ঢাকা: ২০০৬ ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের আসর বসেছিল জার্মানিতে। গ্রুপপর্ব থেকেই ফ্রান্সের তুরুপের তাস জিনেদিন জিদানের উপর ভাগ্যদেবী সহায় ছিলেন না।
আজ সেই ৯ জুলাই। এদিন ফাইনাল ম্যাচে জিদানের 'ঢুস' বিতর্কেই ফরাসিদের ২০০৬ বিশ্বকাপ হাতছাড়া হয়ে যায়। সেই ঢুস নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে তাদের এই ঢুস নিয়ে। হয়েছে দুই দেশের সমর্থকদের মধ্যে নানা বিতর্ক। শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক ইস্যুতেও পরিণত হয় বিষয়টি।
২০০৬ ফুটবল বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ের দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে এক কোরিয়ান ডিফেন্ডারকে ধাক্কা দেওয়ার অপরাধে জিদান হলুদ কার্ড দেখেন। এরপর দুই ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখে জিদান গ্রুপের তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচে অংশ নিতে পারেননি। তবে, জিদানকে ছাড়াই গ্রুপ পর্বের তৃতীয় ম্যাচে ফ্রান্স টোগোর বিপক্ষে ২-০ গোলে জয়ী হয়। যার ফলে নকআউট পর্বে উত্তীর্ণ হয় ফরাসিরা।
নকআউট পর্বে জিদান স্পেনের বিপক্ষে আবারো মাঠে নামেন। ফ্রান্স ৩-১ গোলে স্পেনকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যায়। আর কোয়ার্টার ফাইনালে তারা ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে উঠে যায় সেমিফাইনালে।
সেমিতেও জয়রথ অব্যাহত ছিল ফরাসিদের। পর্তুগালকে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করে জিনেদিন জিদানরা। পেনাল্টি থেকে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন জিদান।
২০০৬ সালের আজকের এই দিনে (০৯ জুলাই) ফাইনালে মুখোমুখি হয় ফ্রান্স-ইতালি। এটি ছিল জিদানের দ্বিতীয় এবং শেষ বিশ্বকাপ। ম্যাচের সপ্তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে জিদানের গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স (১-০)। এরই সাথে পেলে, পল ব্রিটনার এবং ভাভার পরে মাত্র চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে দুটি বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করার বিরল সম্মান এবং রেকর্ড গড়েন তিনি।
কিন্তু খেলার ১১০ মিনিটের মাথায় ফরাসি মিডফিল্ডার মার্কো মাতেরাজ্জি জিদানকে বাজে ভাষায় আক্রমণ করেন। তাই রাগ সামলাতে না পেরে মাতেরাজ্জির বুকে নিজের মাথা দিয়ে ঢুস মারেন জিদান। এ অপরাধের কারণে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
‘ঢুস’ কাণ্ডের এ ম্যাচে অতিরিক্ত সময় পরেও ফলাফল ১-১ থেকে যায়। ফলে পেনাল্টি শুটআউট অনুষ্ঠিত হয়। তবে লাল কার্ড দেখে আগেই মাঠ ছাড়ার কারণে জিদান এ পর্বে অংশ নিতে পারেননি। টাইব্রেকারে ইতালি ৫-৩ গোলে ফ্রান্সকে পরাজিত করে ২০০৬ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
ফাইনালে লাল কার্ডসহ নানা সমালোচনার পরেও জিদানই ২০০৬ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল জিতে নেন। সেই সাথে তিনি জিতে নেন কোটি ফুটবল ভক্তদের মন।
বিশ্বকাপ ফাইনালের পর ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক জিদানকে জাতীয় বীর হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এমনকি আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আব্দেল আজিজ বুটেফ্লিকা একটি চিঠির মাধ্যমে জিদানের প্রতি তার সমর্থন ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, জিদানের পিতা-মাতা আলজেরিয় বংশোদ্ভূত।
বিখ্যাত ফরাসি পত্রিকা "লা ফিগারো" জিদানের ঢুস দেওয়ার ঘটনাটিকে "অমার্জনীয়" বলে আখ্যায়িত করে।
ফ্রান্স ভিত্তিক স্পোর্টস বিষয়ক দৈনিক পত্রিকা "লা ইকুইপে" এর প্রধান সম্পাদক জিদানকে 'মুহাম্মদ আলী' এর সাথে তুলনা করেন। তবে এতো সব সমালোচনা-আলোচনার পরেও জিদানের স্পন্সরগণ তার সাথে থাকার কথা ঘোষণা দেন।
পরবর্তীতে ফিফা ঘটনাটি তদন্তের স্বার্থে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে ফিফা মাতেরাজ্জির বিরুদ্ধে ৪,১১৭ ডলার ক্ষতিপূরণ ধার্য করে এবং দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অন্যদিকে জিদানকে ৬,১৭৬ ডলার জরিমানা এবং পরবর্তী তিন ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তবে বিশ্বকাপ ফাইনালের পরপরই অবসরে চলে যান দুই জনই। তাই তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে তিন দিন ফিফার পক্ষে স্বেচ্ছাসেবীমূলক কাজে অংশ নেন জিদান- মাতেরাজ্জি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, ০৯ জুলাই ২০১৫
ইয়া/এমআর