ঢাকা: লিওনেল মেসি, গঞ্জালো হিগুয়েইন, সার্জিও আগুয়েরো, এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া বিশ্বের বাঘা বাঘা গোলরক্ষকদের জন্য এক ভয়ংকর মূর্তমান ত্রাস।
এদের যে কোনো একজনই রক্ষণ দুর্গকে নিমিষেই দুমড়ে-মুচড়ে দিতে যথেষ্ট।
একটি দুটি বছর নয় দীর্ঘ ২২ বছর ধরে শিরোপা খরায় ভুগছে বিশ্বের অন্যতম ফুটবল শক্তির এ দেশ। বিশ্বকাপে খরা কাটার আভাস দিয়েও শেষ পর্যন্ত তা আর চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ছুয়ে দেখা হয়নি ফুটবল ঈশ্বর হিসেবে পরিচিত ডিয়োগ ম্যারাডোনার উত্তরসূরীদের। তাই দীর্ঘ বছর শিরোপা না পাওয়ার বেদনায় অশ্রুসিক্ত আর্জেন্টিনা। তবে এবার কি থামবে আর্জেন্টিনার কান্না! এমন প্রশ্ন লক্ষ-কোটি ফুটবল ভক্তদের।
ফাইনালে জার্মানির কাছে ১ গোলে হেরে চোখের জলে বিদায় নিতে হয়েছে আর্জেন্টিনার সুপার হিরোদের। সেই সঙ্গে চোখের জ্বলে ভিজিয়েছেন দেশ-বিদেশের কোটি-কোটি ভক্ত- সমর্থকদের।
অবশ্য সেবার (বিশ্বকাপ ফাইনালে) অন্যতম তারকা এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া খেলতে পারেননি। যা কিছুটা হলেও আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছলো জার্মানির জন্য। বিশ্বকাপের পর অনুষ্ঠিত প্রীতি ম্যাচেও যার আভাস পাওয়া যায়। লিওনেল মেসিবিহীন সেই ম্যাচে ডি মারিয়ার ফুটবল নৈপুণ্য ৪ গোল হজম করতে হয় জার্মানিকে।
এবার অবশ্য লিওনেল মেসি, গঞ্জালো হিগুয়েইন, সার্জিও আগুয়েরো, এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া কাউকে মিস করছে না আর্জেন্টিনা। ফ্যাব ফোরের চার জনই খেলবেন কোপা আমেরিকার ফাইনালে। সেই সঙ্গে আছেন আর এক তারকা কার্লোস তেভেজ।
তাই দেশটির ফুটবল ভক্তরা নিজের দলকে নিঃসন্দেহে ফেবারিট ধরে নিতে পারেন। রক্ষণভাগের কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও ফ্যাব ফোরের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দীর্ঘদিনের শিরোপা খরা কাটিয়ে দেবে এমন স্বপ্ন দেখতেই পারেন দেশটির ফুটবল ভক্তরা।
লিওনেল মেসি, গঞ্জালো হিগুয়েইন, সার্জিও আগুয়েরো, এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া এক একটি সুপার হিরোর সুপার ম্যাজিক দেখতে সকাল থেকেই কাউন্ট ডাউনে নেমে পড়েছেন দলটির ভক্ত-সমর্থকেরা।
বর্তমান বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সফল এ চার আক্রামণকারী নিজ ক্লাবের পক্ষে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে হয়ে উঠেছেন ক্লাবের মধ্যমণি। এখন দেশের জন্য এক সঙ্গে লড়বেন তারা।
ক্লাব ফুটবলে নিজ ক্লাবকে দু’হাত উজার করে দেওয়া এ চার সুপার হিরো কি পারবেন আকাশী-সাদা জার্সিধারীদের শিরোপা খরা কাটাতে। তা দেখতে আর খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না। যথারীতি খেলা শুরু গেছে। এখন সময়ই বলবে সব কথা।
দেশটির ফুটবল ঈশ্বর ডিয়োগ ম্যারাডোনার হাত ধরে সেই ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ট্রফি উঁচু করে ধরে ছিলো আর্জেন্টিনা। এর পর একে একে ৭টি বিশ্বকাপ চলে গেলো আর বিশ্ব শিরোপা হাতে নিয়ে আনন্দ করতে পারেনি আর্জেন্টাইনরা।
এদিকে, ১৯৯৩ সালে দিয়োগা ম্যারাডোনা, গ্যাব্রিয়েন বাতিস্তুতা, দিয়োগ সিমিওনের হাত ধরে এসেছিলো কোপার আমেরিকার শিরোপা। এরপর আর বড় কোনো শিরোপার দেখা পাননি তারা।
বার্সেলোনার সুপারস্টার লিওনেল মেসি ইতোমধ্যেই ক্লাবের পক্ষে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। আর্জেন্টিনার কিংবদন্তী ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনাকে টপকে আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা গোল স্কোরারের আসনেও বসিয়েছেন নিজেকে।
কিন্তু দেশকে এনে দিতে পারেননি কোনো শিরোপা। ফলে আর্জেন্টিনার জার্সিতে বিবর্ণ মেসি এ বদনাম থেকেই গেছে তার নামের পাশে। কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতলে কিছুটা হলেও ঘুচবে সেই বদনাম।
ক্লাবকে দেওয়ার দিক থেকে ডি মারিয়াও পিছিয়ে নেই। চ্যাম্পিয়নস লীগ রিয়াল মাদ্রিদেকে চ্যাম্পিয়ান করতে রেখেছেন অন্যতম ভূমিকা। কিন্তু দেশকে শিরোপা এনে দিতে তিনিও ব্যর্থ হয়েছেন।
অবশ্য তারও ব্যর্থতা ঘুচাতে পারে শনিবার (৪ জুলাই) দিনগত গভীর রাতে চিলির বিরুদ্ধে হাইভোল্টেজ ম্যাচের মধ্য দিয়ে।
পায়ের কারুকাজে সতীর্থ মেসি, হিগুয়েইন ও আগুয়েরোকে ডিফেন্স চেরা পাসই দিতে পারলেই চলে আসতে পারে সুফল।
শিরোপা খরা কাটাতে সুযোগ সন্ধানী স্ট্রাইকার হিসেবে পরিচিত হিগুয়েইনকেও দেখাতে হবে পায়ের কারুকাজ। ফ্যাব ফোরের অপর সদস্য ম্যারাডোনার মেয়ে জামাই আগুয়েরো। শিরোপা খরা কাটাতে হলে তাকেও পায়ের কারসাজি দেখাতে হবে।
অবশ্য ছেড়ে কথা বলবে না চিলি। তারও ৯৯ বছরের শিরোপা খরা কাটাতে নিজেদের সবটুকু দিয়ে লড়বে। তার মধ্যে রয়েছে নিজের মাঠে খেলার দাপট। সে দিক থেকেও কিছুটা সুবিধা পাবে চিলি।
সেই সঙ্গে অ্যালেক্সিজ সানচেজ, ক্লদিয়ো ব্রাভো, ভরগাস, মেদেল, ভিদালরার মতো তারকারা আছেনই। এদের মধ্যে অ্যালেক্সিজ সানচেজ একাই গড়ে দিতে পারেন ব্যবধান। আর্জেন্টিনরা দুর্বল রক্ষণভাগকে বিপর্যস্ত করতে তিনিও হয়ে যেতে পারেন আজকের মহানায়ক।
বাংলাদেশ সময়: ০২২৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৫
এএসএস/টিআই
** আর্জেন্টিনা-চিলির সম্ভাব্য একাদশ
** শিরোপা খরা কাটাতে নামছে আর্জেন্টিনা-চিলি