা নিরাপদ মনে হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্ক থাকা ভালো। এ ধরনের নানা মন্তব্য করে তারা বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করছেন এবং তাদের এমন মন্তব্যে বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকছেন।
 
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একাধিক সদস্য বাংলানিউজকে জানান, শেয়ারবাজারকে ঘিরে রাজনৈতিক ইস্যু তৈরির করতে বিএনপি-জামায়াতপন্থিরা দীর্ঘদিন ধরেই অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। ২০১০ সালে তাদের অপত‍ৎপরতার সঙ্গে সরকারপন্থি কিছু প্রভাবশালী সদস্যও জড়িত ছিলো। ২০১০ সালের ধসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই চক্রটি চলতি বছরেও বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থ‍া সৃষ্টি করেছে। এর মাধ্যমে তার‍া একদিকে রাজনৈতিক ফায়দা হাতাতে চেষ্টা করছে, অন্যদিকে কম দামে শেয়ার কেনার চক্রান্ত করছে।
 
তারা বলেন, একজন বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগের গভীর ইচ্ছা থাকলেও ব্রোকারেজ হাউস অথবা মার্চেন্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছ থকে নেতিবাচক কথা শুনলে আর বিনিয়োগ করবেন না। শেয়ারবাজার খুবই সংবেদনশীল জায়গা। একটু পর্যবেক্ষণে থাকুন, শুধু এমন কথা বলেই বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ থেকে নিবৃত রাখা সম্ভব।
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে ফ‍ায়দা হাসিলের চেষ্টা করা অসম্ভব কিছু না। এ ধরনের কাজে কেউ কেউ জড়িত থাকলেও থাকতে পারে। মূল্য পতন ঘটিয়ে কম দামে শেয়ার কেনার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে।
 
বিএসইসির সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে কিছু কোম্পানির বিশেষ করে ব্যাংক কোম্পানির শেয়ারের দাম অনেক নীচে নেমে গেছে। ব্যাংকের মুনাফা কিছুটা কমলেও শেয়‍ারের মূল্য এতোটা কমার কোন যৌক্তিক কারণ নেই।
 
বেসরকরি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বাংলানিউজকে বলেন, গুজব সৃষ্টি করে শেয়ারবাজারকে অস্থিতিশীল করা সম্ভব। তাই যাতে কেউ বাজারে গুজব সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারি বাড়ানো হবে। পাশাপাশি গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া বিনিয়োগকারীদেরও সচেতন থাকতে হবে।   
 
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিলো ৪ হাজ‍ার ৯৪১ পয়েন্টে। এরপর ৬ জানুয়ারি সূচক বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজ‍ার ৯৬৯ পয়েন্টে। পরবর্তীতে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হলে শেয়ারবাজারেও নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দেয়। ধারাবাহিক পতনের কারণে ৮ এপ্রিলের লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স সূচক দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩৪৭ পয়েন্টে। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে সূচক কমেছে ৬২২ পয়েন্ট।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৫
এএসএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।