ঢাকা: কোপা আমেরিকার ৪৪তম আসরের ফাইনালে এস্তাদিয়ো ন্যাসিওনাল মার্টিনেজ, সান্তিয়াগোতে তে মাঠে নামে গত বিশ্বকাপের রানার্সআপ আর্জেন্টিনা আর স্বাগতিক হিসেবে টুর্নামেন্টের শুরু থেকে ফেভারিটের তকমা লাগানো চিলি। টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনাকে ৪-১ এ হারিয়ে কোপার নতুন চ্যাম্পিয়ন হয় চিলি।
ম্যাচের প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি সুযোগ নষ্ট হলে কোনো দলই গোলের দেখা পায়নি। গোলশূন্য অবস্থায় বিরতিতে যায় শিরোপা প্রত্যাশী দুই দল। দ্বিতীয়ার্ধেও কোনো গোল না হলে অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচ গড়ায়। অতিরিক্ত সময়েও কোনো গোল না হলে পেনাল্টি শুটআউটে গড়ায় ফাইনাল।
চিলির হয়ে প্রথম শট থেকে গোল করেন ফার্নানদেজ। আর মেসির শটে গোল হলে সমতায় থাকে আর্জেন্টিনা। পরের শটে ভিদাল গোল করলে ২-১ এ এগিয়ে যায় চিলি। নিজেদের দ্বিতীয় শটে গঞ্জালো হিগুয়েন গোলবারের অনেক উপর দিয়ে বল মেরে দিয়ে দলকে বিপদে ফেলেন।
চিলির হয়ে তৃতীয় শটটিতে গোল করেন আরানগুয়েজ। আর নিজেদের তৃতীয় শটে গোল করতে ব্যর্থ হন এভার বেনেগা। তার শটটি ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন বার্সার গোলরক্ষক চিলিয়ান ব্রাভো। চতুর্থ শটে গোল করে শিরোপা নিশ্চিত করেন চিলির সেরা অস্ত্র অ্যালেক্সিজ সানচেজ।
এ জয়ের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতে নিল চিলি।
১৪বার কোপার শিরোপা জেতা আর্জেন্টিনার কোচ জেরার্ড মার্টিনো শুরুর একাদশে তার ছাত্রদের ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলান। আর আয়োজক চিলির কোচ জর্জ সাম্পাওলি তার শিষ্যদের শুরুর একাদশে ৪-৩-১-২ ফরমেশনে সাজান। আর্জেন্টিনার হয়ে ফাইনালের মঞ্চে শুরুতেই মাঠে নামেন সার্জিও রোমেরো, জাবালেতা, দেমিসিলিচ, অতামেন্ডি, মার্কোস রোহো, লুকাস বিগলিয়া, মাশচেরানো, পাস্তোরে, লিওনেল মেসি, সার্জিও আগুয়েরো এবং অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। অপরদিকে, চিলির হয়ে মাঠে নামেন ক্লদিয়ো ব্রাভো, ইসলা, মেদেল, সিলভা, বেউসেজোর, ভিদাল, ডিয়াজ, আরানগুয়েজ, ভালদিভিয়া, ভারগাস এবং অ্যালেক্সিজ সানচেজ।
লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা ২২ বছরের শিরোপা খরা কাটাবার লক্ষ্য নিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে মাঠে নামে। আর আর্জেন্টাইনদের প্রতিপক্ষ হয়ে ৯৯ বছর শিরোপা থেকে নিষ্ফলা থাকার যন্ত্রণায় কাতর চিলি নিজেদের মাটিতে একটি মেগা শিরোপা জিততে লড়াইয়ে নামে। ম্যাচের রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উইলমার রোলদান।
ম্যাচের শুরু থেকেই আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডারদের ব্যস্ত রাখেন লা রোজারা। হাইভোল্টেজ এ ম্যাচের ১৩ মিনিটে প্রথম আক্রমণ সাজায় চিলি। সানচেজ-ভিদালদের সে প্রচেষ্টা রুখে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক রোমেরো। ২২ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে প্রায় মাঝমাঠ থেকে একাই বল টেনে নিয়ে যান ভারগাস। কিন্তু শেষ মুহূর্তের অপেক্ষা না করে গোলবারের অনেক উপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন তিনি।
২০ মিনিটের মাথায় গোলবারের ডান দিক থেকে মেসির নেওয়া ফ্রি-কিকে চিলির বক্সে দাঁড়িয়ে হেড করেন আগুয়েরো। গোলের দারুণ সুযোগ থাকলেও স্বাগতিক গোলরক্ষক ব্রাভো ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন বল।
২৪ মিনিটে ডি মারিয়াকে ফাউল করেন চিলির সিলভা। যার কারণে কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মাঠ ত্যাগ করেন সেমিফাইনালে জোড়া গোল করা ডি মারিয়া। ২৯ মিনিটে ডি মারিয়ার বদলি হিসেবে মাঠে প্রবেশ করেন ইজিকুয়েল লাভেজ্জি।
৪৫ মিনিটে সানচেজের দুর্বল শট রুখে দেন রোমেরো। পরের মিনিটে সুযোগ পেয়েছিলেন লাভেজ্জি। তার জোরালো শটটি চিলিয়ান গোলরক্ষক ব্রাভোর হাতে লেগে ফিরে যায়। আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণে খেলা গড়ালেও প্রথমার্ধে কোনো দলই গোলের দেখা পায়নি।
বিরতির পর মাঠে নেমেই আক্রমণে যায় স্বাগতিকরা। অতামেন্ডিকে ফাঁকি দিয়ে সানচেজ গোলবারের বামদিক দিয়ে বল তুলে মারেন ডি-বক্সে থাকা ভিদালকে লক্ষ্য করে। হেড করলেও ভিদালকে গোলবঞ্চিত করেন রোমেরো। সরাসরি আর্জেন্টাইন গোলরক্ষকের গ্লাভসে বল জমা হয়।
৫১ মিনিটে আবারো আর্জেন্টাইনদের ডিফেন্সকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আক্রমণে যায় চিলি। বামপ্রান্তে ভিদাল দারুণ এক পাসে বল বাড়িয়ে দেন ভালদিভিয়াকে। তার নেওয়া শটটি কর্নারের মাধ্যমে রক্ষা করেন মার্টিনোর শিষ্যরা। ৫৫ মিনিটে মার্কোস রোহো আর মাশচেরানো হলুদ কার্ড দেখেন।
অতিরিক্ত সতর্কতা নিয়ে খেলতে থাকা মেসি-আগুয়েরোরা নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে সুযোগেন সন্ধান করতে থাকেন। ৬০ মিনিটের পর থেকে চাপ সামলে নিয়ে চিলির ডিফেন্সে বারবার চিড় ধরানোর চেষ্টা করেন আর্জেন্টাইন তারকারা। ৬৫ মিনিটে মেসির নেওয়া ফ্রি-কিক প্রতিহত হয় চিলির ডিফেন্ডারদের তৈরি করা দেওয়ালে। আর পরের মিনিটে সানচেজের বাড়ানো বলে ভিদালের জোরালো শট প্রতিহত করেন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার জাবালেতা।
৭৭ মিনিটে মার্টিনো আগুয়েরোকে তুলে নিয়ে মাঠে নামান গঞ্জালো হিগুয়েনকে। আর সাম্পাওলি ভালদিভিয়াকে তুলে নিয়ে মাঠে পাঠান মাতি ফার্নানদেজকে। ৮১ মিনিটে পিএসজির আর্জেন্টাইন তারকা পাস্তোরের বদলি হিসেবে মাঠে আসেন এভার বেনেগা।
৮৩ মিনিটে বামপ্রান্ত দিয়ে পাওয়া বলে জোরালো শট নেন সানচেজ। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলের গতি থামিয়ে দিতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন রোমেরো। বল তার হাতের নাগালের অল্প বাইরে দিয়ে চলে যায়। তবে, ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় আর্জেন্টিনার বার ঘেঁষে বল বাইরে চলে যায়।
৮৭ মিনিটে গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল মেসি-হিগুয়েনরা। আর্জেন্টাইন দলপতির বাড়ানো বলে হিগুয়েন-লাভেজ্জিরা শট নেওয়ার আগেই অফসাইডে বাধা পড়েন।
দ্বিতীয়ার্ধের অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে মেসি অসাধারণ দক্ষতায় বল নিয়ে চিলির বক্সে প্রবেশ করেন। বল বাড়িয়ে দেন লাভেজ্জিকে, সেখান থেকে বার ঘেঁষে বল পান হিগুয়েন। কিন্তু নাপোলির এ তারকার আলতো টোকায় বল গিয়ে পার্শ্বজালে জড়িয়ে যায়।
ফলে, নির্ধারিত সময় শেষে কোনো দল গোল না পাওয়ায় কোপা আমেরিকার ফাইনালের নিয়ম অনুযায়ী আরও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে ম্যাচটি গড়ায়।
৯৫ মিনিটে ভারগাসকে তুলে নিয়ে স্বাগতিক কোচ সাম্পাওলি মাঠে নামান অ্যাঞ্জেলো হেনরিকুয়েজকে। অতিরিক্ত সময়ের প্রথম অর্ধ শেষ হলেও দুই দল সমানে লড়তে থাকে। মধ্যমাঠের খেলা গড়াতে থাকে লং পাসে। ১০৪ মিনিটে ডানদিক থেকে মেসির নেওয়া ফ্রি-কিক আর একই মিনিটে কর্নার থেকে কোনো গোল আদায় করতে পারেনি আলসেলেবেস্তিয়োরা।
ফিরতি আক্রমণে আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারের ভুলে বল পেয়ে যান সানচেজ। একক প্রচেষ্টায় আর্সেনালের তারকা এ স্ট্রাইকারের নেওয়া শটটি আর্জেন্টিনার গোলবারের কয়েক ইঞ্চি উপর দিয়ে চলে যায়।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথম অর্ধে কোনো গোল হয়নি। দ্বিতীয় অর্ধে আবারো খেলা গড়ায়।
উত্তেজনা ছড়িয়ে আর্জেন্টিনার বক্সে একাধিকবার আক্রমণ চালায় স্বাগতিকরা। ১১৩ মিনিটে টপ-ডি থেকে জোরালো শট নেন হেনরিকুয়েজ। সেটিও আর্জেন্টিনার গোলবারের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। এরপর সেটপিসের সুযোগ নিয়ে চিলির শিবিরে আক্রমণ করে লাভেজ্জি-মেসিরা। কিন্তু শেষ মুহূর্তের ভালো ফিনিশিংয়ের অভাবে গোলের দেখা মেলেনি ১৫বারের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশায় থাকা আর্জেন্টিনার।
বাকী সময়েও আর কোনো গোল না হলে পেনাল্টি শুটআউটে গড়ায় ম্যাচ। আর তাতে হার্নানদেজ, ভিদাল, আরানগুয়েজ আর সানচেজের গোলে ৪-১ এ শিরোপা নিশ্চিত করে আয়োজক ও স্বাগতিক দেশ চিলি।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৫৭ ঘণ্টা, ০৫ জুলাই ২০১৫
এমআর
** ম্যাচ গড়িয়েছে অতিরিক্ত সময়ে
** প্রথমার্ধ গোলশূন্য আর্জেন্টিনা-চিলি
** শিরোপার লড়াইয়ে নেমেছেন মেসি-সানচেজরা
** আর্জেন্টিনা-চিলির সম্ভাব্য একাদশ
** শিরোপা খরা কাটাতে নামছে আর্জেন্টিনা-চিলি