ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

দখল নয়, শিশুদের অনুরোধেই বসানো হচ্ছে টার্ফ: মেয়র আতিক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, স্পোর্টস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩১ ঘণ্টা, মে ৯, ২০২৪
দখল নয়, শিশুদের অনুরোধেই বসানো হচ্ছে টার্ফ: মেয়র আতিক

গুলশান-২ এলাকায় অবস্থিত তাজউদ্দিন আহমেদ স্মৃতি পার্কের একটি অংশে তৈরি করা হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল টার্ফের ফুটবল মাঠ। এতে অভিযোগ উঠেছে পার্ক অবৈধভাবে দখল করে মাঠ তৈরি করছে গুলশান ইয়ুথ ক্লাব।

তবে এমন অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। বরং শিশুদের অনুরোধেই পার্কে টার্ফের মাঠ করা হচ্ছে।

তাজউদ্দিন আহমেদ স্মৃতি পার্কে বর্ষাকালে ফুটবল খেলা কঠিন। কাদার কারণে সারা বছর সেখানে ফুটবল খেলা যায় না। তবে এই টার্ফের কারণে সারা বছরই সেখানে শিশুরা ফুটবল খেলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন মেয়র আতিক। তিনি বলেন, ‘তাজউদ্দিন পার্ক দখল হচ্ছে না। বরং এলাকার ছেলে-মেয়েরা তাদের অভিভাবকসহ আমার কাছে এসে বলেছিল আমাদের একটা আন্তর্জাতিক মানের টার্ফ করে দেন, যেন আমরা সারা বছর ফুটবল খেলতে পারি। কারণ এখানে বৃষ্টির দিনে ফুটবল খেলা যায় না। তারা সারা বছর ফুটবল খেলতে চায়। তারা যেন সারা বছর ফুটবল খেলতে পারে, তাই ছোট করে তাদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের টার্ফের মাঠের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। ’

‘দুই দলে পাঁচ জন করে ভাগ হয়ে এই টার্ফের মাঠে ম্যাচ খেলতে পারবে। টার্ফের জন্য উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে যেন বর্ষাকালেও খেলা চলতে পারে। আমি এবং আমার সকল কাউন্সিলর সকলেই দখলের বিরুদ্ধে পরিবেশ রক্ষার পক্ষে। এখানে পার্ক দখল হওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না। ’ 

গুলশান এলাকার একমাত্র ক্রীড়া সংগঠন হিসেবে সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে গুলশান সেন্ট্রাল পার্কে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন ও পরিচালনা করে আসছে গুলশান ইয়ুথ ক্লাব। প্রতিষ্ঠালগ্নে শুধুমাত্র ক্রীড়া সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে স্পোর্টস ক্লাবের পাশাপাশি এটি একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবামূলক সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।  

যা এলাকাবাসীর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অবদান রেখে আসছে। খেলাধুলার পাশাপাশি হাঁটা, সান্ধ্য-কালীন হাঁটা-চলা, শরীরচর্চা, আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের অনুশীলন ও প্রতিযোগিতার আয়োজন ও ব্যবস্থা করে আসছে তারা। এছাড়াও স্পোর্টস বিয়ন্ড স্লোগানটিকে সামনে রেখে খেলাধুলার পাশাপাশি সমাজ সংস্কারমূলক, জাতীয় বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানো ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বিকাশের মাধ্যমে সমাজ সচেতন হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।  

যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে গুলশান ইয়ুথ ক্লাব নিজ খরচে দুইটি আন্তর্জাতিক মানের টেনিস কোর্ট নির্মাণ করে, ওয়াকওয়ের পাশে নিরাপত্তার প্রয়োজনে স্ট্রিট লাইটিং, মহিলা ও পুরুষদের জন্য পৃথক মানসম্পন্ন পাবলিক টয়লেট, বাস্কেটবল কোর্ট, সুইমিং পুল, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, রোলার স্কেটিং কোর্ট, ব্যায়ামাগার, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য পাঠশালা, দুস্থদের জন্য ফ্রি মেডিকেল সেন্টার, দরিদ্র মহিলাদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিনা বেতনে সেলাই শিক্ষার ব্যবস্থা, ক্রিকেট পিচ, খেলার মাঠ তৈরি করে যা পরবর্তীতে সর্বমহলে প্রশংসিত হয় এবং পরবর্তীতে পার্কটির মাস্টার প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত হয়। এছাড়াও যথাযথ কর্তৃপক্ষের পরামর্শ ও সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান রেখে এখন পর্যন্ত গুলশান ইয়ুথ ক্লাব নিজ অর্থায়নে পার্ক, অভ্যন্তরীণ মাঠ, অবকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ ও সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করে আসছে।

যে ইয়ুথ ক্লাবকে ঘিরে দখলের অভিযোগ সেই ইয়ুথ ক্লাব উদ্যোগ না নিলে এই পার্কের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়ত। ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকার গুলশান সেন্ট্রাল পার্কটির পূর্বাংশ বন কিডস ও সম্মুখ অংশ ওয়ান্ডারল্যান্ড চিলড্রেন পার্ক এর কাছে হস্তান্তর করার উদ্যোগ নেয়। তখন পার্কের সামনের অংশ ওয়ান্ডারল্যান্ডকে হস্তান্তর করতে পারলেও গুলশান ইয়ুথ ক্লাব ও এলাকাবাসীর প্রবল বাধার মুখে মধ্যাংশের খেলার মাঠ গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের তত্ত্বাবধানে থেকে যায়।  

১৯৯৫ সালে ওয়ান্ডারল্যান্ডের অংশের বরাদ্দ বাতিল করার জন্য হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের হয়। দীর্ঘদিন মামলা চলার পরে ২০১২ সালে ওয়ান্ডারল্যান্ড চিলড্রেন পার্কটি উচ্ছেদের রায় প্রদান করা হয় এবং মধ্যাংশের খেলার মাঠ ও সন্নিবেশিত এলাকা গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের ব্যবস্থাপনায় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, সে সময়ে গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের ভূমিকা না থাকলে এলাকায় শিশুদের খেলাধুলা এবং বড়দের হাঁটাচলা করার জন্য মাঠ এবং উন্মুক্তস্থান বিলীন হয়ে যেত।  

২০১৭ সালে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এর মাধ্যমে রাজউক পার্কটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর কাছে হস্তান্তর করে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর তৎকালীন মেয়র আনিসুল হক নতুন করে পার্কটি সাজানোর উদ্যোগ নেন এবং শিশুদের বিভিন্ন খেলাধুলা ও সকলের হাঁটাচলার জন্য দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন অনুযায়ী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। ২০২২ সালে ডিসেম্বর মাসে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম পার্কটি সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেন এবং গুলশান সেন্ট্রাল পার্ক নাম পরিবর্তন করে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ স্মৃতি পার্ক হিসেবে নামকরণ করেন।  

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ স্মৃতি পার্ক পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য ২০২৩ সালে পার্কটি গুলশান ইয়ুথ ক্লাবকে দায়িত্ব প্রদান করে। গুলশান ইয়ুথ ক্লাব সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়ন এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সম্পূর্ণ পার্ক এলাকা এবং মাঠ পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে। গুলশান ইয়ুথ ক্লাব নিজস্ব তহবিল থেকে বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধ করছে।  

তাজউদ্দিন আহমেদ স্মৃতি পার্কে টার্ফের মাঠ তৈরির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের প্রতিনিধি জানান, বছরের একটি বড় অংশ বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত হয়ে মাঠটি খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অত্র এলাকার অধিবাসী, শিশু কিশোর ও অভিভাবকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এখানে বারো মাসই খেলার উপযোগী একটি ফুটবল টার্ফ (অ্যাস্টোটার্ফ) তৈরি করে দেওয়ার জন্য।  

এর প্রেক্ষিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী এলাকার ছেলে-মেয়েদের জন্য একটি আধুনিক ফুটবল টার্ফ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই ফুটবল টার্ফ বসানোর জন্য কংক্রিট ঢালাই দিয়ে তার ওপর কৃত্রিম ঘাসের আচ্ছাদন বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাঠটি তৈরি হলে এলাকার শিশু-কিশোররা সারা বছর এখানে খেলার জন্য একটি সবুজ মাঠ পাবে।  

মাঠে ফেন্সিং সম্পর্কে গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের প্রতিনিধি আরও জানান, ইতিপূর্বে ওয়াকওয়েতে যারা হাঁটাচলা করেন তারা বেশ কয়েকবার ক্রিকেট বল ও ফুটবল দ্বারা আহত হয়েছেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ও ওয়াকওয়েতে যারা হাঁটাচলা করেন তাদের অনুরোধে তাদের নিরাপত্তার জন্য ফেন্সিং করা হয়েছে। গুলশান ও বনানী এলাকার বিভিন্ন পার্কে ওয়াকওয়ের চারপাশে নিরাপত্তার জন্য ফেন্সিং করা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, মে ৯, ২০২৪
এআর/এএইচএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।