ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

‘প্রিমিয়ার লিগের পাশাপাশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগও হবে বলে আমার বিশ্বাস’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, স্পোর্টস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৩
‘প্রিমিয়ার লিগের পাশাপাশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগও হবে বলে আমার বিশ্বাস’

বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলের জার্সিতে ১০ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন তারকা ডিফেন্ডার রাজশাহীর ছেলে ফরহাদ আহমেদ শিতুল। এছাড়া বেতনভূক্ত খেলোয়াড় হিসেবে কর্মরত আছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে।

হকির অনেক উত্থান-পতনের গল্পের সাক্ষী শিতুল। তবে উত্থানের চেয়ে পতনটাই দেখেছেন বেশি।  

এই যেমন ২০২৩ সালের কথাই যদি বলি। ক্রিকেট, ফুটবলসহ অন্যান্য ইভেন্ট যেভাবে এগিয়েছে; ঠিক উল্টো রথে হেঁটেছে দেশের হকি। চরম এক ব্যর্থতার বছর পার করেছে হকি। অনূর্ধ্ব-২১ দলের এএইচএফ কাপ জয় ছাড়া নেই কোনো সাফল্য। গেল কয়েক বছরের মতো প্রিমিয়ার লিগ হয়নি এবারো। ফেডারেশন কর্তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েও টার্ফে নামাতে পারেননি ফ্রাঞ্চাইজি হকি। সব মিলে হকি যেন অন্ধকারের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে। এসবের মধ্যে আশার আলো দেখছেন জাতীয় তারকা শিতুল। আরো অনেক প্রসঙ্গেই কথা বলেছেন তিনি। সেসব কথাই শুনব এ ডিফেন্ডারের মুখে  

বাংলানিউজ: ২০২৩ হকির জন্য ব্যর্থতার বছর। আপনি কী বলবেন?
শিতুল: এ বছর এশিয়ান গেমসসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হয়েছে। সাফল্য তুলনামূলক কম পেয়েছি আমরা। ফেডারেশনের নির্বাচন হয়েছে। বছরের প্রান্তে জাতীয় নির্বাচনের তোরজোর চলছে। বর্তমান কমিটি নির্বাচিত হওয়ার পর বেশ কিছু কাজের অগ্রগতি হয়েছে। প্রিমিয়ার লিগটাও শুরু করতে চেয়েছিল। এ নিয়ে আমাদের ফেডারেশনের সভাপতি স্যারের সঙ্গে কথাও বলেছেন সাধারণ সম্পাদক সাঈদ ভাই, রানা ভাইসহ অন্যরা। জাতীয় নির্বাচনের তারিখ না পড়লে লিগটা নিশ্চয়ই মাঠে গড়াত বলে আমার বিশ্বাস। আশাকরি নির্বাচনের পর পরই লিগ আয়োজনের ব্যাপারে ফেডারেশন জোর উদ্যোগ নেবে। আমাদের হকি খেলোয়াড়দের রুটি-রুজির উৎসই প্রিমিয়ার লিগ। এটা আয়োজনে অনেক বড় একটা গ্যাপ তৈরি হয়ে গেছে। সামনে যেন আর না হয় সেটাই প্রত্যাশা।  

বাংলানিউজ: ফ্রাঞ্চাইজি লিগটাও হলো না। এটা নিয়ে কী বলবেন?
শিতুল: ফ্রাঞ্চাইজি লিগটা যখন প্রথম আসে; তখন আমরা খুব আশাবাদী ছিলাম। কারণ বলা হয়েছিল এটা পাঁচ বছর কন্টিনিউ করবে। ফ্রাঞ্চাইজি লিগের মাধ্যমে হকির পরিচিতিটাও অনেক বড় জায়গাতে পৌঁছে গিয়েছিল। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী এইস এবং এর কর্ণধার ইশতিয়াক সাদেক ভাইকে আমি ধন্যবাদ জানাব ওনার কারণেই মূলত ফ্রাঞ্চাইজি লিগটা আলোর মুখ দেখেছিল। যেহেতু ওনার বাবা আব্দুস সাদেক আমাদের দেশের একজন লিজেন্ডারি খেলোয়াড়। রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। তাই হকির প্রতি ইশতিয়াক ভাইয়ের সব সময়ই অন্যরকম এক টান আমরা দেখেছি। ২০২৩ সালে ফ্রাঞ্চাইজি লিগ হলো না। তবে আগামী বছর প্রিমিয়ার লিগের পাশাপাশি ফ্রাঞ্চাইজি লিগটাও হবে বলে আমার বিশ্বাস।  

বাংলানিউজ: নতুন বছর ২০২৪ সালে ফেডারেশনের কাছে আর কী প্রত্যাশা আপনাদের?
শিতুল: বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর হকিকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনার কথা গণমাধ্যমের কাছে জানিয়েছে। সেখানে ঘরোয়া হকিকে এগিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি যেমন ছিল; তেমনি আন্তর্জাতিক আসরে উন্নতি করার কথাও বলেছেন আমাদের কর্তাব্যক্তিরা। নারী হকিকে এগিয়ে নেয়ার কথাও জোর দিয়ে বলা হয়েছে। আমাদের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ ভাই যা বলেন, তা করেন। এই বিশ্বাস ওনার প্রতি আমাদের হকি খেলোয়াড়দের আছে। আশাকরি ওনাদের কমিটি যে কথা দিয়েছেন, সেসব প্রতিশ্রুতি ওনারা রাখবেন। নতুন বছরে হকি মাঠ চাঙা থাকবে বলে প্রত্যাশা করছি। সেই সঙ্গে এসএ গেমস রয়েছে। সব কিছু মিলে নতুন বছরে ভালো কিছুই হবে বিশ্বাস।

বাংলানিউজ: গত অক্টোবরে এশিয়ান গেমস থেকে ফেরার পর হকি মাঠে আপনাদের দেখা যায়নি। এশিয়ান গেমসে ফিটনেস নিয়ে অনেক কাজ করা হয়েছিল? নিজের ফিটনেস ধরে রাখতে এখন কি কাজ করছেন?
শিতুল: আমাদের হকি খেলোয়াড়রা জাতীয় দল বলুন কিংবা প্রিমিয়ার লিগে যারাই খেলেন তারা অধিকাংশই কিন্তু কোনো না কোনো বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই যেমন আমি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একজন হকি খেলোয়াড়। বাহিনীতে কিন্তু নিয়মিতই হকি চর্চা হয়। আমাদের প্রতিদিনই অনুশীলন করতে হয়। এভাবে ফিটনেস নিয়ে কাজও হয়ে যায়। যেহেতু বাহিনীতে সারা বছরই অনুশীলন চলে তাই ফেডারেশন যখন কোনো ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক আসর শুরু করে; তখন কিন্তু মানিয়ে নিতে আমাদের তেমন কষ্ট হয় না। তবে যারা বাহিনীর বাইরে রয়েছেন তাদের জন্য বিষয়টা একটু হলেও কষ্টের। মাঠে হকি না থাকলে তাদেরও বেকার বসে থাকতে হয়। ফিটনেসসহ সব দিক থেকে তারা পিছিয়ে থাকে। এভাবে ঘরোয়া হকি না হওয়ার দরুণ দিনকে দিনকে আমাদের হকি পিছিয়ে যাচ্ছে।  

বাংলানিউজ: আপনি রাজশাহীর ছেলে। এই অঞ্চলকে বলা হয় হকির চারণভূমি। রাজশাহীর হকি সম্পর্কে কিছু বলুন?
শিতুল: রাজশাহীতে বছর জুড়েই হকির ক্যাম্পিং চলে। ছোট বাচ্চা ছেলে থেকে সিনিয়র সবাই খেলাটাকে বেশ ভালোভালেই অনুশীলন করেন। আমাদের বৈকালি সংঘ ক্লাবের ছানা চাচা আছেন; সিপাহী পাড়া এলাকার কাউন্সিলর জনি ভাই আছেন। এছাড়া আমাদের মাননীয় মেয়র মহোদয় এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ভাইও হকির ব্যাপারে দারুণ কনসার্ন। রাজশাহীতে একটা হকি টার্ফ বসানোর ব্যাপারে লিটন ভাই কাজ করছেন। সত্যি বলতে হকিসহ অন্যান্য খেলাকে চালু রাখতে ওনারা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। হকি রাজশাহীর একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা। রাজশাহী থেকে অনেক খেলোয়াড় জাতীয় দলে অতীতে খেলেছেন; বর্তমানেও খেলছেন। শামীম ভাই, রবি ভাই, শিশু ভাই, রাজন ভাইদের মতো তারকা খেলোয়াড়রা রাজশাহী থেকে জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। রাজশাহীর হকি অতীতেও ভালো অবস্থায় ছিল; ভবিষ্যতেও থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৩
এআর/আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।