ঢাকা: স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে বহু মাঠ কাঁপিয়েছেন আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি। গত বিশ্বকাপে কোটি-কোটি ভক্ত তার ওপর ভর করে স্বপ্ন দেখেছিল বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের।
কিন্তু গতিশীল ফুটবল দানব জার্মানির কাছে ফাইনাল ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ে আকষ্মিকভাবে ১-০ গোলে হেরে বুকভরা ব্যথা আর চোখ ভরা জল নিয়ে তাদের ঘরে ফিরতে হয়েছে।
আর্জেন্টিনার ভক্তকুলের অনেক স্বপ্ন ছিল ২২ বছরের শিরোপা জয়ের খরা খাটিয়ে এবার তারা কোপা আমেরিকার শিরোপা ঘরে তুলবে। চিলির দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সেই স্বপ্ন মরীচিকাই হয়ে থাকলো তাদের।
যে মেসিকে নিয়ে এতো আশা-প্রত্যাশা সেই তারকাও গোটা ম্যাচে কোনো দ্যুতি ছড়াতে পারেননি। যেমনটি পারেননি ২০০৬ এবং ২০১০ সালের বিশ্বকাপে।
২০১৪ সালের বিশ্বকাপে বেশ ঝলকানি দিয়ে তার দেশকে ফাইনালে নিয়ে গেলেও লক্ষ-কোটি ভক্ত-সমর্থকদের চূড়ান্ত প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। জার্মানির বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে তিনি অনেকটাই ছিলেন নিষ্প্রভ।
ক্লাব পর্যায়ের খেলায় যে তারকার দাপটে প্রতিপক্ষের সব কুটকাট হয়। তিনিই আবার নিজ দেশের পক্ষ হয়ে নামলে খেই হারিয়ে ফেলেন।
‘আর্জেন্টিনার হয়ে মাঠে নামলে মেসির সঙ্গে ভাগ্যটা কেমন জানি প্রতারণা করে। ’ এমন মন্তব্য ফুটবল ভক্ত অসংখ্য বাঙালির।
রাজধানীর শিয়া মসজিদ এলাকায় শনিবার (৪ জুলাই) দিনগত রাত ২টায় খেলা দেখতে বসেন ব্যাচেলর একটি ফ্ল্যাটের ৮/১০ জন ফুটবল ভক্ত।
যারা বেশির ভাগই আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের সমর্থক। চিলির বিরুদ্ধে মেসির প্রাণহীন খেলা দেখে খোদ আর্জেন্টিনার সমর্থক এবং মেসির ভক্ত মুসফেক উজ্জ্বল, মেহের আমীন এবং রাসেল আফসোস করে বলে উঠেন, ‘মেসিকে দিয়ে কাজ হবে না। মেসি আর্জেন্টিনার জন্য নয়। মেসির জন্মই হয়েছে বার্সার জন্য। ’
কোপা আমেরিকার ফাইনাল ম্যাচে চিলির বিপক্ষে টাইব্রেকারে ৪-১ গোলে হেরে যদি এইটুকু সান্ত্বনা নিয়ে মেসি ভক্তদের ক্ষান্তি দিতে হয়। তবে বিষয়টি নিরব বিষাদের। স্মৃতি হাতড়ে দেখা যায়, দেশের হয়ে প্রায় সব খেলায় মেসির ব্যর্থতার বাতিই জ্বলজ্বল করে। সে জন্যই বুঝি এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে-‘মেসি শধুই বার্সার!’
মেসির ফুটবল ক্যারিয়ারের অতীত বিশ্লেষণ করলে ভক্তদের মন্তব্য আরও বেশি যোক্তিক মনে হয়। ২০০৪ সাল থেকে তিনি খেলছেন স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনায়। পরের বছর থেকে খেলছেন আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে।
বার্সেলোনার হয়ে পরিসংখ্যান ঘাটলে যতোখানি উচ্ছ্বসিত হতে হয়। ঠিক ততোখানিই হতাশায় মুষড়ে পড়তে হয় আর্জেন্টিনার হয়ে হিসাবের খাতা খুললে।
এক দশকে বার্সেলোনার হয়ে দলের এবং নিজের ব্যক্তিগত যে সাফল্য। সেটি ঘাঁটলে যে কোনো ফুটবলারই ঈর্ষায় কাতর হবেন।
পরিসংখ্যান বলছে, বার্সেলোনার হয়ে ৪৮২ ম্যাচ খেলেছেন লিওনেল মেসি। গোল করেছেন ৪১২টি। দলকে জিতিয়েছেন ৭টি লা লিগা শিরোপা, ৩টি কোপা দেল রে, ৬টি স্প্যানিশ সুপার কাপ, ৪টি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ২টি উয়েফা সুপার কাপ এবং ২টি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ।
ব্যক্তিগত সঞ্চয়ে জমা হয়েছে হ্যাটট্রিকসহ ৪টি ব্যালন ডি’র, ১টি ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার, ৩টি ওয়ার্ল্ড সকার প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার, ৩টি ইউরোপিয়ান গোল্ডেন সু, একটি উয়েফা বেস্ট প্লেয়ার ইন ইউরোপ অ্যাওয়ার্ড, ৪টি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টপ গোলস্কোরার, টানা ৫টি এলএফপি বেস্ট প্লেয়ার, হ্যাটট্রিক লা লিগা ফরেইন প্লেয়ার অব দ্য ইয়ারসহ ইউরোপিয়ান ও স্প্যানিশ ক্রীড়াজগতের অসংখ্য পদক ও সম্মাননা।
বার্সেলোনার হয়ে মেসি দলীয় ও ব্যক্তিগতভাবে প্রাণবন্ত হলেও আর্জেন্টিনার হয়ে নিরস। এমন কেন হয়? এ প্রশ্নের উপযুক্ত উত্তর কি দিতে পারবেন মেসি?
মেসির জাতীয় দলের পরিসংখ্যান বলছে, আর্জেন্টিনার হয়ে ম্যাচ খেলেছেন ১০২টি। আর গোল? ৪৬টি! ক্লাবে প্রায় প্রতি ম্যাচ হিসেবে তার গোল থাকলেও জাতীয় দলে দু’টি করে ম্যাচেও মেসির একটি গোল থাকছে না। এ ভারসম্যহীন পারফরম্যান্সে ফুটবলের ‘ক্ষুদে জাদুকর’ আর্জেন্টিনা দলকে স্বভাবতই উল্লেখযোগ্য কোনো শিরোপা উপহার দিতে পারেননি।
সান্ত্বনার পুরস্কার বলতে গেলে অলিম্পিকের শিরোপাটাই। আর্জেন্টিনার হয়ে খেলার প্রাপ্তি তার অলিম্পিকের গোল্ড মেডেল আর গত বিশ্বকাপের গোল্ডেন বলটাই।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৫
টিআই