ঢাকা: দেশের তৃতীয় জনপ্রিয় খেলা হকি। ক্রিকেট ও ফুটবলের পরেই যে খেলা নিয়ে উন্মাদনা ছিল সবচেয়ে বেশি সেই খেলাটি এখন ধ্বংসের মুখে।
কিন্তু সম্ভবনাময় এই খেলাটি বর্তমানে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। ব্যাধির নাম- ‘ফেডারেশন বনাম ক্লাবের বিরোধ’। অতীতে অনেক ফেডারেশন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে নিঃশেষ হয়েছে।
ফেডারেশন ও ক্লাবের মধ্যকার বিরোধে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খেলোয়াড়রা। হকি খেলেই যারা জীবিকা নির্বাহ করেন তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। চলতি মৌসুম এখনও শুরু হয়নি। ঠিক কত দফা দলবদল পিছিয়েছে তা গুণতে একজনকে হয়তো নিয়োগই দিতে হবে।
হবে, হচ্ছে করে দীর্ঘদিন ধরে আটকে রয়েছে ক্লাবের দলবল। যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় সভা করেও সমস্যা সমাধানের কোনো পথ খুঁজে পাননি। হকির চলমান সংকট কাটাতে এবার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। তাদের তত্ত্বাবধানেই প্রিমিয়ার হকি লিগের আয়োজন হতে পারে- এমন আভাস পাওয়া গেছে। এটা হয়তো সম্ভব, তবে কোনোমতেই তা সমাধান নয়।
যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হকির সমস্যা ও সংকট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি। একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সংগঠকদের সাথে বৈঠক হয়েছে। আমরা চাচ্ছি একটা সমাধানে পৌঁছাতে। আশা করি খুব শিগগিরই বিষয়টির সমাধান হবে। ’
গত দুই মৌসুমে মর্যাদাপূর্ণ এই লিগে অংশ নেয়নি দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা মোহামেডান, মেরিনার ইয়াংস, বাংলাদেশ স্পোর্টিং এবং ওয়ারী ক্লাব। এই চার দলকে বাদ দিয়েই দায়সারা ভাবে লিগ শেষ করেছে হকি ফেডারেশন। দলগুলো এবারও অংশ নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। এবার তাদের সাথে ঊষাও জানিয়েছে এই দলগুলো না খেললে তারাও খেলবে না লিগে। চার ক্লাবের দাবি তারা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খাজা রহমতউল্লার অধীনে কোনো খেলায় অংশগ্রহণ করবে না। তারা নির্বাহী কমিটির সংস্কার চায়।
হকি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আব্দুর রসিদ সিকদার বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া লিগ অনুষ্ঠিত হলে বিষয়টি ইতিবাচক নয়। গতবারের মতো এবারও দায়সারা লিগ হলে হকির কি উন্নতি হবে! আর সবচেয়ে বড় বিষয় খেলোয়াড়দের কথাও তো আমাদের ভাবতে হবে। সব দল না খেললে খেলোয়াড়রা মূল্যায়িত হয় না। ফলে তারা পাপ্য আর্থিক পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। ’
ওদিকে আগের অবস্থানেই অনড় রয়েছে বিদ্রোহী চার ক্লাব। মোহামেডানের পরিচালক সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা এখনও আগের অবস্থানে অনড় আছি এবং থাকবো। হকি ফেডারেশনে বর্তমান কমিটিতে অনৈতিকভাবে কাউন্সিলর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যার ফলে আমরা নির্বাহী কমিটির সংস্কার চেয়েছি। এ বিষয়ে সুরাহা হওয়ার আগ পর্যন্ত বর্তমান কমিটির অধীনে সকল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকবো। ’
সর্বশেষ ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ফেডারেশন। সেখানে নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ সদস্যই জোরালোভাবে রহমতউল্লাহকে সংকট নিরসনের দাবি জানান। এমনকি সংকট সমাধানে ব্যর্থ হলে নির্বাহী কমিটির একটি অংশ পদত্যাগের হুমকিও দিয়েছে অনুষ্ঠানেই। সদস্যদের এমন দাবির মুখে আরও সময় চেয়েছেন খাজা রহমতউল্লাহ।
তবে এখানেই শেষ নয়। লিগ নেই মানে দুই পয়সার মূল্যও নেই খেলোয়াড়দের। তারা অনেকেই ঢাকাতে নেই। আছেন গ্রামের বাড়িতে। আর এভাবে চলতে থাকলে অন্য পেশা বেছে নিতে হবে জানালেন অনেক খেলোয়াড়। হকি খেলে আর জীবন ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান তারা। এরমধ্যে ঈদের মতো গুরুত্বপূর্ণ উৎসব খালি পকেটেই কেটেছে তাদের।
জাতীয় দলের অধিনায়ক কৃষ্ণ কুমার রাজশাহী থেকে মুঠোফোনে জানালেন, ‘কেউ খবর রাখে না। একটা ঈদ গেল কেউ খোঁজ নিল না। মনে হচ্ছে হকি খেলে পাপ করেছি। এভাবে বসে থাকতে থাকতে খেলাই ভুলে যাচ্ছি। ’
আর সাবেক হকি খেলোয়াড় প্রতাপ শংকর হাজরাও অবাক বিষয়গুলো দেখে। ‘হকি চলবে তার নিজের গতিতে। আমার অনেক বয়স হয়েছে, হয়তো মারা যাবো। কিন্তু কষ্ট লাগছে এ অবস্থা দেখে। সবচেয়ে বাজে বিষয় এনএসসি (জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ) লিগ চালাবে তারা! বিষয়টি খোদ ক্রীড়া উপমন্ত্রী সমাধানে ব্যর্থ হয়েছেন। বুঝতে পারছি একজন ডাক্তার দরকার হকিতে। সহকারী দিয়ে হবে না। ’
তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে হকি খেলোয়াড় পাওয়া যাবে না। তখন লিগে খেলবে কারা?’
বর্তমান হকি ফেডারেশনের কমিটির মেয়াদ রয়েছে ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই পর্যন্ত। যদি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খাজা রহমতউল্লহ ক্লাবগুলোর দাবির মুখে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পদত্যাগ না করেন। বা ক্লাবগুলো তাদের অবস্থান থেকে সরে না আসে তাহলে সত্যি একসময় দেশের তৃতীয় জনপ্রিয় এ খেলাটিকে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৫
ইয়া/