ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

অস্ট্রেলিয়ায় আচরণেও দেশকে ডুবিয়েছেন ফুটবলাররা!

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৫
অস্ট্রেলিয়ায় আচরণেও দেশকে ডুবিয়েছেন ফুটবলাররা! (ফাইল ফটো)

ঢাকা: বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে বলে ক্রিকেট-ফুটবল নিয়ে এদেশের মানুষের গর্ব-উচ্ছ্বাসের সীমা নেই। এই খেলার মাঠ নিয়েই থাকে না কোনো বিভেদ-বিভাজন।

উপরন্তু এই মাঠ ঘিরেই একসঙ্গে স্বপ্ন দেখা হয়। রাজনৈতিক বিভাজিত জাতিকে এক কাতারে নিয়ে আসায় ক্রিকেটার-ফুটবলারদের চোখের মণি, মাথার তাজ করে রাখেন ক্রীড়াপাগল মানুষ। ক্রিকেটার-ফুটবলারদের হারে দুঃখে ভাসেন, তাদের জয়ে উল্লাসে মাতেন তারা। খেলোয়াড়দের হারকেই নিজেদের হার মানেন, তাদের জয়কেই নিজেদের জয় মানেন।

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপের এশিয়া অঞ্চলের বাছাইপর্বে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে খেলে আসে বাংলাদেশ। ম্যাচে অজিদের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হার মানতে হয় বাংলাদেশ দলকে। এই হার নিয়ে কোনো কথা থাকবার কথা নয়, কথা হয়ওনি। বরং অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পাওয়াটাকেই বড় করে দেখেছেন ফুটবলপ্রেমীরা।

কিন্তু কথা হয়েছে অন্য বিষয়ে। মাঠের ‘বাইরের’ বিষয়ে। কেবল কথাই হয়নি, লজ্জাজনক কিছু অভিযোগও উঠেছে। ‘গর্বের ধন’ ফুটবলারদের আচরণে পুরো বাংলাদেশিদের ‘আচরণজ্ঞান’ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আরও স্পষ্ট করলে, টিম হোটেলে ফুটবলারদের কাণ্ডজ্ঞানহীনতায় সেখানকার অন্য অতিথিদেরই বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

বাংলানিউজের কাছে অভিমান-ক্ষোভমিশ্রিত এসব অভিযোগ করেছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক বাংলাদেশিই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাংলাদেশি পার্থে থাকেন। সফরে বাংলাদেশ দল যে হোটেলে উঠেছিল, সেখানেই কাজ করেন তিনি। অফিস সেকশনে কাজ করার সুবাদে তিনি দেখেছেন স্বদেশের ফুটবলারদের আচরণ, কাণ্ডজ্ঞান। আর শুনেছেন এ কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে ভিনদেশি অতিথিদের প্রশ্ন ও ক্ষোভের কথা।

ওই বাংলাদেশি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশি ফুটবলারদের ‍আচরণে একসময় ক্ষুব্ধ হয়ে তার হোটেলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ও জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপকরাও কথা শোনাতে থাকেন তাকে। তারা জানতে চান, ফুটবলাররা যে আচরণ করছে, অন্য অতিথিদের যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলছে, পুরো বাংলাদেশের মানুষই এমন আচরণ করে কিনা, অন্যদের এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে কিনা।

ওই প্রবাসী বলেন, হোটেলের ভিনদেশি নারী অতিথিদের দিকে অশোভনীয় দৃষ্টিতে তাকানো, ছোট লবিতে অনেক জোরে-শোরে হাসি-তামাশা করে কথা বলে অন্যদের বিরক্ত করা, হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে অন্যদের যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটানো, অননুমোদিত স্থানে ধূমপান করা, অভ্যর্থনা কক্ষে কিউ না মেনে অন্যদের আগে যাওয়া এবং চার/পাঁচজন একসঙ্গে কথা বলতে থাকা, দুপুর ২টার সময় রেস্টুরেন্টে গিয়ে সকালের নাস্তা চাওয়া, খাবারের সময় নির্দিষ্ট করে জানানো সত্ত্বেও নিজেদের ইচ্ছেমতো রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার চাওয়া এবং চাহিদা অনুযায়ী খাবার নতুন করে রান্না করতে বাধ্য করার মতো কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ আমাকেই প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফুটবলারদের এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ আমাদের বাংলাদেশিদের কী হিসেবে উপস্থাপন করছে বিশ্বদরবারে? সে জবাব আমি আমার হোটেলের জিএমকেও দিতে পারিনি।

ওই প্রবাসী বলেন, তারা ভালো খেলতে না পারলেও দেশকে ডোবাতে যা করেছেন, তাতে একটি প্রশ্ন মাথায় না এসে পারছে না। এতো টাকা খরচ করে আমরা যদি একজন খেলা শেখানোর কোচ রাখতে পারি, তবে কেন আচরণ শেখানোর জন্য এবং দেশের প্রতিনিধিত্ব করা শেখানোর একজন কোচ রাখতে অর্থ খরচ করতে পারবো না?

ওই বাংলাদেশি ফুটবলারদের ওপর এমন ক্ষোভ-অভিমান ঝাড়লেও সতর্ক হবার বার্তা দিতে বলেন ক্রিকেটারদের। তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে গর্বের এখন ক্রিকেটটাই। আমি চাইবো ক্রিকেটাররা তাদের ভদ্রতা ও বিনয় দিয়ে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করবেন। আমি এখনও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাইনি। কিন্তু মনে করি, কীভাবে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে হয়, তা তারা উপলব্ধি করে। এটা অনেক বড় দায়িত্ব।

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ওই বাংলাদেশি বলেন, গত ক্রিকেট বিশ্বকাপে সুজন ভাই (খালেদ মাহমুদ সুজন) কী করেছেন তা আমি খবরে পড়েছি। তবু আমি আশা করি, কেবল আচরণ ও বিনয়ের দিক থেকে তারা দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৫
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।