ঢাকা: কোপা আমেরিকার ৪৪তম আসরে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে মাঠে নামে আর্জেন্টিনা আর জ্যামাইকা। আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসির শততম ম্যাচে জয় নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করতে চেয়েছিল আলবেসেলিস্তারা।
এ ম্যাচের মধ্য দিয়ে দেশের জার্সি গায়ে শততম ম্যাচ খেলার মাইলফলকে পৌঁছান মেসি। বার্সেলোনার হয়ে ট্রেবল জয়ী মেসি প্যারাগুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে একটি গোল করেছিলেন। তবে, নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে কোনো গোল পান নি চারবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এ তারকা।
ম্যাচের এগারোতম মিনিটেই লিড নেয় আর্জেন্টিনা। জ্যামাইকার ডি-বক্সে ঢুকে ম্যানচেস্টার উইনাইটেড তারকা অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া বল বাড়িয়ে দেন হিগুয়েনকে। তিনজন ডিফেন্ডারের মাঝে বল পেয়েও দারুণ এক শটে জ্যামাইকার জালে বল জড়ান হিগুয়েন।
ম্যাচের ১৩ মিনিটের মাথায় আবারো ডি মারিয়া-হিগুয়েনের আক্রমণ। তবে, এবারে নিষ্ফল হতে হয় আর্জেন্টিনাকে। ২০ মিনিটে মার্কোস রোহোর বাড়ানো বলে সরাসরি শটে গোল করতে চেয়েছিলেন জাবালেতা। তবে, জ্যামাইকার ডিফেন্সে বাধা বাইরে বেরিয়ে যায় বল। দুই মিনিট পরেই ফের হিগুয়েনের আক্রমণ। এবারে ফাঁকায় দাঁড়ানো অবস্থায় বল পান হিগুয়েন। গোলবারের নিচ থেকে জ্যামাইকান গোলরক্ষক বেরিয়ে এলে তার মাথার উপর দিয়ে বল পাঠান হিগুয়েন। ভাগ্য সহায় হয়নি বলে গোলবারের উপরে লেগে বল চলে যায় বাইরে।
খেলার ৩২ মিনিটের মাথায় পাস্তোরের থেকে বল পান মেসি। বা-পায়ের কোনাকুনি শট নেন বার্সা তারকা। তবে, গোলবারের অল্প বাইরে দিয়ে বল চলে গেলে শততম ম্যাচে গোলের জন্য অপেক্ষা বাড়ে মেসির।
সময়ের সঙ্গে ডি মারিয়া আর হিগুয়েনের জুটি বেশ দারুণ জমতে থাকে। ৩৪ মিনিটে মাশচেরানোর থেকে বল পান ডি মারিয়া, সেখান থেকে রিয়ালের সাবেক তারকা বল বাড়ান হিগুয়েনের উদ্দেশ্যে। তবে, এবার হিগুয়েন ব্যর্থ হলেও এক মিনিট পরেই আবারো সুযোগ পান তিনি। গোলবারের ডানপাশ দিয়ে শট নিলে তা জালের উপর দিক দিয়ে জড়িয়ে যায়।
৩৯ মিনিটে প্রায় ফাঁকায় বল নিয়ে জ্যামাইকার ডি-বক্সে প্রবেশ করেন ডি মারিয়া। গোলবারের নিচ থেকে এবারো দৌড়ে বেরিয়ে আসেন জ্যামাইকান গোলরক্ষক মিলার। মারিয়া শট নিলে নিশ্চিত গোলের হাত থেকে জ্যামাইকান ডিফেন্সের দায়িত্ব পালন করা খেলোয়াড় তা দৌড়ে এসে প্রতিহত করেন।
শুরু থেকেই অসাধারণ খেলতে থাকা ডি মারিয়া ৪২ মিনিটে রোহোর কাছ থেকে বল পেয়ে জোরালো শট নেন। তবে, মিলার দারুণ দক্ষতায় কর্নারের মাধ্যমে বল ক্লিয়ার করেন। ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় মেসি বাহিনী।
বিরতির আগে আর্জেন্টিনা ৮২ শতাংশ বলের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে ধরে রাখে। বিরতির পর ৫২ মিনিটের মাথায় মেসির বানিয়ে দেওয়া বলে শট নেন ডি মারিয়া। ২০ গজ দূর থেকে নেওয়া ম্যানইউ তারকার শটটি গোলবারে লেগে ফিরে আসলে বিশ্বকাপের রানার্সআপ দলটি লিড বাড়াতে পারেনি। পরের মিনিটে ডি-বক্সের কিছুটা বাইরে মেসিকে ফেলে দেওয়ায় ফ্রি-কিক পায় আর্জেন্টিনা। মেসির নেওয়া ফ্রি-কিকটি সরাসরি গোলরক্ষকের হাতে জমা পড়ে।
খেলার ৫৭ মিনিটে জমে উঠা ডি মারিয়া-হিগুয়েন জুটি থেকে গোলের সম্ভাবনা জাগে। হিগুয়েনের নেওয়া শটে ডিফেন্স বাধা দিলে ফিরতি বল পান মেসি। গোলরক্ষককে সামনে আসতে দেখে উপর দিয়ে শটও নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, শততম ম্যাচে এবারো মেসিকে গোলবঞ্চিত করেন জ্যামাইকান গোলরক্ষক। লাফিয়ে উঠে মেসির নেওয়া শটের বলটিকে রুখে দেন তিনি।
খেলার ৬২ মিনিটে প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনার ডিফেন্সে ব্যস্ততা দেখা যায়। বিগলিয়া ফাউল করলে ৩০ গজ দূর থেকে ফ্রি-কিক লাভ করে টুর্নামেন্টে অতিথি হিসেবে খেলতে আসা জ্যামাইকা। তবে, পুরোপুরি ডিফেন্সিভ খেলতে থাকা দলটি ফ্রি-কিক থেকে কোনো সুযোগ আদায় করে নিতে পারেনি।
৭১ মিনিটে পেরেইরার বাড়ানো বলে শট নিতে ব্যর্থ হন হিগুয়েন। নয়তো নিশ্চিত গোলের দেখা পেতে পারতেন তিনি। পরের মিনিটে আর্জেন্টাইন কোচ জেরার্ড মার্টিনো হিগুয়েনকে তুলে নিয়ে কার্লোস তেভেজকে মাঠে নামান।
৮৩ মিনিটে জ্যামাইকার ডওকিনসের শট আর্জেন্টাইন ডিফেন্সে বাধা পায়। ৮৮ মিনিটে ম্যাকক্লেয়ারি তিন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বল নিয়ে গোলমুখে ঢুকলেও শেষ মুহূর্তে মাশচেরানো তাকে প্রতিহত করেন।
ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে ১-০ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা। পুরোপুরি ডিফেন্সিভ খেলা জ্যামাইকার বিপক্ষে এ জয়ে আর্জেন্টিনা ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট করে নিল। সর্বোচ্চ ৭ পয়েন্ট পাওয়া আর্জেন্টিনার পরে ৫ পয়েন্ট নিয়ে পরের রাউন্ডে উঠেছে প্যারাগুয়ে। উরুগুয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের তৃতীয় আর জ্যামাইকা কোনো পয়েন্ট না পেয়ে গ্রুপের চতুর্থ দল হিসেবে আসর থেকে ছিটকে পড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৩১ ঘণ্টা, ২১ জুন ২০১৫
এমআর
** জ্যামাইকার বিপক্ষে মাঠে নেমেছে আর্জেন্টিনা
** শততম ম্যাচ খেলতে নামছেন মেসি