টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তী ক্রিস গেইলের নাম সর্বজনবিদিত। বিশ্বের যে প্রান্তেই ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগ অনুষ্ঠিত হয়; সেখানেই দেখা মেলে তার।
বর্তমানে শহিদুল চলমান প্রিমিয়ার লিগে দেশের পুরনো এবং জনপ্রিয় ক্লাব ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিংয়ের জার্সিতে খেলছেন। তবে লিগ চলাকালীন এক ফাঁকে সিলেটেও ঘুরে এসেছেন। অবশ্যই ব্যক্তিগত সফরে সিলেট ভ্রমণে যাননি। গিয়েছিলেন হকি খেলতে।
শহিদুল শুধু হকির ফেরিওয়ালাই নন; তিনি একজন অলরাউন্ডারও। হকির পাশাপাশি ফুটবল, ক্রিকেটও খেলেন এবং সেটা পেশাদার পর্যায়ে। কোচ হিসেবেও দারুণ কাজ করছেন। খেলাধুলার পাশাপাশি টুকটাক ব্যবসাও আছে তার। এত কিছু না করে উপায় আছে। যে দেশে হকি লিগ হয় বিশ্বকাপ ফুটবল আদলে; প্রতি চার বছর/ তিন বছরে একবার। সে দেশে শহিদুলের মতো অলরাউন্ডার না জন্মে উপায় আছে। পেটের তাগিদেই এত কিছু করতে হচ্ছে দেশের হকিতে পরিচিত মুখ, অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড শহিদুলকে। এ ব্যাপারে শহিদুল বলেন, ‘আমাদের দেশে হকিতে নিয়মিত লিগ হয় না। এই যে এবার লিগ হচ্ছে তাও ২৮ মাস পর। তাহলে এতগুলো মাসে আমরা কিভাবে বেঁচে ছিলাম। কিভাবে খেয়েছি-পরেছি তা দেশের কেউ কি খবর নিয়েছেন। ফেডারেশনই বা আমাদের জন্য কি করেছেন? আমি চাই দেশে নিয়মিত হকি খেলা হোক, প্রিমিয়ার লিগটা নিয়মিত হোক। আমার মতো যারা বিভিন্ন জেলা থেকে লিগ খেলতে ঢাকায় আসেন; তাদের আর অন্য কিছুর জন্য ভাবতে হবে না। ’
দেখতে দেখতে হকিতে দেড় দশক (১৫ বছর) পার হয়ে গেছে শহিদুলের। ২০০৯ সালে নিজ জেলা চট্টগ্রামে হকিতে হাতেখড়ি। স্কুল হকি থেকে যাত্রা। সেখান থেকে নিজ জেলার হয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে যুব হকি সবখানে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ২০১১ সালে ঢাকায় পা রাখার আগে চট্টগ্রাম লিগে মুক্তিযোদ্ধার হয়ে অভিষেক তার। এরপর ঢাকায় খেলেন যুব হকিতে। সেখান থেকে পরে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ গেমসে, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ যুব গেমসে। দেশের ঘরোয়া হকিতে শুরুটা প্রথম বিভাগে বাংলাদেশ রেলওয়ের হয়ে। ২০১৩ সালে দলকে প্রথম বিভাগ থেকে প্রিমিয়ার লিগে তুলে আনতে বিরাট ভূমিকা রাখেন শহিদুল। এরপর ২০১৬ সালে প্রথমবার খেলেন ঘরোয়া লিগের সর্বোচ্চ আসর প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লিগে। ২০১৬ ও ২০১৮ দুই লিগে ছিলেন অ্যাজাক্সের টেন্টে। এরপর সবশেষ ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত লিগ খেলেছেন ওয়ারী ক্লাবের হয়ে। এবার খেলছেন ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের জার্সিতে। এছাড়া ক্লাব কাপ হকিতে দুবার, বিজয় দিবস হকিতে দুবার, ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে দুবার, স্কুল হকিতে তিনবার, চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার লিগে পাঁচবার, ময়মনসিংহ এবং সিলেট লিগে একবার করে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে শহিদুলের।
শহিদুলের পরিবার ক্রীড়াপ্রেমী, ক্রীড়ামোদী এক পরিবার। শহিদুলসহ তার পরিবারের ৭ জন দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে হকি খেলার সঙ্গে জড়িত। তালিকায় শহিদুলরাই আছেন আপন তিন ভাই। চাচাতো ভাই ৪ জন। শহিদুলের আপন বাকি দুই ভাইয়ের একজন প্রিমিয়ার লিগ হকিতে রেলওয়ের জার্সিতে; অপর জন সবশেষ লিগে খেলেছেন সোনালী ব্যাংকের হয়ে। শহিদুলের ছোট ভাই এ বছরও খেলতেন। কিন্তু ইনজুরির কারণে খেলা হয়নি তার। পরিবারের মধ্যে খেলাধুলার আবহ ছিল। আপন চাচাতো ভাই শিমুলকে দেখেই মূলত হকির প্রেমে মজে শহিদুল। শিমুল প্রথম বিভাগ হকিতে কম্বাইন্ড এসসির হয়ে খেলেছেন। কম্বাইন্ডকে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে তুলে এনেছিলেন শিমুল। ওই লিগে সেরা প্লেয়ারও হয়েছিলেন। চাচাতো ভাইয়ের এমন সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হন শহিদুল। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন একদিন তিনিও হকি খেলবেন। হকিতে অনুপ্রেরণা চাচাতো ভাই হলেও এলাকার বড় ভাই সুমনের হাত ধরেই নাকি এই অঙ্গনে আসা শহিদুলের। জীবনের এ পর্যায়ে এসে এখনো প্রিয় সুমন ভাইকে স্মরণে রেখেছেন এই ফরোয়ার্ড এবং আমৃত্যু স্মরণে থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন।
মাঠে নিয়মিত খেলার পাশাপাশি কোচিং পেশায়ও যুক্ত হয়েছেন চট্টগ্রামের ছেলে শহিদুল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করা এ হকি খেলোয়াড় চট্টগ্রাম সেনাবাহিনীর ডিপ টিমের কোচ। নিজ দলকে ইতোমধ্যে রানার্স আপ ট্রফি এনে দিয়েছেন। এর বাইরে বিকেএসপি কাপে চট্টগ্রাম জেলার কোচ হিসেবেও সাফল্যের স্মারক এঁকেছেন। ছেলেদের পাশাপাশি নারী দলের কোচ হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত ডেভেলপমেন্ট কাপ মহিলা লিগে রাঙামাটি ও কক্সবাজার জেলা নারী হকি দলের কোচ ছিলেন। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা লিগে অংশ নেয়া ক্লাব শতদল জুনিয়রের পাশাপাশি একটি স্কুল হকি টিমের কোচিংয়ের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন শহিদুল। শুধু খেলোয়াড় হিসেবে নন; হকিতে যে কোনো ভূমিকায় থেকে কাজ করে যেতে চান শহিদুল। পাশাপাশি এগিয়ে নিয়ে যেতে চান দেশের পুরুষ এবং নারী হকি দলকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৪
এআর