ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

টাইব্রেকারে কলম্বিয়াকে হারিয়ে সেমিতে আর্জেন্টিনা

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৮ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৫
টাইব্রেকারে কলম্বিয়াকে হারিয়ে সেমিতে আর্জেন্টিনা সংগৃহীত

ঢাকা: নাটকীয়তায় পূর্ণ পেনাল্টি শুট আউটে কলম্বিয়াকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করেছে মেসির আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত সময়ের খেলা গোলশূন্যভাবে শেষ হলে ফলাফল নির্ধারণে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।

উভয় দল প্রতিপক্ষের জালে সাতটি করে শট নিলেও, ৫-৪ গোলের জয় সেমিফাইনালের টিকিট পাইয়ে দেয় আর্জেন্টিনাকে।

টাইব্রেকারে কলম্বিয়ার প্রথম তিন শটে হামেস রদ্রিগেস, রাদামেল ফালকাও ও হুয়ান কুয়াদরাদো লক্ষ্যভেদ করেন। আর্জেন্টিনার অধিনায়ক মেসি, এজেকুয়েল গ্যারে, এভার বানেগাও প্রথম তিন শটে বল জালে পাঠান।

কলম্বিয়ার চতুর্থ শটে ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে বল মেরে দেন লুইস মুরিয়েল। তবে পরের শটে এজেকুয়েল লাভেজ্জি লক্ষ্যভেদ করলে ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।

পঞ্চম শটে এদউইন কারদোনা কোনোমতে গোল পাওয়ায় আশা টিকে ছিল কলম্বিয়ার। পরের শটে লুকাস বিলিয়া গোল পেলেই জিতে যেত আর্জেন্টিনা। কিন্তু তিনি ডান পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে শট নেওয়ায় ৪-৪ গোলে সমতায় থাকা টাইব্রেকার গড়ায় সাডেন ডেথে।

নাটকের এখানেই শেষ নয়! সাডেন ডেথে কলম্বিয়ার হুয়ান জুনিগার শট ঠেকিয়ে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরো। আবার সুযোগ আসে আর্জেন্টিনার সামনে; কিন্তু মার্কোস রোহোর শট গিয়ে লাগে ক্রসবারে!

কলম্বিয়ার জেইসন মুরিয়ো পরের শট মেরে দেন ক্রসবারের ওপর দিয়ে। পেনাল্টি শুটআউটে জেতার তৃতীয় সুযোগটি আর নষ্ট করেনি টুর্নামেন্টের ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নরা। কার্লোস তেভেজ লক্ষ্যভেদ করলে উল্লাসে ফেটে পড়ে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় আর সমর্থকরা।

এর আগে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলায় কলম্বিয়ার গোলরক্ষক দাভিদ অসপিনার দৃঢ়তায় গোল-বঞ্চিত থাকতে হয় জেরার্দো মার্তিনোর দলকে।

চিলির ভিনা দেল মারে বাংলাদেশ সময় শনিবার (২৮ জুন) ভোরে পরিপূর্ণ স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতেই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় আর্জেন্টিনা।

ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে ডি মারিয়ার ক্রস থেকে বল পান পাস্তোরে। গোলবারের কোনা থেকে আলতো টোকা দিয়ে বল জালে জড়াতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে, শেষ মুহূর্তে কলম্বিয়ার মুরিলোর বাধায় কর্নার পায় আর্জেন্টিনা। কর্নার থেকে ডি মারিয়ার তুলে মারা বলে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে মার্কোস রোহো হেড করলেও তা বারের উপর দিয়ে চলে যায়।

দশম মিনিটে ডি মারিয়ার ক্রস থেকে বলের নাগাল পেতে ব্যর্থ হন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসি। দুই মিনিট পরে কলম্বিয়ার সেরা তারকা জেমস রদ্রিগেজ হলুদ কার্ড দেখেন। ২০ মিনিটের মাথায় কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে পেনাল্টির আবেদন করেন আর্জেন্টিনার তারকা সার্জিও আগুয়েরো। এরফলে তাকেও হলুদ কার্ড দেখতে হয়। আর পরের মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন কলম্বিয়ার মিডফিল্ডার মেহিয়া।

২৬ মিনিটের মাথায় পাস্তোরের ক্রস থেকে বল পান অ্যাগুয়েরো। গ্রুপপর্বে দুটি গোল করা অ্যাগুয়েরোর টোকায় বল জালে জড়ানোর আগ মুহূর্তে কলম্বিয়ার গোলরক্ষক ডেভিড অসপিনা দলকে রক্ষা করেন। ফিরে আসা বলে মেসি ছুটে এসে হেড করেন। এবারেও দারুণভাবে প্রতিহত করেন অসপিনা। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে দুটি নিশ্চিত গোল থেকে দলকে বাঁচিয়ে নিজে কিছুটা আহত হন অসপিনা।

ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে আর্জেন্টাইন কোচ মার্টিনো রেফারিদের নেওয়া বাজে সিদ্ধান্তগুলোর সমালোচনা করেন। এ ম্যাচেও দুই দলের উপর বেশ কয়েকটি বাজে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন দায়িত্বে থাকা গার্সিয়া অরোজকো। ৩৪ মিনিটে আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার মাশচেরানো আর ৩৭ মিনিটে কলম্বিয়ার আরিয়াস হলুদ কার্ড দেখেন। তিন মিনিট পর কলম্বিয়ার কুয়াদরাদো হলুদ কার্ড দেখেন।

আর্জেন্টিনার শক্ত ডিফেন্স চিড়ে কলম্বিয়া প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে চাপ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়। ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষে দুই দল গোলশূন্য অবস্থায় বিরতিতে যায়।

বিরতির পর আবারো উত্তেজনা ছড়ায় ম্যাচে। দুই দলই প্রতিপক্ষের ডিফেন্সকে ব্যস্ত রাখে। অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা দুই দলের ফুটবলারদের মাঠের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সাইডলাইনে বসে থাকা ফুটবলার আর কোচিং স্টাফদের মাঝেও।

৬১ মিনিটের মাথায় মেসির নেওয়া কোনাকুনি ফ্রি-কিক গোলবারের উপর দিয়ে চলে যায়। ৬৭ মিনিটের মাথায় কলম্বিয়া একটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ চালায় আর্জেন্টাইন শিবিরে। কুয়াদরাদোর বাড়ানো বলে শট নেন রদ্রিগেজ, ডিফেন্সে বাধা পেয়ে বল ফিরে এলে তাতে শট নেন ইবারবো। কিন্তু তাতেও গোলের দেখা পায়নি গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালিস্টরা।

৭২ মিনিটে অ্যাগুয়েরোর বাড়ানো বল নিয়ে কলম্বিয়ার বক্সে অনেকটা একাই ঢুকে পড়েন মেসি। তবে, দুই ডিফেন্ডারের বাধায় বলের নিয়ন্ত্রণ হারান বার্সেলোনার সেরা তারকা। পরের মিনিটে অ্যাগুয়েরোকে তুলে নিয়ে মার্তিনো বদলি হিসেবে মাঠে নামান কার্লোস তেভেজকে। আর জ্যাকসনের বদলি হিসেবে হোসে পেকারম্যান মাঠে নামান রাদামেল ফালকাওকে।

৭৭ মিনিটে পাস্তোরের বদলি হিসেবে আর্জেন্টাইনদের দলে যোগ দেন এভার বানেগা। নেমেই তার ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া একটি শট কলম্বিয়ার গোলবার ছুঁয়ে যায়। দুই মিনিট পর ডি মারিয়ার বাঁকানো কর্নার শটে ওতামেন্ডি শট নিলে অসপিনার হাতে লেগে গোলবারে বাধা পায়।

৮৬ মিনিটের মাথায় কলম্বিয়ার অধিনায়ক ফালকাওকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। ৮৮ মিনিটে আবারও গোলের দারুণ সুযোগ নষ্ট করে আর্জেন্টিনা। প্রায় মধ্যমাঠ থেকে পাওয়া বল নিয়ে কলম্বিয়ার বক্সে প্রবেশ করেন তেভেজ। অসপিনা আর একজন ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিলেও গড়িয়ে যাওয়া বলে শেষ মুহূর্তে পা লাগিয়ে দলকে আরেকটি নিশ্চিত গোলের মুখ থেকে রক্ষা করেন জাপাতা। উত্তেজনাপূর্ণ এ ম্যাচের ৯০ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসি।

সেমি-ফাইনালে আর্জেন্টিনার সঙ্গে লড়তে শনিবার (২৯ জুন) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় প্যারাগুয়ের মুখোমুখি হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৮ ঘণ্টা, ২৭ জুন ২০১৫/আডডেট: ০৯১৪ ঘণ্টা
এমআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।