ঢাকা: শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও শান্ত স্বভাবের মানুষ হিসেবে বেশ সুখ্যাতি রয়েছে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসির। প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে ফুটবল পায়ে যতই ভয়ঙ্কর হন না কেন, বাজে পরিস্থিতিতেও নিজেকে শান্ত রাখেন তিনি।
ফুটবল মাঠে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে কামড়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকবার। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে গলা ধাক্কা দিয়ে লাল কার্ড দেখার ঘটনাও কম নয়। ড্রেসিংরুমে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে ঘুসি মেরে নাক ফাটিয়ে দেওয়ারও ঘটনা দেখেছে ফুটবল বিশ্ব।
এমন নিন্দনীয় ঘটনার জন্ম না দিলেও বার্সেলোনার সুপারস্টার মেসিও অনেক সময় মেজাজ হারিয়ে বাজে ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। এরকম কয়েকটি ঘটনার বিবরণ দেওয়া হলোঃ
১। মেসি-এমবিওয়াঃ প্রাক-মৌসুমে ঘরের মাঠ ন্যু-ক্যাম্পে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৫০তম ট্রোফেও জন গাম্পার কাপে খেলতে নামে বার্সা। ইতালিয়ান জায়ান্ট রোমার বিপক্ষে এ ম্যাচের ৩৪ মিনিটের মাথায় মেজাজ হারিয়ে বিপক্ষের ডিফেন্ডারকে গুঁতো মারেন মেসি। শুধু গুঁতো মেরেই থামেননি তিনি, গলা চেপে ধরেন রোমার ডি বক্সের কাছে প্রতিপক্ষ ফুটবলার ইয়াঙ্গা-এমবিওয়ার। নেইমারের সঙ্গে ওয়ান-টু ওয়ান পাস খেলে রোমার ডি-বক্সের ভেতর ঢুকেন মেসি। কিন্তু রেফারি অফসাইটের বাঁশি বাজালেও মেসি না থেমে বল নিয়ে এগুতে থাকেন। এ সময় এমবিওয়া মেসিকে কিছু বললে তাদের মাঝে তর্ক বাধে। সেখান থেকেই এমন বাজে ঘটনার সৃষ্টি হয়।
২। মেসি-দারিজো স্রোনাঃ ২০০৯ সালের উয়েফা সুপার কাপে পেপ গার্দিওলার অধীনে খেলতে নামে বার্সা। সে সময় ইউক্রেনের চ্যাম্পিয়ন শাখতার দোনেস্কের বিপক্ষে একটি ম্যাচে মোনাকোতে মাঠে নামে কাতালানরা। ম্যাচের এক পর্যায়ে অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক হয়ে খেলতে থাকা শাখতারের রাইট-ব্যাক দারিজো স্রোনার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান মেসি। মেজাজ হারিয়ে মাথা দিয়ে গুঁতো মারেন ক্রোয়েশিয়ান দারিজো স্রোনাকে। এ সময় রেফারি আর্জেন্টাইন তারকাকে হলুদ কার্ড দেখান। সে ম্যাচে মেসির অ্যাসিস্ট থেকে ১১৫ মিনিটের মাথায় গোল করেন পেদ্রো। ফলে, নিশ্চিত পেনাল্টি শুটআউটের হাত থেকে দল বেঁচে যায়।
৩। মেসি-দুঙ্গাঃ ২০০৮ সালে মেসির যখন ২১ বছর, তখনই তাকে তুলনা করা হতো স্যামুয়েল ইতো, থিয়েরো অঁরি, জেকোদের সঙ্গে। মালাগার বিপক্ষে একটি ম্যাচে সে সময়ের উঠতি তারকা মেসি প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার দুঙ্গার সঙ্গে বিবাদে জড়ান। ম্যাচের এক পর্যায়ে মেসি দুঙ্গাকে ধাক্কা দেন। দুঙ্গা কিছু একটা বললে বার্সা তারকা তাকে থুথু ছিটিয়ে দেন। সে ম্যাচে বার্সা ৪-১ গোলে জিতলেও কোনো গোলের দেখা পাননি মেসি। পরে এ ঘটনার তদন্ত করে স্প্যানিশ ফুটবলের অফিসিয়ালরা। কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন মেসি। তৎকালীন বার্সার কোচ পেপ গার্দিওলা সে সময় বলেছিলেন, আমরা মেসির এ ধরণের ব্যবহারে ক্ষমা চাচ্ছি। ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য আমরা চেষ্টা করব।
৪। মেসি-ওয়েলিংটনঃ আরও একটি বার্সা-মালাগার ম্যাচ। ২০১৪-১৫ মৌসুমে লা লিগা জয়ী কাতালানরা রাউন্ড পর্বের ম্যাচে মালাগার বিপক্ষে মাঠে নামে। রিয়াল মাদ্রিদকে টপকে টেবিলের শীর্ষে উঠতে বার্সার পূর্ণ তিন পয়েন্ট দরকার ছিল সে ম্যাচে। ম্যাচ চলাকালীন সময়ে মালাগার ওয়েলিংটনের সঙ্গে বিবাদে জড়ান মেসি। সেখানে বার্সা তারকাকেই গলা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন ওয়েলিংটন। ম্যাচ শেষে মালাগার ফুটবলার জানান, মেসি ওয়ান-টু-ওয়ান খেলে গোল করতে এলে আমি তাকে বাধা দেই। এ সময় সে আমাকে ‘কুত্তার বাচ্চা’ বলে গালি দিলে আমি তাকে মাটিতে ফেলে দেই।
৫। মেসি-জোনাথন ভিয়াঃ ২০১২ সালের ঘটনা। প্রথম সন্তান থিয়েগো মেসির জন্মের পর সেল্টাভিগোর বিপক্ষে লা লিগার ম্যাচে মাঠে নামেন বার্সার মূল স্ট্রাইকার মেসি। সে সময় ৭ ম্যাচে ১০ গোল ঝুলিতে ভরে ফেলেছেন তিনি। তবে, ঘরের মাঠ ক্যাম্প ন্যু’তে গোলের দেখা মিলছিল না সে ম্যাচে। এক পর্যায়ে গোলের জন্য বল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথে সেল্টাভিগোর ডিফেন্ডার জোনাথন ভিয়া মেসিকে বাধা দেন। মেজাজ হারিয়ে আর্জেন্টাইন তারকা ভিয়াকে ঘাড়ে ঘুসি মারেন। রেফারির নজরে না আসায় সে যাত্রায় বেঁচে যান মেসি। সে ম্যাচটিতেও জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে কাতালানরা।
বাজে এসব ঘটনার জন্ম দিলেও বিশ্ব ফুটবলের বর্তমান সেরা মেসিকে ভদ্র আর শান্ত ফুটবলার হিসেবেই চেনেন সবাই। ২০০৫ সালে নিজের আন্তর্জাতিক অভিষেক ম্যাচে শেষবার লাল কার্ড দেখা মেসিকে ক্যারিয়ারে আর কখনো লাল কার্ড দেখতে হয়নি। অভিষেক ম্যাচে মাত্র ১৮ বছর বয়সে দেশের জার্সি গায়ে হাঙ্গেরির বিপক্ষে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে ম্যাচের ৬৩ মিনিটে মাঠে নামেন মেসি। ৪৪ সেকেন্ড পরেই লাল কার্ড দেখে তাকে মাঠ ছাড়তে হয়। সেটিই মেসির প্রথম ও শেষ লাল কার্ড দেখা!
মেসি-এমবিওয়ার ভিডিও:
মেসি-ওয়েলিংটনের ভিডিও:
মেসি-দুঙ্গার ভিডিও:
মেসি-জোনাথন ভিয়ার ভিডিও:
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, ১৫ আগস্ট ২০১৫
এমআর