ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

পল্টন ময়দান ও স্টেডিয়াম পাড়ার বেহাল দশা

ইয়াসির উবাইদ জিকো, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩২ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৫
পল্টন ময়দান ও স্টেডিয়াম পাড়ার বেহাল দশা ছবি: শোয়েব মিথুুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দেখে মনে হবে এ যেন ‘মাদকের হাট’। সারাদিন মাদকের বেচাকেনা।

সেই সাথে ছিন্নমূল মানুষের ঢল। আড়াল করার উপায় নেই দেহ ব্যবসাও! আর স্টেডিয়ামের পুরোটা জুড়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অবশিষ্ট খালি যায়গা জুড়ে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। ন্যূনতম ক্রীড়াবান্ধব পরিবেশ বলে নেই কিছুই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি ঐতিহ্যবাহী পল্টন ময়দান ও বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকার বর্তমান চিত্র এটাই।

ক্রিকেট ছাড়া চল্লিশের বেশি ক্রীড়া ফেডারেশনের অবস্থ‍ান এই স্টেডিয়াম ঘিরে। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের প্রাণ আজ ব্যবসা-মাদক-অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত। শুরু করা যাক পল্টন ময়দান থেকে, ঐতিহ্যবাহী মাঠটির বর্তমান দশা খুবই খারাপ। মাঠ বলতে যা বুঝায় তার কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। মাঠ ছোট-বড় গর্তে ভরা। ঘাস বলতে কিছু গুল্মলতা বেঁচে আছে কোনোমতে। ঘাসের চেয়ে যা মাঠে থাকার কথা নয়, সেই ঝোপ-ঝাড়গুলো বেশ সগর্বে আছে এ মাঠে।  

মাদক সেবন থেকে শুরু বেচাকেনা সবই হচ্ছে এখানে। হবে না কেন? ঢাকা শহরে কোটি মানুষের বাস, আর পল্টন ময়দানের মতো যায়গায় কোনো ধরনের ঝুঁকি ছাড়া মাদক সেবনের স্থান দ্বিতীয়টি আর নেই। এমনকি মাঠটিতে নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সীমানা প্রাচীরও ভাঙা। আর সেই সাথে কর্তৃপক্ষে উদাসীনতা তো আছেই। শোনা যায়, এ চক্রের হাত নাকি খুব শক্তিশালী। তাইতো রাষ্ট্রপতির বাসভবন থেকে মাত্র ৩০/৩৫ গজ দূরে অবস্থিত মাঠে কোনো ঝামেলা ছাড়াই চলছে মাদকের ব্যবসা।

এ সম্পর্কে নবনিযুক্ত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস জানালেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে বেশ কিছু দিন আগে সেখানে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজের চোঁখে দেখতে পেলাম। তবে এটা আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর দ্বায়িত্ব বলে আমি মনে করি। তবে মাঠের সীমানা প্রাচীর ভাঙা। আমরা শিগগিরই সীমানা প্রাচীর স্থাপনের ব্যবস্থা করব। ’

সাবেক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব শিবনাথ রায়ের মতো নবনিযুক্ত এই সচিবও কোন সময় সীমা উল্লেখ না করেই বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে চেষ্টা করবো প্রাচীর নির্মাণের। তবে নির্দিষ্ট করে কোনো তারিখ বলা যাচ্ছে না। ’

এ মাঠের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের প্রশাসক মো. ইয়াহিয়া স্বীকার করে নিলেন তার সীমাবদ্ধতার কথা। ‘আমি একা এদের সাথে পেরে উঠছি না। এরা সংখ্যায় ও শক্তিতে অনেক এগিয়ে আমাদের থেকে। আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী নেই। তাই প্রশাসনকেই এগিয়ে আসতে হবে। ’

দিনের বেলার চিত্র আর রাতের চিত্রে খানিকটা পার্থক্য আছে। দিনের বেলা দেখা  যায় শত শত গাড়ি পার্ক করা রয়েছে স্টেডিয়াম এলাকায়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মালামাল পরিবহনের পিক-আপ ও ক্রেতাদের গাড়ি পুরো স্টেডিয়ামের গা জুড়ে। পা ফেলার জায়গা নেই কোথাও। এমনকি আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতেও এখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকে। পৃথিবীর কোনো স্টেডিয়াম পাড়ায় এ চিত্র চোখে পড়বে বলে আশাও করা যায় না।

এ প্রসঙ্গে ক্রীড়া সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘এখন আর পার্কিংয়ের জন্য লিজ দেওয়া হয় না। তারপরেও যে গাড়িগুলো দেখতে পান সেগুলো দোকান মালিকদের ও ক্রেতাদের গাড়ি। তবে আগে যে ব্যাপক হারে গাড়ি দেখা যেত তা এখন আর নেই। ’

বাস্তব চিত্র কিন্তু ক্রীড়া সচিবের বক্তব্যের সঙ্গে মেলে না। হয়তো লিজ দেওয়া হয় না। তাই বলে গাড়ি পার্কিং কিন্তু বন্ধ নেই।

আর সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে ছিন্নমূল মানুষের ঢল নামে এখানে। প্রায় হাজার খানেক মানুষ রাতে আশ্রয় নেয় এই স্টেডিয়াম পাড়ায়। এটি হয়তো বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট হিসেব করলে কোনো সমস্যা নয়। তবে মূল সমস্যা হলো এর আড়ালেই চলে মাদক আর দেহ ব্যবসা। রাত বাড়ার সাথে সাথে মাদকের গন্ধে ভরে ওঠে স্টেডিয়াম পাড়া।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা প্রশাসক মো. ইয়াহিয়া জানান, ‘রাতে মাত্র তিন জন নিরাপত্তা প্রহরী দিয়ে কিভাবে আমি এত বড় স্টেডিয়ামে নিরাপত্তা প্রদান করবো। লোকবল না বাড়ালে কিছুই করা সম্ভব নয়। ’

প্রয়োজনের তুলনায় লোকবল সত্যিই অনেক কম। তাহলে এ স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা দেবে কে? সংশ্লিষ্ট কর্তারা তাদের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করেই নিলেন। তাহলে এ স্টেডিয়াম পাড়ার দ্বায়িত্ব কার?

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৫
ইয়া/এমএমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।